আমার ছোটআপুর বিয়ে হয়েছে খুলনার ফুলতলায়। দুলাভাই বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করেন। সেই সুবাদে আপু-দুলাভাই খুলনা রেল কলোনিতে বাস করেন।
গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে আপুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে এক মাস থাকার পর বাসায় ফেরার জন্য মনটা ছটফট করছিল।
তাই আপা-দুলাভাইয়ের শত নিষেধ শর্তেও ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিলাম।
কিছুদিন আগে দুলাভাইকে বাসায় ফেরার কথা বললে আমাকে একটা পাস দিতে পারতো। তাহলে আমাকে কোনো টিকেট কাটা লাগতো না। ফৃ চলে যেতে পারতাম। আমি ফৃর আশা না করে টিকেট কাউন্টার থেকে প্রথম শ্রেণীর একটা টিকেট কাটলাম।
কিন্তু ট্রেনে ওঠার পর বাধলো বিপত্তি।
আমার রুমে চারটা সিট ছিল। দুইটা উপরে, দুইটা নিচে। উপরের সিট দুইটা ফাকা থাকলেও আমার সিটে একজন শুয়ে ছিল। হয়তো সে বেশ কান্ত।
তাই ট্রেনে উঠেই ভাবলাম, ঘুমিয়ে পড়েছে। অন্য যে সিটটা ছিল সেটার অবস্থা বেশ খারাপ। সিটের কভার ছিড়ে তুলা বের হয়ে ছিল। তাই ওটাতে বসার কথা ভাবছিলাম না।
আমার সিটে যে শুয়ে ছিল তাকে জাগাতে হবে।
কিন্তু কাজটা কিভাবে করবো তা বুঝতে পারছিলাম না। কারণ আমার সিটে যে শুয়ে ছিল সে একটি মেয়ে। তার শরীরে হাত দিয়ে ডাকা তো সম্ভব নয়। পুরুষ হলে পাছার ওপর কষে একটা চড় মারতাম।
মেয়েটিকে দুই-তিনবার ডাক দিলাম।
এই যে শুনছেন, এটা আমার সিট। দয়া করে ছেড়ে দিন।
এতে কাজ হলো না।
হঠাৎ মাথায় একটা কুবুদ্ধি এলো। ট্রেনের ক্যান্টিন থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে আনলাম।
যদিও আমার সিগারেট খাওয়ার কোনো অভ্যাস নেই তবুও মেয়েটিকে ওঠানোর জন্য সিগারেটটি মুখে নিলাম। তারপর চোখ বন্ধ করে দিলাম এক টান। এরপর সিগারেটের ধোয়ার কু-লী ছেড়ে দিলাম মেয়েটির মুখের ওপর।
দুই-তিনবার দিতেই কাজ হয়ে গেল। মেয়েটি হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো।
আমি জানি, অধিকাংশ মেয়েই ধূমপান পছন্দ করে না। তাই কাজটি করে আমি বেশ বিব্রত বোধ করছিলাম। মেয়েটির দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিলাম না।
মেয়েটি লজ্জিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করলো, দাদা, এটা বুঝি আপনার সিট?
আমি মাথা নেড়ে জানালাম।
এরপর মেয়েটি দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো, আপনি কোথায় যাবেন?
একটু গম্ভীর হয়ে বললাম, ঢাকা।
আমার কথা শোনার পর মেয়েটি বেশ খুশি হলো। হাসি মুখে বললো, তাহলে তো খুবই ভালো। আমিও ঢাকা যাবো। এতো সময় নিজেকে বেশ একা লাগছিল। যাত্রাপথে সঙ্গী না হলে কি ভালো লাগে বলুন? কথা বলার জন্যও তো কোনো মানুষের প্রয়োজন।
তো দাদা, এই সিটটি বুঝি আপনার?
