সহজ
লাল গোল সূর্যটা ডুবে গেল। দুর আকাশে সীমানা দিয়ে পাখিরা ফিরছে নিজেদের নীড়ে। কাঠবেড়ালিগুলো দ্রুত ঢুকে পড়ছে তাদের ছোট্ট ঘরে। আবার দিনের আলো না ফোটা অবধি শুকনো ও নিরাপদ জায়গায় কাটাবে ওরা সারাটা রাত। এমন কথা কিন্তু সবার জন্য খাটে না।
অন্ধকার যতো গাঢ় হয় চরাচরে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে পাশের ঝোপে ডেকে ওঠে একটা ব্যাঙ -ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। বাড়ির লাগোয়া ছোট্ট বাগানে জ্বলে ওঠে এক থোকা জোনাকির সবুজ আলো। হুয়া-হু-হুক্কা-হুয়া দুরে কোথাও ডাক দিলো দুটো শেয়াল।
রাতের বেলায় আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন কী পৃথিবীর সব প্রাণীও ঘুমিয়ে পড়ে? আসলে কিন্তু তা নয়।
রাতের প্রাণী জগৎ কিন্তু মোটেই নিরব নয়। নিশাচর প্রাণী হিসাবে সুখ্যাতি আছে কিছু প্রাণী ও পোকা-মাকড়ের।
গভীর আঁধারেও রাতের বুকে বাদুড়েরা উড়ে বেড়ায়, জোনাকি আলো ছড়ায়, শিয়াল আর পেঁচা শিকার ধরে, র্যাকুন খুঁজে ফেরে খাবার, ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। এরাই নিশাচর প্রাণী, সারা রাত জেগে চরাচরে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব জানান দেয়। এসব প্রাণীদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা ওদেরকে রাতের আঁধারেও কাজ করতে সাহায্য করে।
অন্ধকার রাতে ঘুরে বেড়ানো আর খাবার খোঁজা এসব প্রাণীদের কয়েকটির গল্প শোনাব আজ ।
জোনাকি পোকা
গ্রামে যাদের যাতায়াত আছে তারা সবাই চেনো জোনাকি পোকাকে। কী দারুণ এই পোকাটার কাজ কারবার বলোতো! পেটের মধ্যে যেন চার্জ লাইট জ্বালিয়ে তারা দল বেঁধে নেচে বেড়ায় ঝোপঝাড়ে, খাবার খোঁজে। অন্ধকার ঝোপের চারপাশে জোনাকী পোকাদের এই ওড়াওড়ি সত্যিই এক অভাবনীয় দৃশ্য।
জোনাকি পোকাকে ইংরেজীতে বলে ফায়ার ফাই ।
দিনের বেলা এদের টিকিটিও দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু যেই সন্ধ্যা নামে ঝুপ্ অমনি ওরা দলবেঁধে বের হয় খাবারের খোঁজে। ফুলের মধু খায় আর নেচে বেড়ায়, যেন এক উৎসব চলছে।
জোনাকির জীবনকাল এক থেকে তিন সপ্তাহ। আমাদের দেশে যে সব জোনাকি দেখা যায় তাদের শরীর থেকে কেবল সবুজ আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে কিন্তু পৃথিবীতে এমনও জোনাকি আছে যারা সবুজ ও লাল দুটো রংয়ের বিচ্ছুরণই ঘটাতে পারে।
আলোর এই ব্যাপারটি নিয়ে নিশ্চয়ই তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগে। আসলে জোনাকিদের শরীরে লুসিফারিন (ষঁপরভবৎরহ) নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যেটা অক্সিজেনের সাথে মিশে তৈরি করে লাল-সবুজ আলো। একটা জোনাকি আরেক জনের সাথে কথাবার্তা বলে ওদের দেহের আলোকে নানা ভাবে ছড়ানোর মাধ্যমে।
পেঁচা
পৃথিবীর যে কোন প্রাণীর চেয়ে বেশি দৃষ্টি শক্তির অধিকারী হলো পেঁচা । পেঁচার কথা বলতেই কি হ্যারি পটারের গল্প মনে পড়ে গেল তোমাদের? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ, হ্যারি পটারের কাছে চিঠি বিলি করতে আসা শত-শত পেঁচা ওড়ার দৃশ্যটা কারোই ভোলার কথা নয়।
শীতের আধার রাতে টু-হুইট-টু-হুউ শব্দ শুনে অনেকেই বুঝতে পারে পেঁচা ডাকছে। কিন্তু মজার ব্যাপারটি হলো এমন ডাক কিন্তু দুটো পেঁচা মিলে ডাকে। সারা পৃথিবী জুড়ে ১৭০ ধরণের বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা দেখা যায় যাদের অধিকাংশই রাতের বেলা বের হয় শিকারের জন্য। আগে আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর হুতোম পেঁচা দেখা যেত। এখনও খুঁজলে দেখা যাবে।
পেঁচাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ওদের বড় বড় গোল দুটো চোখ। একদম যেন গাড়ির সাদা হেড লাইট। চোখদুটো পেঁচার এতোই বড় যে অেিগালকের মধ্যেও সেগুলো ঢোকেনা। মাথা ঘুরিয়ে এরা প্রায় পুরোপুরি পেছনের দিকে তাকাতে পারে। একারণেই এক জায়গায় চুপটি করে বসেই ওরা চারদিকে নজর রাখতে পারে।
দিনের আলো এই বড় বড় চোখের পেঁচা সইতে পারে না, একারণই বেচারা পেঁচা রাতের পাখি খেতাব পেয়ে গেল। চাকতির মতো ওদের মুখমন্ডলের সুবিধা হলো এর ফলে খুব স্মূ শব্দের প্রতিধ্বনিও হয় এদের কানে। পেঁচার শ্রবণ শক্তি কিন্তু দুর্দান্ত। অন্ধকারে খসখস নড়াচড়ার শব্দ শুনেই সে বুঝে ফেলতে করতে পারে শিকারের অবস্থান।
পেঁচা এক মারাত্মক শিকারী পাখি।
বেশির ভাগ পেঁচারই লম্বা ও ধারালো নখর আছে। পাখা দুটো বেশি না দুলিয়েই এরা উড়তে পারে, এবং সে কারণেই শব্দ না করে খোলা বাতাসে পাক খেতে পারে অনায়াসে। একবার যখন তার শিকারকে খুঁজে পায় অমনি সে বাঁকানো নখড়ের থাবা নিয়ে নেমে আসে শিকার ধরতে। ওদের খাবারে তেমন কোন বাছবিচার নেই। ুদে ইঁদুর, শুয়োপোকা, ঢোরা সাপ, ব্যাঙ - কি নেই ওদের খাবারের তালিকায়?
