আগামী ১৫ মার্চ তৃতীয় ধাপের ৮৩ উপজেলায় নির্বাচনে প্রভাবশালী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের হাজারো অভিযোগ আসছে নির্বাচন কমিশনে। এমনকি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠ প্রশাসন কাজ করছে বলে কমিশনে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিদেশে সফরে থাকায় এসব অভিযোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ইসি। প্রতিদিন শত শত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ইসিতে এলেও তা ফাইলবন্দীই থেকে যাচ্ছে। কোনো অভিযোগই আমলে নেওয়া হচ্ছে না।
তবে কমিশন বলছে, ভোটগ্রহণের দিন গোলযোগ হলে প্রয়োজনে ভোট বন্ধ করা হবে।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের শঙ্কা প্রকাশ করে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসছে। অভিযোগগুলো ফাইলেও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সিইসি দেশে না থাকায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে কিনা জানা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন, হামলা-ভাঙচুর-কেন্দ্র দখলের আশঙ্কায় অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না প্রার্থীদের।
অভিযোগ এলেও রহস্যজনক কারণে তা ফাইলবন্দী করে রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচন রেখে সোমবার সস্ত্রীক দেড় মাসব্যাপী ব্যক্তিগত সফরে আমেরিকা গেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ইসির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, কোনো অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না ইসি। অনেকটা গা-ছাড়া ভাব।
এত সহিংস ঘটনার মধ্যে নির্বাচনের সব দায়িত্ব এড়িয়ে সিইসির এভাবে সফরে যাওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়। এর ফলে আরও সহিংস ঘটনা ঘটানোর সুযোগ পাবেন প্রভাবশালীরা।
হাজারো অভিযোগ ইসিতে : বৃহস্পতিবার ইসিতে শতাধিক অভিযোগ এসেছে। শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্র্থী এ কে এম ইসমাইল হক তার অভিযোগপত্রে লিখেছেন- প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন খান তার নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। এমনকি সন্ত্রাসী দিয়ে কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছেন।
আনোয়ার হোসেন সভা-সমাবেশে ভোটারদের মধ্যে মিষ্টি, নগদ টাকা ও খিচুরি বিতরণ করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি নিষিদ্ধ দলের লোকদের হাত করে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করারও পরিকল্পনা করছেন। এ ব্যাপারে তিনি কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বাগেরহাটের মংলা উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোল্লা আবদুল জালিল অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তাহের হালদার তার নির্বাচনী কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন এবং তার কর্মীদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন এবং কমিশনের সহায়তা চেয়েছেন।
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একরামুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বেশ কিছু অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া চিঠিতে উপজেলার গাড়ি, রঙিন পোস্টার ও কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়া তফসিলের পর সাত দিনে প্রায় ৬০টি রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্টের উদ্বোধনের সচিত্র বর্ণনা দিয়েছেন। ভোলার মনপুরা উপজেলার বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সামসুদ্দিন চৌধুরী-বাচ্চু লিখেছেন, উপজেলায় সব কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারি দলের লোকজন সন্ত্রাসীদের দিয়ে মহড়া দিচ্ছে। তিনি সেনাবাহিনীসহ অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের দাবি করেন।
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মফিজুল হক রবিবার পুনঃনির্বাচনের আবেদন করেছেন। তিনি ভোট কারচুপি ও প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ করেছেন। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মোরশেদ আলমও এ রকম আবেদন করেছেন। ৮৩ উপজেলা থেকেই প্রতিদিন ইসিতে নানা বিষয়ে অভিযোগ আসছে। তবে এখন পর্যন্ত কমিশন কোনো অভিযোগ আমলে নিয়েছে বলে জানা জায়নি।
তবে নির্বাচন কমিশনার মো. আবু হাফিজ বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে না কথাটি সঠিক নয়।
গোলমাল হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ : নির্বাচনে কোনো ধরনের গোলমাল হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। বৃহস্পতিবার ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা, ডিসি ও এসপিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কোনো রকম গোলমাল হলেই ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, সিইসির অনুপস্থিতি চলমান উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তিনি প্রয়োজনেই বিদেশ গেছেন। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে কিছু সহিংসতা হলেও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কোনো ধরনের সহিংসতার সুযোগ নেই। "
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।