আমি মেয়েটির দিকে এবার না তাকিয়েই বললাম, হ্যা।
মেয়েটি তখন বললো, আসলে আমর সিট ওই পাশেরটাতে। কিন্তু সিটটি তেমন ভালো নয়। তাই আপনার সিটে এসেছিলাম। আপনি আপনার সিটে বসুন।
আমি আমার সিটে যাচ্ছি। এ কথা বলেই মেয়েটি উঠে দাড়ালো।
ভদ্রতার খাতিরে তখন বললাম, না না, ঠিক আছে। আপনি বসুন। আপনার কোনো সমস্যা না থকালে চলুন দুজনে এক সিটে বসেই যাই যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে।
ভেবেছিলাম আমার প্রস্তাবটি মেয়েটি রাখবে না। কিন্তু সে আমাকে অবাক করে দিয়ে আবারো আমার সিটে বসলো। তার পাশে বসে যাওয়ার জন্য জায়গা করে দিল।
মেয়েটির ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ভাবলাম, মেয়েটি অবশ্যই কোনো রুচিশীল উচ্চ বংশের।
তা না হলে যার মুখের সামনে সিগারেটের ধোয়া ছাড়লাম আর সে আমার পাশে বসে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেল! তাও আবার একই সিটে। একটি অচেনা যুবতী মেয়ের সঙ্গে পাশাপাশি!
সাত-পাচ না ভেবে আমিও মেয়েটির পাশে বসে পড়লাম। কথা বলার ফাকে মেয়েটিকে ভালো করে দেখে নিলাম। চেহারাটা আকর্ষণীয়। মনে হলো যে কোনো ব্যক্তিকে প্রেমের ফাদে ফেলার মতো ক্ষমতা আছে।
আমার অন্তরে একটা মৃদু ভূমিকম্প অনুভব করলাম। মেয়েটিকে কাছে পাওয়ার জন্য তীব্র বাসনা জাগলো।
এ পর্যন্ত তো কতো মেয়েই দেখলাম, কতো মেয়ের সঙ্গে প্রেমের খেলা খেললাম। কিন্তু কোনো মেয়ের জন্য এতোটা দুর্বলতা অনুভব করিনি যেটা এক পলকেই এ মেয়েটির প্রতি অনুভব করেছি। কেন যেন মেয়েটিকে ছুয়ে দেখতে খুব ইচ্ছা করছিল, ওর বুকে মাথা রাখতে, চুলগুলো বিলি কেটে দিতে।
ঠোটের সঙ্গে ঠোট রাখতে খুব ইচ্ছা করছিল। কিন্তু লজ্জা, ভয়, সংকোচে কিছু বলতে পারছিলাম না।
আমাকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি আবার প্রশ্ন করলো, দাদা কি খুবই কান্ত?
বললাম, কেন বলুন তো?
না, এমনিতেই বললাম আর কি! চুপচাপ বসে আছেন তো, তাই।
আমি আপনার অসুবিধার কথা চিন্তা করেই চুপচাপ বসে আছি।
আমার অসুবিধা! মেয়েটি খুব বিস্মিত ভঙ্গিতে বললো কথাটি।
আমার আবার কিসের অসুবিধা?
এবার সরাসরি মেয়েটির চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, অধিকাংশ মেয়েই বেশি কথা বলা পছন্দ করে না তো, তাই।
দাদা, আমি যে এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেউ যদি আমার সামনে চুপ হয়ে বসে থাকে তাহলে আমার খুব খারাপ লাগে। আমার সামনে তো চুপচাপ বসে থাকতে পারবেন না। এবার বলুন আপনার নাম কি? কোথায় থাকেন, কি করেন? কয় ভাইবোন? এক নিঃশ্বাসে বললো কথাগুলো।
আমিও ঝটপট উত্তর দিলাম। নাম অভি, বাসা ঢাকায়, অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র। মা-বাবার আদরের ছোট ছেলে। আপুর বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। এবার আপনার পরিচয়টুকু বলুন।
আমি আপনার চেয়ে ছোট। তাই আমাকে আপনি না বলে তুমি বলে সম্বোধন করলে খুশি হবো। আমি এবার ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী। নাম বৃষ্টি রায়।
যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি? আমি বললাম।
আবারও আপনি।
সরি।
ইটস ওকে। কি বলবেন বলুন।
আমি তখন আমতা আমতা করে বললাম, তুমি কি হিন্দু?
জি হ্যা।
আপনি কি ভেবেছিলেন?