বাদুড়
পা দিয়ে গাছের ডালে আটকে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকে বাদুড়।
গাঢ় আধারে ইকোলোকেশন ব্যবহার করে এরা যে কোন জিনিষের অস্তিত্ব টের পায়। ল্য বস্তুর দিকে তীè শব্দ ছুড়ে দিয়ে ওরা সেটার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে। তাই অন্ধকারে চলাফেরা করতে মোটেও অসুবিধা হয় না।
দিনের আলো বাদুড় সহ্য করতে পারে না। তাই এ সময়টা ওরা পুরনো ভাঙা বাড়িতে, বনের ভেতর গাছের ডালে ঝুলে থেকে বিশ্রাম নেয়।
রাত হলেও ওরা চলে যায় নাইট ডিউটিতে, মানে খাবার খুঁজতে। এদের খাবার তালিকায় আছে বিভিন্ন ফলমুল (আম, লিচু, কলা ইত্যাদি)।
এসব নিরীহ বাদুর ছাড়াও আরও আছে রক্তচোষা বাদুড় বা ভ্যাম্পায়ার বাদুড়। এই ভ্যাম্পায়ার বাদুরদের পেট ভরাতে চাই তাজা রক্ত। এরা শিকারের চামড়ায় নিজের তীè ধারালো দাঁত দিয়ে চিড়ে রক্ত নালীতে ফুটো করে ফেলে।
তারপর শক্ত জিভ দিয়ে রক্ত টেনে নিয়ে পেট ভরায়। কী নিষ্ঠুর কাজ কারবার বলোতো!
খাবারের খোঁজে এরা মাটির খুব কাছ দিয়ে উড়ে বেড়াতে পারে। উড়তে উড়তে একসময় শিকারের কাছে নেমে পড়ে, পেছনের পা ও লম্বা থাবা লুকিয়ে রাখে চার পায়ে লাগানো পাখার আড়লে। সাধারণ ভ্যাম্পায়াররা গবাদি পশু কিম্বা ঘোড়াকে আক্রমণ করে কিন' কিছু ভ্যাম্পায়ার আছে যারা পাখিদেরও আক্রমণ করে। শিকারের রক্ত যাতে দ্রুত জমে না যায় সেজন্যে ওরা মুখ থেকে লালার সাথে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ ঢুকিয়ে দেয় শিকারের শরীরে।
প্রতিদিন এদের ২০ গ্রাম রক্ত দরকার হয়, অর্থাৎ প্রায় দুই টেবিল চা চামচের সমান। অনেক সময় আবার রক্ত খেয়ে এমন ঢাপ্পুস লেগে যায় যে তখন উড়তেও কষ্ট হয়।
ভয় পাবেন না, আমাদের দেশের বাদুরগুলো রাতে জাগলেও ভ্যাম্পায়ারদের মতো ভয়ঙ্কর নয়। ভ্যাম্পায়ার বাদুরদের কেবল মধ্য ও দণি আমেরিকাতেই দেখা যায়। সেখানে এদেরকে তিকারক প্রাণী হিসেবেই দেখা হয় কারণ ভ্যাম্পায়ার বাদুররা র্যাবিস বা হাইপোকন্ড্রিয়া নামের মরণব্যাধি ছড়ায়।
মাকড়শা
পৃথিবীতে প্রায় চল্লিশ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়শা আছে। ুদে মাকড়শা থেকে শুরু করে দণি আমেরিকার ওয়েস্টার্ন সামোয়া নামের পাখি ধরে খাওয়া মাকড়শা আছে। ওয়েস্টার্ন সামোয়া পা ছড়িয়ে দাড়ালে বড়সড় একটা ডিনার প্লেটের সমান হতে পারে।
এটা সত্যিই দিনের বেলাতেও মাকড়শা দেখতে পাও তোমরা, কিন্তু বেশিরভাগ মাকড়শাই অন্ধকার হলে বেড়িয়ে পড়তে ভালবাসে। সাধারনত রাতের বেলাতেই তারা জাল তৈরি করে এবং এর ঠিক মধ্যিখানে গিয়ে বসে থাকে চুপটি করে।
কোন পোক-মাকড় সেখান দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় যদি আঠালো জালে আটকা পড়ে অমনি গপ্। দিনের বেলা ওরা জালের এক প্রান্তে গিয়ে সামনের পাগুলো গুটিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে। কোন পোকা ওই সময় জালে আটকা পড়লে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ফলে সিল্কি জালে ঝাকুনি ওঠে। আর তাতেই মাকড়শা বুঝে ফেলে শিকার আটকে গেছে। ভাবছো মাকড়শা নিজেও তো একটা পোকা, তবে সে কেন নিজের জালে আটকে পড়েনা? হুম, ওদের পাগুলোয় বিশেষ এক তেলের আস্তর থাকে তাই নিজেদের ফাঁদে মাকড়শা কখনো আটকে যায়না।
সব মাকড়শা যে জাল বুনতে পারে তা কিন্তু নয়। উলফ স্পাইডারের মতো কিছু মাকড়শা আছে যারা একবারে চুপটি করে বসে থাকে। একদম নড়াচড়া করেনা। শিকার কাছে আসা মাত্রই অতর্কিত আক্রমণে ঘায়েল করে ফেলে। তোমরা কি জানো, মাকড়শারা খাবারের স্বাদ পা দিয়ে নেয় এবং পুরাতন বাসি খাবারের চেয়ে টাটকা খাবারেই ওদের রুচি বেশি।
আমাদের বাসা-বাড়ির দেয়ালে সরু পায়ের যে সব মাকড়শা দেখা যায় ওরা তেমন একটা ভয়ঙ্কর না। কারণ ওদের বিষ নেই। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে যত মাকড়শা আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিষধর হলো ব্রাজিলিয়ান হান্টসম্যান । কিন্তু এখন এর কামড়ে খুব কম মানুষই মারা যায়। কারণটা খুব সোজা, এর ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা।
শিয়াল
