আমি একজন ই-পীর আজকের দৈনিক আপডেটেড খবর জানাবার কাজটা বেশ ফুর্তির সাথেই করবো। আশাকরি পাঠকেরাও ফুর্তি নিয়েই পড়বেন। যে যাই বলুন, আজকে এমন কিছুই হয় নি যে মুখ গোমড়া করে রাখবো, তাই না? বরং আজকে মাথা আরো উঁচু করে রাখবো নির্দলীয় গণমঞ্চের সবাই এবং তাদের শুভকামনাকারীরা - আজকে আমরা দেখিয়েছি মাটি কামড়ে পড়ে থাকা কাকে বলে। দুপুর আর বিকেলের আপডেট গুলি পাবেন নীচের দুটি লিংক এ
জাতীয় সংগীত দিয়ে খুলনা নির্দলীয় গণমঞ্চের সান্ধ্যকালীন অধিবেশন শুরু, আমরা সতর্ক জামাত-শিবিরের নবম থেকে শুরু করে বাকি হামলাগুলো ঠেকাতে
নির্দলীয় গণমঞ্চ খুলনা শিববাড়ী চত্তর বাঙালীদের দখলেই আছে
শুরুতে গত কালকের একটা খবর, তাও যশোরের।
গতকাল জামাত-শিবিরের নেতা কর্মীরা যশোরের বেশ ভেতরের দিকের এলাকা মনিরামপুরের কয়েকটি কওমী মাদ্রাসা থেকে ছাত্রদের এনেছিলো দুটো বাসে করে - উদ্দেশ্য নাস্তিক-মালাউন-কাফের মারতে গিয়ে শহীদ বা গাজী হওয়া।
যাই হোক, তারা মোট হাফ মাইল মার্চ করে শ্লোগান দিয়ে হেঁদিয়ে পড়লো - এইসময় দুটো বাস নিয়ে ঢুকলো সাদা পোশাকের পুলিশ। এসেই ডাক, "ও ভাই মনিরামপুর থেকে কে কে আইসেন বাসে উডেন" - দলে দলে তারা চাপলো বাসে। আর বেরসিক সাদা পোশাকের পুলিশ সেই বাস নিয়ে থামালো সোজা থানার ভেতরে জামাত-শিবির কি কৌশলে ওদের মাঠে নামায় দেখুন খবেরই ‘ব্লগ-ইন্টারনেট বুঝি না, হুজুরের ডাকে যাচ্ছি’
এবারে আমাদের আজকের খবরগুলো বলি, ফেসবুকে যারা আমাদের খবর জানবার জন্যে নজর রেখেছিলেন, তাদের প্রথম কয়েক ঘন্টা হতাশ করেছি। তবে কিছুই করার নেই, এখানে যারা গাইছে আর কবিতা পড়ছে তাদেরও পথে নামতে হয়, যারা আপডেট দিচ্ছে তাদেরও মাঠে নামতে হয় - লোকস্বল্পতা যে!
যাই হোক, প্রথম আক্রমনটা যখন আসছে তখন শ্লোগানে আগুন ছুঁড়ছে একটা নাম না জানা ছেলে - "নেংটি নেংটি রাজাকার, দলে দলে বাংলা ছাড়", "রাজাকারের তালিকা- দেখতে দাও দিতে হবে", "তালিকা কেনো গোপনে? ফাঁসি হবে ময়দানে", "সব দলের রাজাকার ফাঁসি নিয়ে বাংলা ছাড়" - এইসব।
হঠাৎ দেখি দৌড়ে আসছে কিছউ হিংশ্র মানুষরুপী হায়েনা শিবির আর জামাতের পাল - তখন দেখলাম দুনিয়ার কিছু অবিশ্বাস্য দৃশ্য!