তেমন কিছু না।
এরপর আমার কাছে জানতে চাইলো আমি মুসলিম, না হিন্দু।
আমি যে খাটি মুসলিম পরিবারের ছেলে তা তাকে জানিয়ে দিলাম। ইনিয়ে-বিনিয়ে এটাও বললাম, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। কথায় কথায় বৃষ্টির রূপের প্রশংসা করতে লাগলাম।
আপন করে কাছে পেতে চাইলাম।
বৃষ্টিও আমাকে ভালোবাসার কথা শোনালো। তার কি পছন্দ অপছন্দ সেটাও বললো।
ট্রেন চলছিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা দুজন দুজনার আপন হয়ে গেলাম।
বৃষ্টি গোলাপি রঙের একটি থৃ পিস পরে ছিল। ট্রেনের ঝাকুনিতে ওর বুকের ওড়নাটা পড়ে যাচ্ছিল।
তখন ওর দিকে তাকিয়ে আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো। বৃষ্টির স্তন দুটো যেন কাপড়ের তলায় থাকতে চাচ্ছিল না। কাপড় ছিড়ে বাইরে বের হয়ে আসতে চাইছিল।
নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলাম না। বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরলাম। একটা হাত চালান করলাম ওর বুকের ওপর।
ও তখন কাতর স্বরে বললো, প্লিজ, আমাকে ছেড়ে দাও। যে সত্যিকারের প্রেমিক সে তার প্রেমকে কখনো অপবিত্র করে না।
আমাকে পেতে হলে আগে বিয়ে করতে হবে। তারপর তোমার যা ইচ্ছা করো। প্লিজ, দোহাই তোমার, এখন আমাকে ছেড়ে দাও।
বৃষ্টিকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা অনুতপ্ত হলাম।
এরপর সারা রাত বৃষ্টির সঙ্গে থাকলাম।
তবে তাকে আর একটিবারের জন্যও ছুইনি।
ঢাকা পৌছালাম ভোরে। বৃষ্টি যাওয়ার আগে আমাকে ওর মোবাইল নাম্বার দিয়ে গেল আর জানালো, অবশ্যই আমি যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করি।
জীবনে আমি অনেক মানুষকে বিদায় দিয়েছি। কিন্তু কখনো অশ্রুসিক্ত হইনি।
এই প্রথম হলাম।
ওকে বিদায় জানিয়ে আমি একটা রিকশা ঠিক করলাম। তারপর রওনা দিলাম নিজ গন্তব্যে।
রিকশায় বসে প্ল্যান করলাম বৃষ্টিকে কিভাবে বিয়ে করবো, আমাদের সংসারটা কেমন হবে, কয়টি ছেলে-মেয়ে থাকবে, ওকে বিয়ের দিন কি গিফট করবো ইত্যাদি।
বাসায় পৌছেই বৃষ্টিকে ফোন করলাম।
ও ঠিকমতো পৌছালো কি না জানার জন্য।
হ্যা, ও ঠিকমতোই পৌছেছিল। তবে বৃষ্টির কথা শোনার পর আমার সব স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেল। হৃদয়টা কাচের মতো ভেঙে গেল।
ফোনে বৃষ্টি বলেছিল, শুনুন মিস্টার অভি, আপনি খুব বোকা।
আমার জীবনে এমন মানুষ দেখিনি। তা না হলে ফের আমাকে ফোন করতেন না।
তুমি একি বলছ বৃষ্টি। আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। বিয়ে করতে চাই।
আর তুমিই তো যাওয়ার সময় মোবাইল নাম্বার দিয়ে জানালে আমি যেন অবশ্যই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করি।
হ্যা, বলেছিলাম। কারণ আপনি কতো বড় লুচ্চা তা বলার জন্য। আমি পুরুষদের ভালো করেই চিনি। বেশির ভাগ পুরষই পাগলা কুকুরের মতো।
কাচা মাংসের ঘ্রাণ পেলে কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আপনিও জ্ঞানহীন হয়ে পড়েছিলেন। নিজের বুদ্ধির জোরে বেচে গিয়েছি। প্রেমের ওই অভিনয়টুকু না করলে ঠিকমতো বাসায় ফিরতে পারতাম না। আশা করছি, আর কখনো আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।
গুড বাই।
এ কথা বলেই ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।