বুদ্ধিমান শিয়ালের কত গল্পইতো আমরা পড়েছি। দেখতে অনেকটা কুকুরের মতোই, পাগুলো বেশ খাটো, লম্বা ও খানিকটা চ্যাপ্টা মুখ, ত্রিকোনাকৃতির খাড়া কান, গায়ে ঘন পশম এবং লম্বা ঝোপের মতো লেজ - এই হলো শিয়াল মামা। রাতের বেলা গৃহস্থের হাঁস-মুরগি চুরি করে খেতে এরা ওস্তাদ। অধিকাংশ শিয়ালের খাবার হলো ইঁদুর, জলো ইঁদুর, খরগোস, পাখির ডিম, ফল, বড় পোকা-মাকড় এবং মৃত-গলিত পশু-পাখি ইত্যাদি। পৃথিবীর সব এলাকাতেই কমবেশি নিশাচর এই প্রাণীটিকে দেখা যায়।
এরা থাকে বনে-জঙ্গলে ও মরু এলাকায়।
শিয়াল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় লাল শিয়াল বা রেড ফক্স। এরা সাধারনত লম্বায় ৩৬ থেকে ৪২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। কালো কান আর পা এবং লেজের দিকের সাদা ছোপ দেখেই চেনা যায় ওদের। ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর মেক্সিকো এবং আর্কটিক অঞ্চলে এদের বিচরণ।
মাটি খুঁড়ে এরা নিজেদের থাকার জন্য গুহা তৈরি করে। গুহার একাধিক প্রবেশ মুখ থাকে। ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রবল হয় শিয়ালদের। সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি এরা ব্যস্ত থাকে শিকার কাজে।
তেলাপোকা
বেশিরভাগ সময়েই তাকে দেখা যায় নিজের শরীর পরিষ্কার করাতেই ব্যস্ত।
কিন্তু গত ৩২০ মিলিয়ন বছরেও অন্য প্রাণীদের যেমন দৈহিক বিবর্তন হয় এদের তা কিছুই হয়নি। বোঝা যায় নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে খুবই এক্সপার্ট তেলাপোকা।
তেলাপোকাকে অনেকেই ভয় পায়। কারণ ওরা যখন এদিক ওদিক উড়ে এসে গায়ে পড়ে তখন ওদের কাঁটাওয়ালা পা গায়ে শিরশিরানি অনুভূতি তৈরি করে। আসলে ওরা কিন্তু খুব একটা ভয়ঙ্কর কোন পতঙ্গ নয়।
আলোর চেয়ে অন্ধকারই ওদের বেশি পছন্দ। এ কারণে দিনের বেলা এদের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু রাত নামলেই এরা খাবারের খোঁজে ছড়িয়ে পড়ে।
কী সব খায় ওরা শুনবেন? এমন কোন বস্তু নেই যেটা ওরা খায় না। রান্নাঘরের ময়লা, আবর্জনা, আর নোংরা সবকিছুই আছে ওদের খাদ্য তালিকায়।
এটুকু শুনেই নিশ্চয়ই তুমি ওয়াক থু করছো। কিন্তু তেলাপোকা আমাদের তি করে ঠিকই, আবার পাশাপাশি এসব নোংরা খাবার খেয়ে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কারও রাখে। তাই বলে শখ করে আবার তেলাপোকা পুষতে যাবনে না কিন্তু।
টিকটিকি
দেয়ালের কোণে স্পাইডারম্যানের মতো নিজেকে আটকে টিক টিক করে কে? কে আবার টিকটিকি! টিকটিকি হলো সরীসৃপ জাতের প্রাণী। অর্থাৎ এরা ডাইনোসরদের বংশধর।
তো বুঝতেই পারছেন, আকারে ছোট বলে হেলাফেলা করার জো নেই। এক অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর আর সব জায়গাতেই এদের বসবাস।
বেশির ভাগ টিকটিকিই ছোট ছোট পোকামাকড় শিকার করে তবে খুব অল্প কিছু জাতের টিকিটিকি আছে যারা তৃণভোজী। টিকটিকিদের পায়ের নিচে ফাঁপা প্যাড থাকে যা দিয়ে ওরা অনায়াসেই দেয়াল বাওয়ার কাজটি সারে। দেখেছেন নিশ্চয়ই, ওদের লেজ ছিড়ে গেলে আবার তা গজায়, অবশ্য আগের লেজের মতো এতোটা সুদৃশ্য হয় না নতুনটি।
দিনের বেলা এরা সুবিধামতো কোন জায়গায় লুকিয়ে থাকে। কিন্তু রাত হলে এরা খাবারের খোঁজে বেরিয়ে আসে বাইরে। ছোটবড় বিভিন্ন পোকামাকড় আছে এদের খাদ্য তালিকায়।
র্যাকুন
দিনের বেলা আস্তাকুড়ে খাবার খোঁজা কি সহজ কথা? স্তন্যপায়ী প্রাণী র্যাকুন -এর বেলায় কথাটা একদমই খাঁটি। এদের মূলত দেখা যায় উত্তর ও দণি আমেরিকা এবং কানাডার কিছু অঞ্চলে, বন-জঙ্গল বা গ্রামাঞ্চলে, পানির কাছকাছি।
র্যাকুনের খাবার হলো মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, বাদাম, এমনকি গাছ-গাছড়াও। গাছে চড়ে বিভিন্ন রকমের বীজ ও বেরি ফলও খায় ওরা। বন জঙ্গলে থাকলে এরা সাধারনত পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে।
র্যাকুনের সামনের দুটো থাবা এবং নাকটি এদের খুবই স্পর্শকাতর জায়গা, ধরতে গেলে তাই সাবধান। মজার ব্যাপার কি জানো, এদের পায়ের ছাপ দেখতে মানুষেরই মতো।
