আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিশাচর

ছায়া ছায়ায় পথ হেটে চলি--ছায়া আমার সামনে ও পিছে।

সে আসে। সে আসে প্রতিদিন রাতে। প্রতিদিন রাতেই যে শুধু আসে তা কিন্তু নয়, দিনেও আসে। সে এসেই আমায় ডাকে।

দরজায় কড়া নাড়ে। খট্খট্ শব্দে আমি আতঙ্কিত হই। কোথায় লুকোবো ভেবে পাই না। গত তিনটি মাস আমি তার দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারিনি। মাঝে মাঝে তাকালেও দেখি তার ঠোঁট দুটো কাপছে।

তার কোনো কথাই আমার কানে আসে না। তার ভয়ে আমি নিজেকে আড়ালে লুকিয়ে রাখি। পালিয়ে বেড়াই। তবুও সে শুধু আমায় ডেকে যায়, ডেকে যায় সময়ে অসময়ে। না পেলে বাসার সামনে এসে পায়চারি করে।

আমায় খুঁজে বেড়ায়। আমি বাসায় ফিরলেই কী করে যেন টেলিপ্যাথিক উপায়ে সে হয়তো বুঝে নেয় আমি এসেছি। আমার কাছে অমনি সে ছুটে আসে। ভয়ে আমি আতকে উঠি। অথচ তাকে আমার ভয় পাওয়ার কথা ছিল না।

আমারতো কথা ছিলো তার দিকে নিস্পাপ চোখ মেলে তাকানোর। আর সে আমাকে পরম ভালোবাসায় সিক্ত আদর মাখ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করবে - এতোদিন কোথায় ছিলে? আজ রাতে হঠাৎ সে এসে হাজির। এবার আর পালাতে পারিনি। খেয়েছি ধরা। আমার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে।

তার দিকে তাকাতেই আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। কী সুন্দর মায়াময় মুখ! অথচ আমার দিকে তাকিয়ে আছে শকুনের মতো। পারলে ছো মেরে এখনই ছিন্নভিন্ন করে আমার দেহ। আমার সারা শরীর। ভয়ে ঘাম ঝরছে।

কণ্ঠনালী রূদ্ধ হয়ে গেছে। কী বলবো ভেবে পাচ্ছি না। সে শুধু কর্কশ কণ্ঠে কথা বলে যাচ্ছে। সে তার দীর্ঘ দিনের জমিয়ে রাখা রাগ সামলে রাখতে পারছে না। আমি মাথা নিচু করে তার পা দুটির দিকে তাকিয়ে আছি।

তার ফর্সা পা দুটো থেকে আমার চু যুগল যেন সরাতেই পারছি না। এক নাগারে সে তার অভাব-অনুযোগ বলে যাচ্ছে। না, আজ আমি শুনতে পারছি। আমার কাছে সে সময় চাচ্ছে। কবে আমি তার কাছে যাবো।

কবে তার...। আমি তাকে সময় দেই আগামী সোমবার। সে কোমল কণ্ঠে আমাকে আমার সময় সম্পর্কে আবারো সতর্ক করে দেয়। সে যায়। আমি তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থাকি।

বিশাল রুমগুলো আমার কাছে প্রচণ্ড ফাঁকা মনে হয়। হৃদয়টাও যেন ফাঁকা। কারও অভাব অনুভব করি। আমার সারা শরীর কেঁপে ওঠে। তার চোখ, ঠোঁট, ঠোঁটের ওপর..., ফর্সা পা আমার চোখে ভেসে ওঠে।

মনে পড়ে আগামী সোমবারের কথা। হৃদয়ের স্পন্দন যেন অনিয়মিত হয়ে ওঠে। আবারতো সে আসবে। কিছু একটা আমার কাছে চাইবে। আমি কি পারবো তাকে দিতে? হ্যাঁ সে আমার বাড়িওয়ালা।

আমি কি পারবো সামনের সোমবারে আমার গত তিনমাসের বকেয়া ভাড়া দিয়ে দিতে? কারণ সে এবার আমাকে আর আস্ত রাখবে না। আর আমি তো আবার তার ঠোঁটের ওপর মোটা মোটা গোফ দেখলেই পেটের ভেতর ইয়ে করে দিই!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।