মাঝে মাঝে বৃষ্টি দেখে হাত বাড়ানোর ইচ্ছে জাগে... ভেতর ভেতর যাই পুড়ে যাই, কেউ জানেনা আমার আগে...
শেষ বিকেলে আমি দাঁড়িয়েছিলাম ধানক্ষেতের আলপথে। পেছনে ডুবে যেতে থাকা লাল সূর্য। ধবধবে সাদা পায়রাটা ঠুকরে খাচ্ছিল সোনালী ধান। তুমি তাকিয়ে ছিলে আমার চোখে। হঠাৎ হাত বাড়িয়ে তুমি অস্ফুট বললে- ‘তোমার হাত ছুঁতে চাই’।
আমি অবাক চেয়ে বললাম, ‘শুধুই ছুঁতে চাও, নাকি ধরতে’?
- ‘ছুঁতে’।
- ‘ধরতে না চাইলে ছুঁয়ো না কিন্তু’।
- ‘কেন’?
- ‘ছুঁয়ে দিলে ভয় হয় যে’?
- ‘কিসের ভয়’?
- ‘তখন মন কেমন করবে। ধরে রাখতে ইচ্ছে হবে যে’!
- ‘ইচ্ছে হলে ধরে রাখবে’।
- ‘কিন্তু তুমি যে ধরতে চাওনা, শুধুই ছুঁয়ে দিতে চাও’।
তুমি ম্লান চোখে তাকালে আলপথে নুয়ে পড়া সোনালী ধানের শীষে। সেখানে ধবধবে সাদা পালকের পায়রাটা টুকটুক খুঁটে খাচ্ছে ধান। তুমি আবার চোখ ফিরিয়ে উদাস তাকালে আমার চোখে। বললে- ‘তাতে কি? তুমি ধরে রাখবে’!
- ‘একা একাতো ধরে রাখা যায় না’।
- ‘চাইলেই যায়’।
- ‘নাহ। একা চাইলে ছুঁয়ে দেয়া যায় কিন্তু একা চাইলে ধরে রাখা যায়না’।
- ‘তাহলে’?
- ‘ধরে রাখতে চাইলে দুটো হাতকেই পরস্পরকে ধরে রাখতে হয়, শক্ত করে’।
তুমি হঠাৎ চুপ করে রইলে। তারপর তোমার বাড়িয়ে দেয়া হাতখানা সরিয়ে নিলে।
আমার হাতের উল্টোপিঠের কোষগুলো কেমন দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিস্তেজ হয়ে গেলো। ওরা তোমার স্পর্শের অপেক্ষায় উন্মুখ হয়ে ছিল।
তুমি এলোমেলো পায়ে উঠে দাঁড়ালে। তারপর আলতো হেঁটে চলে গেলে সরু আলপথ ধরে। সেখানে লাল সূর্যটা ডুবে যাচ্ছে।
তোমার পায়ের শব্দে সোনালী ধান ফেলে উড়ে গেলো ধবধবে সাদা পায়রাটা। ডুবে যেতে থাকা সূর্যের ম্লান আলোয় তুমি ক্রমশই ছায়ামূর্তি হয়ে সরে যাচ্ছো দূরে। আরো দূরে। বহুদূরে।
আমার চোখের বাইরে।
সেখানে কেবল পড়ে ছিল আধখাওয়া উচ্ছিষ্ট কয়েকটা ধান। উড়ে যাওয়া পায়রার ঝরে যাওয়া বিবর্ণ এক রুগ্ন পালক।
আর?
আর আমার বুকের ভেতর কেমন অদ্ভুত এক কান্না। কিংবা ছুঁয়ে যাওয়া অজানা এক ‘না-ছোঁয়া’।
আচ্ছা, '‘সবাই কেবল ছুঁয়ে যেতে চায়, ধরে রাখতে চায়না কেন’'?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।