শীতকালে এদের শরীরের ওজন কমে অর্ধেক হয়ে যায়। ছোট ছোট কান দুটো সব সময় খাড়া যেন মনোযোগ দিয়ে শুনছে সবার কথা। পুরোটা দেহ পশমে ঢাকা দেখলে মনে হয় পশমের কোট গায়ে দিয়েছে। পশমের কারণে লেজটাও তাই মোটা। ছোট ছোট পা, প্রত্যেক পায়েই পাঁচটি করে আঙ্গুল।
সারা আমেরিকা জুড়েই সাধারণ জাতের র্যাকুনগুলো দেখা যায় লোকবসতির কাছকাছি যেখানে বনজঙ্গল, পুকুর কিম্বা ঝর্ণা থাকে। সেখানে তারা সুযোগ পেলে বাড়ির হাঁস-মুরগী ধরে খায়। এছাড়াও র্যাকুনদের খাবার মেনুতে আছে ইঁদুর, পাখির ডিম, বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড়, মাছ এবং ব্যাঙ। একদম রাজকীয় খানাদানা, কি বলেন? কাঁকড়া খাওয়া র্যাকুনরা সাধারণত গাঢ় ছাই রংয়ের হয়। শক্ত নখর ব্যবাহার করে র্যাকুনরা গাছে চড়ে, মাছ ধরে, জঞ্জালের ভেতর থেকে খাবার খুঁজে বের করে।
ভাবছেন, এরাই? না , নিশাচরদের তালিকায় আরো আছে র্যাটলস্নেক, হরিণ, আরমাডিলো, উড়ুক্কু, কাঠবেড়ালি, নেকড়ে, স্যুগার গ্লাইডার, পর্কুপাইন , ববক্যাট ইত্যাদি প্রাণী। আরো আছে। সারা গায়ে কাঁটা নিয়ে রাতভর খাবার খোজে শজারু, রাত জাগে শামুক ও ব্যাঙেরা
লাল গোল সূর্যটা ডুবে গেল। দুর আকাশে সীমানা দিয়ে পাখিরা ফিরছে নিজেদের নীড়ে। কাঠবেড়ালিগুলো দ্রুত ঢুকে পড়ছে তাদের ছোট্ট ঘরে।
আবার দিনের আলো না ফোটা অবধি শুকনো ও নিরাপদ জায়গায় কাটাবে ওরা সারাটা রাত। এমন কথা কিন্তু সবার জন্য খাটে না। অন্ধকার যতো গাঢ় হয় চরাচরে নেমে আসে নিস্তব্ধতা। কিন্তু সেই নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে পাশের ঝোপে ডেকে ওঠে একটা ব্যাঙ -ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। বাড়ির লাগোয়া ছোট্ট বাগানে জ্বলে ওঠে এক থোকা জোনাকির সবুজ আলো।
হুয়া-হু-হুক্কা-হুয়া দুরে কোথাও ডাক দিলো দুটো শেয়াল।
রাতের বেলায় আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন কী পৃথিবীর সব প্রাণীও ঘুমিয়ে পড়ে? আসলে কিন্তু তা নয়। রাতের প্রাণী জগৎ কিন্তু মোটেই নিরব নয়। নিশাচর প্রাণী হিসাবে সুখ্যাতি আছে কিছু প্রাণী ও পোকা-মাকড়ের।
গভীর আঁধারেও রাতের বুকে বাদুড়েরা উড়ে বেড়ায়, জোনাকি আলো ছড়ায়, শিয়াল আর পেঁচা শিকার ধরে, র্যাকুন খুঁজে ফেরে খাবার, ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ।
এরাই নিশাচর প্রাণী, সারা রাত জেগে চরাচরে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব জানান দেয়। এসব প্রাণীদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা ওদেরকে রাতের আঁধারেও কাজ করতে সাহায্য করে। অন্ধকার রাতে ঘুরে বেড়ানো আর খাবার খোঁজা এসব প্রাণীদের কয়েকটির গল্প শোনাব আজ ।
জোনাকি পোকা
গ্রামে যাদের যাতায়াত আছে তারা সবাই চেনো জোনাকি পোকাকে। কী দারুণ এই পোকাটার কাজ কারবার বলোতো! পেটের মধ্যে যেন চার্জ লাইট জ্বালিয়ে তারা দল বেঁধে নেচে বেড়ায় ঝোপঝাড়ে, খাবার খোঁজে।
অন্ধকার ঝোপের চারপাশে জোনাকী পোকাদের এই ওড়াওড়ি সত্যিই এক অভাবনীয় দৃশ্য।
জোনাকি পোকাকে ইংরেজীতে বলে ফায়ার ফাই । দিনের বেলা এদের টিকিটিও দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু যেই সন্ধ্যা নামে ঝুপ্ অমনি ওরা দলবেঁধে বের হয় খাবারের খোঁজে। ফুলের মধু খায় আর নেচে বেড়ায়, যেন এক উৎসব চলছে।
জোনাকির জীবনকাল এক থেকে তিন সপ্তাহ। আমাদের দেশে যে সব জোনাকি দেখা যায় তাদের শরীর থেকে কেবল সবুজ আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে কিন্তু পৃথিবীতে এমনও জোনাকি আছে যারা সবুজ ও লাল দুটো রংয়ের বিচ্ছুরণই ঘটাতে পারে। আলোর এই ব্যাপারটি নিয়ে নিশ্চয়ই তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগে। আসলে জোনাকিদের শরীরে লুসিফারিন (ষঁপরভবৎরহ) নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যেটা অক্সিজেনের সাথে মিশে তৈরি করে লাল-সবুজ আলো। একটা জোনাকি আরেক জনের সাথে কথাবার্তা বলে ওদের দেহের আলোকে নানা ভাবে ছড়ানোর মাধ্যমে।
পেঁচা