মেয়েগুলো এক পাশে ফ্যাঁকাশে মুখে বসে ছিলো, খুব বেশী হলে কলেজে পড়ে - এক লাফে উঠে কোমর বাঁধলো।
দুই মুরুব্বী, বয়স ষাটের ওপরে - হাতে চ্যালা কাঠ - "মুনাফেকের বাচ্চারা বায়তুল মোকাররমে আগুন দিছে" - বলে দৌড়ে এলেন, পরে শুনেছিলাম ভাত খেতে বসে শোরগোল শুনে ছুটে এসেছেন।
শহরে থাকা পর্যবেক্ষকদের একজন ফোনে জানালো, ওনার দায়িত্বে পড়া এরিয়ায় ঘরের মা-বৌ-বোনেরা ছাদ থেকে গরমপানি ঢেলে একটা মিছিল রুখে দিয়েছেন। জনতাও ঠেঙিয়েছে কিছু।
প্রথমটার পরে এবারে এলো আরেকদিক থেকে, সেখানে পুলিশ যেতে দেরী হয়েছিলো খানিক - পাবলিকের ধোলাই কাকে বলে সেটা টের পেলো জামাত-শিবিরের শুয়োরেরা। কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে পুলিশ এক অর্থে ওদের প্রান বাঁচিয়েছে - আর মিনিট খানেক দেরী হলে বাঁচতো না।
এর পর দফায় দফায় মোট আক্রমন ৮ টা। প্রত্যেকটাই ঠেকানো হয়েছে। শুয়োর প্রতিহত করতে যারা একের পর এক দিকে ছুটে বেড়িয়েছে তাদের শ্লোগানে উজ্জীবিত করেছে যাদের ওপর দায়িত্ব ছিলো কোনো মটেই মঞ্চ না ছাড়বার তারা। হ্যাঁ, একটা ছোট্টো দলকে দায়িত্ব দেওয়া ছিলো, যাই ঘটুক, প্রান থাকতে মঞ্চ বেদখল করা যাবে না। আর শপথ নেওয়া ছিলো গতরাতের অধিবেশনেই - "মরবো তবে কম সে কম একটাকে সাথে নিয়ে"।
আজ উপস্থিত জনতাও একই শপথ করেছিলো।
দিকে দিকে জামাত-শিবিরের তান্ডব - আমাদের জাতীয় পতাকা ছেঁড়া - শহীদ মিনার ভাঙা - জাগরন চত্তরে ভাংচুর আর আগুন - এসব খবর রক্ত আগুনের মাত্র বাড়াচ্ছিলো প্রত্যেকেরই।
এর মাঝে খবর পেলাম, ইন্ডিপেনডেন্ট চ্যানেল ভুয়া খবর দিয়েছে। সাংবাদিককে ফোন করেছিলাম - নম্বর বন্ধ।
সন্ধেয় দেখলাম দর্শকের জমায়েত আজ অনেক বাড়তি।
শুরু হলো অধিবেশন, নিয়মিত ভাবেই - জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে।
এর পরে শুরু হলো গান
"গ্রাম নগর মাঠ পাথার বন্দরে তৈরি হও!
কার ঘরে জ্বলেনি দীপ চির আঁধার তৈরি হও!
কার বাছার জোটেনি দুধ শুকনো মুখ তৈরি হও
ঘরে ঘরে ডাক পাঠাই তৈরি হও জোট বাঁধো
মাঠে কিষান কলে মজুর নওজোয়ান জোট বাঁধো"
"জনতার সংগ্রাম চলবেই!"
