মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য—মানবতার এই বাণী আজ অনেক ক্ষেত্রেই ভূলুণ্ঠিত। ট্রেনে পাথর ছুড়ে মানুষ হত্যা সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়। আনিসুল হক তাঁর ‘প্রীতির জন্য ভালোবাসা’ কলামে (প্রথম আলোতে প্রকাশিত) যথার্থই লিখেছেন, ‘ঈশপ কি স্বপ্নেও ভাবতে পারতেন, বালকের দল পুকুরে ঢিল ছুড়ছে না; তারা ঢিল ছুড়ছে চলন্ত ট্রেনে, যার ভেতরে আছে মানুষ; টার্গেট এখানে ব্যাঙ নয়, মানুষ। মরলে এখানে সাপ, ব্যাঙ, মাছ নয়, মরবে মানুষ। ’ কথাগুলো কতটা কষ্টদায়ক, তা উপলব্ধি করা যায়।
একটি প্রাণ অনেক বেশি মূল্যবান। ট্রেনে ছুড়ে মারা পাথরে প্রাণ হারালেন প্রীতি দাশ। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই শেষ হয়ে গেল
তাঁর প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন। একজন স্বামী হারালেন তাঁর চিরদিনের সাথিকে। মানুষরূপী মনুষ্যত্ববিহীন মানুষগুলো (ট্রেনে পাথর ছোড়াকারী) কি এই কথাগুলো একটু ভেবেছিল?
সত্যিকার অর্থে, যাদের বিবেকবুদ্ধি লোপ পেয়েছে, যারা ভালো-মন্দ বিচার করার ক্ষমতা হারিয়েছে, তারাই কেবল ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার মতো দানবীয় কাজ করতে পারে।
যা দারুণ বেদনাদায়ক। এই ধরনের ঘটনা যাত্রীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকিস্বরূপ ও উদ্বেগজনক। যার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।
ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার মতো ঘৃণ্য ঘটনা যাতে দ্বিতীয়বার আর না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজন দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে চরম শাস্তি দেওয়া। তবে শুধু আইন প্রয়োগ করে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করা যাবে না।
প্রয়োজন সচেতনতাবোধ তৈরি হওয়া। আর সে জন্য প্রয়োজন কিছু পদক্ষেপ। বিভিন্ন আকারের লিফলেট ও সাইনবোর্ড লাগাতে হবে সর্বত্র। যেখানে ট্রেনে পাথর ছুড়ে না মারার আহ্বান জানানো হবে। সেই সঙ্গে গণমাধ্যমগুলোকেও এই প্রচারের (ট্রেনে পাথর ছুড়ে না মারা) দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রয়োজনে পাঠ্যপুস্তকেও এই ধরনের কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; যাতে শিশুদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ে ছোটকাল থেকে। কেননা, এরাই হবে একদিন জাতির কর্ণধার।
এদিকে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এক লাখ প্রচারপত্র বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রচারণায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে এবং ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা পুরোপুরি বন্ধ করতে সবার অংশগ্রহণ ও সদিচ্ছা প্রদর্শন প্রয়োজন নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থে।
সঞ্জয় কুমার ভৌমিক
শ্রীমঙ্গল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।