পৃথিবীর যে কোন প্রাণীর চেয়ে বেশি দৃষ্টি শক্তির অধিকারী হলো পেঁচা । পেঁচার কথা বলতেই কি হ্যারি পটারের গল্প মনে পড়ে গেল তোমাদের? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ, হ্যারি পটারের কাছে চিঠি বিলি করতে আসা শত-শত পেঁচা ওড়ার দৃশ্যটা কারোই ভোলার কথা নয়। শীতের আধার রাতে টু-হুইট-টু-হুউ শব্দ শুনে অনেকেই বুঝতে পারে পেঁচা ডাকছে। কিন্তু মজার ব্যাপারটি হলো এমন ডাক কিন্তু দুটো পেঁচা মিলে ডাকে। সারা পৃথিবী জুড়ে ১৭০ ধরণের বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা দেখা যায় যাদের অধিকাংশই রাতের বেলা বের হয় শিকারের জন্য।
আগে আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর হুতোম পেঁচা দেখা যেত। এখনও খুঁজলে দেখা যাবে।
পেঁচাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ওদের বড় বড় গোল দুটো চোখ। একদম যেন গাড়ির সাদা হেড লাইট। চোখদুটো পেঁচার এতোই বড় যে অেিগালকের মধ্যেও সেগুলো ঢোকেনা।
মাথা ঘুরিয়ে এরা প্রায় পুরোপুরি পেছনের দিকে তাকাতে পারে। একারণেই এক জায়গায় চুপটি করে বসেই ওরা চারদিকে নজর রাখতে পারে।
দিনের আলো এই বড় বড় চোখের পেঁচা সইতে পারে না, একারণই বেচারা পেঁচা রাতের পাখি খেতাব পেয়ে গেল। চাকতির মতো ওদের মুখমন্ডলের সুবিধা হলো এর ফলে খুব স্মূ শব্দের প্রতিধ্বনিও হয় এদের কানে। পেঁচার শ্রবণ শক্তি কিন্তু দুর্দান্ত।
অন্ধকারে খসখস নড়াচড়ার শব্দ শুনেই সে বুঝে ফেলতে করতে পারে শিকারের অবস্থান।
পেঁচা এক মারাত্মক শিকারী পাখি। বেশির ভাগ পেঁচারই লম্বা ও ধারালো নখর আছে। পাখা দুটো বেশি না দুলিয়েই এরা উড়তে পারে, এবং সে কারণেই শব্দ না করে খোলা বাতাসে পাক খেতে পারে অনায়াসে। একবার যখন তার শিকারকে খুঁজে পায় অমনি সে বাঁকানো নখড়ের থাবা নিয়ে নেমে আসে শিকার ধরতে।
ওদের খাবারে তেমন কোন বাছবিচার নেই। ুদে ইঁদুর, শুয়োপোকা, ঢোরা সাপ, ব্যাঙ - কি নেই ওদের খাবারের তালিকায়?
বাদুড়
পা দিয়ে গাছের ডালে আটকে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকে বাদুড়। গাঢ় আধারে ইকোলোকেশন ব্যবহার করে এরা যে কোন জিনিষের অস্তিত্ব টের পায়। ল্য বস্তুর দিকে তীè শব্দ ছুড়ে দিয়ে ওরা সেটার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে। তাই অন্ধকারে চলাফেরা করতে মোটেও অসুবিধা হয় না।
দিনের আলো বাদুড় সহ্য করতে পারে না। তাই এ সময়টা ওরা পুরনো ভাঙা বাড়িতে, বনের ভেতর গাছের ডালে ঝুলে থেকে বিশ্রাম নেয়। রাত হলেও ওরা চলে যায় নাইট ডিউটিতে, মানে খাবার খুঁজতে। এদের খাবার তালিকায় আছে বিভিন্ন ফলমুল (আম, লিচু, কলা ইত্যাদি)।
এসব নিরীহ বাদুর ছাড়াও আরও আছে রক্তচোষা বাদুড় বা ভ্যাম্পায়ার বাদুড়।
এই ভ্যাম্পায়ার বাদুরদের পেট ভরাতে চাই তাজা রক্ত। এরা শিকারের চামড়ায় নিজের তীè ধারালো দাঁত দিয়ে চিড়ে রক্ত নালীতে ফুটো করে ফেলে। তারপর শক্ত জিভ দিয়ে রক্ত টেনে নিয়ে পেট ভরায়। কী নিষ্ঠুর কাজ কারবার বলোতো!
খাবারের খোঁজে এরা মাটির খুব কাছ দিয়ে উড়ে বেড়াতে পারে। উড়তে উড়তে একসময় শিকারের কাছে নেমে পড়ে, পেছনের পা ও লম্বা থাবা লুকিয়ে রাখে চার পায়ে লাগানো পাখার আড়লে।
সাধারণ ভ্যাম্পায়াররা গবাদি পশু কিম্বা ঘোড়াকে আক্রমণ করে কিন' কিছু ভ্যাম্পায়ার আছে যারা পাখিদেরও আক্রমণ করে। শিকারের রক্ত যাতে দ্রুত জমে না যায় সেজন্যে ওরা মুখ থেকে লালার সাথে এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ ঢুকিয়ে দেয় শিকারের শরীরে। প্রতিদিন এদের ২০ গ্রাম রক্ত দরকার হয়, অর্থাৎ প্রায় দুই টেবিল চা চামচের সমান। অনেক সময় আবার রক্ত খেয়ে এমন ঢাপ্পুস লেগে যায় যে তখন উড়তেও কষ্ট হয়।
ভয় পাবেন না, আমাদের দেশের বাদুরগুলো রাতে জাগলেও ভ্যাম্পায়ারদের মতো ভয়ঙ্কর নয়।
ভ্যাম্পায়ার বাদুরদের কেবল মধ্য ও দণি আমেরিকাতেই দেখা যায়। সেখানে এদেরকে তিকারক প্রাণী হিসেবেই দেখা হয় কারণ ভ্যাম্পায়ার বাদুররা র্যাবিস বা হাইপোকন্ড্রিয়া নামের মরণব্যাধি ছড়ায়।
মাকড়শা
পৃথিবীতে প্রায় চল্লিশ হাজারেরও বেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাকড়শা আছে। ুদে মাকড়শা থেকে শুরু করে দণি আমেরিকার ওয়েস্টার্ন সামোয়া নামের পাখি ধরে খাওয়া মাকড়শা আছে। ওয়েস্টার্ন সামোয়া পা ছড়িয়ে দাড়ালে বড়সড় একটা ডিনার প্লেটের সমান হতে পারে।