"হেই সামাল ধান হো কাস্তে টা দাও শান হো,
জান কবুল আর মান কবুল,
আর দেবনা আর দেবনা রক্তে বোনা ধান মোদের প্রান হো"
"ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়
ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমাদেরই হাতে পায়"
"দুর্গম গিরী কান্তার মরু"
"চল চল চল"
"পূর্ব দিগন্তে সূর্য্য উঠেছে"
জনগন কোরাস ধরেছিলো সবগুলোতেই।
এরপর সিনেমা, তবে সিনেমার আগে আজকের বিশেষ আকর্ষন ছিলো - গোলাম আজমের নিজের মুখের স্বীকারোক্তি - জামাত পাকিস্তানি দল, এখনো তাদের হেড কোয়ার্টার লাহোরে, সাথে যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে কয়েকটি ক্লিপ। এরপর চলচ্চিত্র "চিত্রা নদীর পারে"।
আমরা আজকে একটু বেশী সতর্ক ছিলাম, আপডেট দেওয়ার সাথে সাথে পালা করে পাহারা দিতে হচ্ছিলো দর্শকেরা যাতে জামাত-শিবিরের কোনো ঝটিকা আক্রমন হলে আক্রান্ত না হন সে দিকে।
দুজন সন্দেহভাজন লোককে ডেকে কথা বলা শুরু করতেই আমতা আমতা করে কেটে পড়লো - হাতে পেটমোটা ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে এসেছিলেন ওরা।
সদাগম্ভীর বলে যে শিক্ষিকাকে খুব ভয় পায় আমাদের এক বোন, সামনে এলে ভয়ে মুখে কথা সরে না, সেই মেয়েটা খুব অবাক হলো, যখন সেই শিক্ষিকা এসে গালে হাত দিয়ে আদর করে বললনে, "তাড়াতাড়ি চলে যেও, একা যেও না"। আমি দেখলাম, ভদ্রমহিলার হাতে শক্ত অথচ সাবলীল ভাবে ধরা একটা চ্যালা কাঠ!
এক লোককে দেখলাম ভিডিও করছে তবে ঝুলন্ত কোনো প্রেস কার্ড নেই। ডাক দিয়ে জানা গেলো ইন্ডিপেন্ডেন্টের। কার্ড দেখতে চাইলাম, বলে নেই।
জানতে চাইলাম "আপনি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাংবাদিক?" পাল্টা জবাব দিলো, "আমি কি বলেছি আমি ইন্ডিপেন্ডেন্টের সাংবাদিক?" তখন জনাবকে একটু পাশে নিয়ে বললাম, "কোনো কার্ড আছে?" সে একটা নর্মাল প্রিন্টারে সাধারন কাগজে প্রিন্ট করা লেমিনেটেড কার্ড দেখালো, একটা স্টুডিওর। ঐ স্টুডিও আমি চিনি, বললাম, "আপনাকে ওখানে কোনোদিন দেখিনি" সে জানালো, "নতুন জয়েন করছি। "
এবারে এক ভাইয়া ফোন দিলেন ইন্ডিপেন্ডেন্টের লোকাল করসপন্ডেন্টকে, জানানো হলো, আইডি দিয়ে কাউকে পাঠিয়ে ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে যেতে।
একটু পেছনে গিয়ে চা খাচ্ছি, কানে এলো কয়েকজন মুরুব্বীর জটলার আলোচনা, মসজিদের যায়নামাজে জামাত-শিবিরের আগুন দেওয়ার ঘটনাটায় বড় ধরনের ঝাঁকি খেয়েছেন ওরা, সেইটা নিয়েই বাদানুবাদ চলছে।
একসময় শেষ হলো সিনেমা, আর ঘরে ফিরলাম সবাই যার যার মতন।
কাল আবার নামবো পথে, বিক্ষোভ মিছিলে।
তবে তৈয়ার থাকছি, সবাই।
আজকের ছবি দেখবেন? খুব একটা ভালো হয়নি কিন্তু! ফ্ল্যাশ জ্বালাবার মতন চার্জ ছিলো না।
এটা দুপুরের ছবি, আজকের নতুন সংযোজন, হামলার আগে
এগুলো সন্ধের
আর একটা ছোট্টো ভিডিও ক্লিপ দিচ্ছি - আজকের দর্শক জমায়েতের।
নির্দলীয় গণমঞ্চ খুলনা বাঙালীর দখলে আছে এবং থাকবে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।