এটা সত্যিই দিনের বেলাতেও মাকড়শা দেখতে পাও তোমরা, কিন্তু বেশিরভাগ মাকড়শাই অন্ধকার হলে বেড়িয়ে পড়তে ভালবাসে। সাধারনত রাতের বেলাতেই তারা জাল তৈরি করে এবং এর ঠিক মধ্যিখানে গিয়ে বসে থাকে চুপটি করে। কোন পোক-মাকড় সেখান দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় যদি আঠালো জালে আটকা পড়ে অমনি গপ্। দিনের বেলা ওরা জালের এক প্রান্তে গিয়ে সামনের পাগুলো গুটিয়ে নিজেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে। কোন পোকা ওই সময় জালে আটকা পড়লে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ফলে সিল্কি জালে ঝাকুনি ওঠে।
আর তাতেই মাকড়শা বুঝে ফেলে শিকার আটকে গেছে। ভাবছো মাকড়শা নিজেও তো একটা পোকা, তবে সে কেন নিজের জালে আটকে পড়েনা? হুম, ওদের পাগুলোয় বিশেষ এক তেলের আস্তর থাকে তাই নিজেদের ফাঁদে মাকড়শা কখনো আটকে যায়না।
সব মাকড়শা যে জাল বুনতে পারে তা কিন্তু নয়। উলফ স্পাইডারের মতো কিছু মাকড়শা আছে যারা একবারে চুপটি করে বসে থাকে। একদম নড়াচড়া করেনা।
শিকার কাছে আসা মাত্রই অতর্কিত আক্রমণে ঘায়েল করে ফেলে। তোমরা কি জানো, মাকড়শারা খাবারের স্বাদ পা দিয়ে নেয় এবং পুরাতন বাসি খাবারের চেয়ে টাটকা খাবারেই ওদের রুচি বেশি।
আমাদের বাসা-বাড়ির দেয়ালে সরু পায়ের যে সব মাকড়শা দেখা যায় ওরা তেমন একটা ভয়ঙ্কর না। কারণ ওদের বিষ নেই। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে যত মাকড়শা আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিষধর হলো ব্রাজিলিয়ান হান্টসম্যান ।
কিন্তু এখন এর কামড়ে খুব কম মানুষই মারা যায়। কারণটা খুব সোজা, এর ওষুধ আবিষ্কার করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা।
শিয়াল
বুদ্ধিমান শিয়ালের কত গল্পইতো আমরা পড়েছি। দেখতে অনেকটা কুকুরের মতোই, পাগুলো বেশ খাটো, লম্বা ও খানিকটা চ্যাপ্টা মুখ, ত্রিকোনাকৃতির খাড়া কান, গায়ে ঘন পশম এবং লম্বা ঝোপের মতো লেজ - এই হলো শিয়াল মামা। রাতের বেলা গৃহস্থের হাঁস-মুরগি চুরি করে খেতে এরা ওস্তাদ।
অধিকাংশ শিয়ালের খাবার হলো ইঁদুর, জলো ইঁদুর, খরগোস, পাখির ডিম, ফল, বড় পোকা-মাকড় এবং মৃত-গলিত পশু-পাখি ইত্যাদি। পৃথিবীর সব এলাকাতেই কমবেশি নিশাচর এই প্রাণীটিকে দেখা যায়। এরা থাকে বনে-জঙ্গলে ও মরু এলাকায়।
শিয়াল প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় লাল শিয়াল বা রেড ফক্স। এরা সাধারনত লম্বায় ৩৬ থেকে ৪২ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়।
কালো কান আর পা এবং লেজের দিকের সাদা ছোপ দেখেই চেনা যায় ওদের। ইউরোপ, এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর মেক্সিকো এবং আর্কটিক অঞ্চলে এদের বিচরণ। মাটি খুঁড়ে এরা নিজেদের থাকার জন্য গুহা তৈরি করে। গুহার একাধিক প্রবেশ মুখ থাকে। ঘ্রাণশক্তি খুবই প্রবল হয় শিয়ালদের।
সন্ধ্যা থেকে ভোর অবধি এরা ব্যস্ত থাকে শিকার কাজে।
তেলাপোকা
বেশিরভাগ সময়েই তাকে দেখা যায় নিজের শরীর পরিষ্কার করাতেই ব্যস্ত। কিন্তু গত ৩২০ মিলিয়ন বছরেও অন্য প্রাণীদের যেমন দৈহিক বিবর্তন হয় এদের তা কিছুই হয়নি। বোঝা যায় নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে খুবই এক্সপার্ট তেলাপোকা।
তেলাপোকাকে অনেকেই ভয় পায়।
কারণ ওরা যখন এদিক ওদিক উড়ে এসে গায়ে পড়ে তখন ওদের কাঁটাওয়ালা পা গায়ে শিরশিরানি অনুভূতি তৈরি করে। আসলে ওরা কিন্তু খুব একটা ভয়ঙ্কর কোন পতঙ্গ নয়। আলোর চেয়ে অন্ধকারই ওদের বেশি পছন্দ। এ কারণে দিনের বেলা এদের দেখা পাওয়া যায় না। কিন্তু রাত নামলেই এরা খাবারের খোঁজে ছড়িয়ে পড়ে।
কী সব খায় ওরা শুনবেন? এমন কোন বস্তু নেই যেটা ওরা খায় না। রান্নাঘরের ময়লা, আবর্জনা, আর নোংরা সবকিছুই আছে ওদের খাদ্য তালিকায়। এটুকু শুনেই নিশ্চয়ই তুমি ওয়াক থু করছো। কিন্তু তেলাপোকা আমাদের তি করে ঠিকই, আবার পাশাপাশি এসব নোংরা খাবার খেয়ে আমাদের পরিবেশ পরিষ্কারও রাখে। তাই বলে শখ করে আবার তেলাপোকা পুষতে যাবনে না কিন্তু।
টিকটিকি
দেয়ালের কোণে স্পাইডারম্যানের মতো নিজেকে আটকে টিক টিক করে কে? কে আবার টিকটিকি! টিকটিকি হলো সরীসৃপ জাতের প্রাণী। অর্থাৎ এরা ডাইনোসরদের বংশধর। তো বুঝতেই পারছেন, আকারে ছোট বলে হেলাফেলা করার জো নেই। এক অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া পৃথিবীর আর সব জায়গাতেই এদের বসবাস।
বেশির ভাগ টিকটিকিই ছোট ছোট পোকামাকড় শিকার করে তবে খুব অল্প কিছু জাতের টিকিটিকি আছে যারা তৃণভোজী।
টিকটিকিদের পায়ের নিচে ফাঁপা প্যাড থাকে যা দিয়ে ওরা অনায়াসেই দেয়াল বাওয়ার কাজটি সারে। দেখেছেন নিশ্চয়ই, ওদের লেজ ছিড়ে গেলে আবার তা গজায়, অবশ্য আগের লেজের মতো এতোটা সুদৃশ্য হয় না নতুনটি।
দিনের বেলা এরা সুবিধামতো কোন জায়গায় লুকিয়ে থাকে। কিন্তু রাত হলে এরা খাবারের খোঁজে বেরিয়ে আসে বাইরে। ছোটবড় বিভিন্ন পোকামাকড় আছে এদের খাদ্য তালিকায়।
র্যাকুন
দিনের বেলা আস্তাকুড়ে খাবার খোঁজা কি সহজ কথা? স্তন্যপায়ী প্রাণী র্যাকুন -এর বেলায় কথাটা একদমই খাঁটি। এদের মূলত দেখা যায় উত্তর ও দণি আমেরিকা এবং কানাডার কিছু অঞ্চলে, বন-জঙ্গল বা গ্রামাঞ্চলে, পানির কাছকাছি। র্যাকুনের খাবার হলো মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, বাদাম, এমনকি গাছ-গাছড়াও। গাছে চড়ে বিভিন্ন রকমের বীজ ও বেরি ফলও খায় ওরা। বন জঙ্গলে থাকলে এরা সাধারনত পাঁচ বছরের বেশি বাঁচে।
র্যাকুনের সামনের দুটো থাবা এবং নাকটি এদের খুবই স্পর্শকাতর জায়গা, ধরতে গেলে তাই সাবধান। মজার ব্যাপার কি জানো, এদের পায়ের ছাপ দেখতে মানুষেরই মতো। শীতকালে এদের শরীরের ওজন কমে অর্ধেক হয়ে যায়। ছোট ছোট কান দুটো সব সময় খাড়া যেন মনোযোগ দিয়ে শুনছে সবার কথা। পুরোটা দেহ পশমে ঢাকা দেখলে মনে হয় পশমের কোট গায়ে দিয়েছে।
পশমের কারণে লেজটাও তাই মোটা। ছোট ছোট পা, প্রত্যেক পায়েই পাঁচটি করে আঙ্গুল।
সারা আমেরিকা জুড়েই সাধারণ জাতের র্যাকুনগুলো দেখা যায় লোকবসতির কাছকাছি যেখানে বনজঙ্গল, পুকুর কিম্বা ঝর্ণা থাকে। সেখানে তারা সুযোগ পেলে বাড়ির হাঁস-মুরগী ধরে খায়। এছাড়াও র্যাকুনদের খাবার মেনুতে আছে ইঁদুর, পাখির ডিম, বিভিন্ন ধরণের পোকা-মাকড়, মাছ এবং ব্যাঙ।
একদম রাজকীয় খানাদানা, কি বলেন? কাঁকড়া খাওয়া র্যাকুনরা সাধারণত গাঢ় ছাই রংয়ের হয়। শক্ত নখর ব্যবাহার করে র্যাকুনরা গাছে চড়ে, মাছ ধরে, জঞ্জালের ভেতর থেকে খাবার খুঁজে বের করে।
ভাবছেন, এরাই? না , নিশাচরদের তালিকায় আরো আছে র্যাটলস্নেক, হরিণ, আরমাডিলো, উড়ুক্কু, কাঠবেড়ালি, নেকড়ে, স্যুগার গ্লাইডার, পর্কুপাইন , ববক্যাট ইত্যাদি প্রাণী। আরো আছে। সারা গায়ে কাঁটা নিয়ে রাতভর খাবার খোজে শজারু, রাত জাগে শামুক ও ব্যাঙেরা
লাল গোল সূর্যটা ডুবে গেল।
দুর আকাশে সীমানা দিয়ে পাখিরা ফিরছে নিজেদের নীড়ে। কাঠবেড়ালিগুলো দ্রুত ঢুকে পড়ছে তাদের ছোট্ট ঘরে। আবার দিনের আলো না ফোটা অবধি শুকনো ও নিরাপদ জায়গায় কাটাবে ওরা সারাটা রাত। এমন কথা কিন্তু সবার জন্য খাটে না। অন্ধকার যতো গাঢ় হয় চরাচরে নেমে আসে নিস্তব্ধতা।
কিন্তু সেই নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে পাশের ঝোপে ডেকে ওঠে একটা ব্যাঙ -ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। বাড়ির লাগোয়া ছোট্ট বাগানে জ্বলে ওঠে এক থোকা জোনাকির সবুজ আলো। হুয়া-হু-হুক্কা-হুয়া দুরে কোথাও ডাক দিলো দুটো শেয়াল।
রাতের বেলায় আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন কী পৃথিবীর সব প্রাণীও ঘুমিয়ে পড়ে? আসলে কিন্তু তা নয়। রাতের প্রাণী জগৎ কিন্তু মোটেই নিরব নয়।
নিশাচর প্রাণী হিসাবে সুখ্যাতি আছে কিছু প্রাণী ও পোকা-মাকড়ের।
গভীর আঁধারেও রাতের বুকে বাদুড়েরা উড়ে বেড়ায়, জোনাকি আলো ছড়ায়, শিয়াল আর পেঁচা শিকার ধরে, র্যাকুন খুঁজে ফেরে খাবার, ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ। এরাই নিশাচর প্রাণী, সারা রাত জেগে চরাচরে প্রাণীজগতের অস্তিত্ব জানান দেয়। এসব প্রাণীদের প্রত্যেকেরই এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা ওদেরকে রাতের আঁধারেও কাজ করতে সাহায্য করে। অন্ধকার রাতে ঘুরে বেড়ানো আর খাবার খোঁজা এসব প্রাণীদের কয়েকটির গল্প শোনাব আজ ।
জোনাকি পোকা
গ্রামে যাদের যাতায়াত আছে তারা সবাই চেনো জোনাকি পোকাকে। কী দারুণ এই পোকাটার কাজ কারবার বলোতো! পেটের মধ্যে যেন চার্জ লাইট জ্বালিয়ে তারা দল বেঁধে নেচে বেড়ায় ঝোপঝাড়ে, খাবার খোঁজে। অন্ধকার ঝোপের চারপাশে জোনাকী পোকাদের এই ওড়াওড়ি সত্যিই এক অভাবনীয় দৃশ্য।
জোনাকি পোকাকে ইংরেজীতে বলে ফায়ার ফাই । দিনের বেলা এদের টিকিটিও দেখতে পাওয়া যায় না।
কিন্তু যেই সন্ধ্যা নামে ঝুপ্ অমনি ওরা দলবেঁধে বের হয় খাবারের খোঁজে। ফুলের মধু খায় আর নেচে বেড়ায়, যেন এক উৎসব চলছে।
জোনাকির জীবনকাল এক থেকে তিন সপ্তাহ। আমাদের দেশে যে সব জোনাকি দেখা যায় তাদের শরীর থেকে কেবল সবুজ আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে কিন্তু পৃথিবীতে এমনও জোনাকি আছে যারা সবুজ ও লাল দুটো রংয়ের বিচ্ছুরণই ঘটাতে পারে। আলোর এই ব্যাপারটি নিয়ে নিশ্চয়ই তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগে।
আসলে জোনাকিদের শরীরে লুসিফারিন (ষঁপরভবৎরহ) নামে একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয় যেটা অক্সিজেনের সাথে মিশে তৈরি করে লাল-সবুজ আলো। একটা জোনাকি আরেক জনের সাথে কথাবার্তা বলে ওদের দেহের আলোকে নানা ভাবে ছড়ানোর মাধ্যমে।
পেঁচা
পৃথিবীর যে কোন প্রাণীর চেয়ে বেশি দৃষ্টি শক্তির অধিকারী হলো পেঁচা । পেঁচার কথা বলতেই কি হ্যারি পটারের গল্প মনে পড়ে গেল তোমাদের? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছ, হ্যারি পটারের কাছে চিঠি বিলি করতে আসা শত-শত পেঁচা ওড়ার দৃশ্যটা কারোই ভোলার কথা নয়। শীতের আধার রাতে টু-হুইট-টু-হুউ শব্দ শুনে অনেকেই বুঝতে পারে পেঁচা ডাকছে।
কিন্তু মজার ব্যাপারটি হলো এমন ডাক কিন্তু দুটো পেঁচা মিলে ডাকে। সারা পৃথিবী জুড়ে ১৭০ ধরণের বিভিন্ন প্রজাতির পেঁচা দেখা যায় যাদের অধিকাংশই রাতের বেলা বের হয় শিকারের জন্য। আগে আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে প্রচুর হুতোম পেঁচা দেখা যেত। এখনও খুঁজলে দেখা যাবে।
পেঁচাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ওদের বড় বড় গোল দুটো চোখ।
একদম যেন গাড়ির সাদা হেড লাইট। চোখদুটো পেঁচার এতোই বড় যে অেিগালকের মধ্যেও সেগুলো ঢোকেনা। মাথা ঘুরিয়ে এরা প্রায় পুরোপুরি পেছনের দিকে তাকাতে পারে। একারণেই এক জায়গায় চুপটি করে বসেই ওরা চারদিকে নজর রাখতে পারে।
দিনের আলো এই বড় বড় চোখের পেঁচা সইতে পারে না, একারণই বেচারা পেঁচা রাতের পাখি খেতাব পেয়ে গেল।
চাকতির মতো ওদের মুখমন্ডলের সুবিধা হলো এর ফলে খুব স্মূ শব্দের প্রতিধ্বনিও হয় এদের কানে। পেঁচার শ্রবণ শক্তি কিন্তু দুর্দান্ত। অন্ধকারে খসখস নড়াচড়ার শব্দ শুনেই সে বুঝে ফেলতে করতে পারে শিকারের অবস্থান।
পেঁচা এক মারাত্মক শিকারী পাখি। বেশির ভাগ পেঁচারই লম্বা ও ধারালো নখর আছে।
পাখা দুটো বেশি না দুলিয়েই এরা উড়তে পারে, এবং সে কারণেই শব্দ না করে খোলা বাতাসে পাক খেতে পারে অনায়াসে। একবার যখন তার শিকারকে খুঁজে পায় অমনি সে বাঁকানো নখড়ের থাবা নিয়ে নেমে আসে শিকার ধরতে। ওদের খাবারে তেমন কোন বাছবিচার নেই। ুদে ইঁদুর, শুয়োপোকা, ঢোরা সাপ, ব্যাঙ - কি নেই ওদের খাবারের তালিকায়?
বাদুড়
পা দিয়ে গাছের ডালে আটকে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকে বাদুড়। গাঢ় আধারে ইকোলোকেশন ব্যবহার করে এরা যে কোন জিনিষের অস্তিত্ব টের পায়।
ল্য বস্তুর দিকে তীè শব্দ ছুড়ে দিয়ে ওরা সেটার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে। তাই অন্ধকারে চলাফেরা করতে মোটেও অসুবিধা হয় না।
দিনের আলো বাদুড় সহ্য করতে পারে না। তাই এ সময়টা ওরা পুরনো ভাঙা বাড়িতে, বনের ভেতর গাছের ডালে ঝুলে থেকে বিশ্রাম নেয়। রাত হলেও ওরা চলে যায় নাইট ডিউটিতে, মানে খাবার খুঁজতে।
এদের খাবার তালিকায় আছে বিভিন্ন ফলমুল (আম, লিচু, কলা ইত্যাদি)।
এসব নিরীহ বাদুর ছাড়াও আরও আছে রক্তচোষা বাদুড় বা ভ্যাম্পায়ার বাদুড়। এই ভ্যাম্পায়ার বাদুরদের পেট ভরাতে চাই তাজা রক্ত। এরা শিকারের চামড়ায় নিজের তীè ধারালো দাঁত দিয়ে চিড়ে রক্ত নালীতে ফুটো করে ফেলে। তা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।