ছোটবেলায় যখন পত্রিকায় দেখতাম “অমুক আর তমুক দলের মধ্যে সংঘর্ষে,এতজন আহত” তখন ভাবতাম তারা কেন মারামারি করে… কিভাবে করে?? তারা কি আলাদা ড্রেস পরে মারামারি করতে নামে?? কে কাকে মারছে কিভাবে বুঝে তারা??? আস্তে আস্তে যত বেড়ে উঠতে লাগলাম ততই ব্যাপারগুলো আরও ব্যপকভাবে চোঁখে ধরা পরতে লাগত… তবুও ভাবতাম। । তাদের কি আর কোন কাজ নাই?? কেন মারামারি করে আহত নিহত হয়? পড়াশুোনার খাতিরে এখন বাসার বাহিরে থাকতে হয়,তাই এখন অনেক কিছুই বুঝি,বুঝতে হয়,বুঝে চলতে হয় । যাই হোক,কিভাবে দেশের সাধারণ আমজনতা রাজনৈতিক মাঠের দাবার গুটি হয়ে উঠে তা নিয়ে আমার ধারাবাহিক আলোচনার আজ প্রথম পর্বে থাকছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে………। ।
জ্ঞান আহরনের মহান উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিস্ঠানে গিয়ে কিভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র রাজনীতির ফাঁদে পড়ে রাজনৈতিক কর্মী হয়ে উঠে,আসুন দেখা যাক………।
কেস স্টাডি-০১
ফরহাদ্………। সদ্দ্য স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে ভর্তি হয়েছে………। সদা উচ্ছলতা,প্রাণচাঞ্চলতায় মাতিয়ে রাখে ক্যাম্পাস……। ক্লাসের সবাই তার বন্ধু…………ভালোই জনপ্রিয়তাই তার।
। কিন্তু একদিন ক্লাসে আসে ক্ষমতাশীল দলের কিছু বড় ভাই …। তারা এসে সেই ক্ষমতাশীল দলের কমিঠি ঘোষণা করলো যেখানে ফরহাদ সহ আরও অনেকের নাম……। । কিছু না করেই ফরহাদ হয়ে গেল সেই দলের কর্মী……।
এরপর ফরহাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ক্লাস থেকে নিয়ে যাওয়া হত…… টঙে দাড়িয়ে আডডা দিতে হত,কখনোবা পালাতে না পারলে মিছিলে যোগ দিতে হতো……। । আর প্রতিবাদের চেষ্টা করলে চোখঁ রাঙ্গানিতো আছেই……। । এভাবে সবার প্রিয় ফরহাদ হয়ে গেল বিশেষ কোন দলের…।
। আমজনতা থেকে রাজনৈতিক কর্মী।
কেস স্টাডি-০২
নাফীস………ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যখন বরিশাল মেডিকেলে চান্স পেল,তখন তার পিতা মাতা খুশি হওায়র সাথে সাথে উথকন্ঠিত ও হয়েছিল ছেলেকে নিয়ে……চটটগ্রাম থেকে এত দূরে গিয়ে ছেলে কোথায় থাকবে,কিভাবে থাকবে চিন্তা করে তারা দুশ্চিন্তায় থাকতো…। বরিশালে তাদের কোন আত্তীয় নেই যে,তাকে দেখে রাখবে…। ।
দুই একদিনের মধ্যে বরিশাল মেডিকেল থেকে তাদের কাছে ফোন আসতে শুরু করল,যে ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করবেন না,আমরা আছি…। । একদিন দুইজন বাসায় আসল। তারা আসলো নাফিস যে কোচিং এ ক্লাস করেছিল সেখান থেকে…। ।
তারা নাফিসকে দেখে রাখবে,কোন সমস্যা হবে না……ইত্যাদি ইত্যাদি আশ্বাস দিয়ে গেল নাফিসের পিতামাতাকে……। নাফিসের আব্বার আবার রাজনীতিকে অনেক ভয়… চাননা ছেলে এইসবে জড়াক…। সেই ভাইয়েরা তাকে আশ্বাস দিল এইরকম কিছু ঘটবে না,তারা সবাই সাধারন ছাত্র……। যাই হক,একদিন নাফিস বরিশাল মেডিকেল গেল…কিছু দিনের মধ্যে বুঝতে পারল তার সব সহপাঠী এক না… তাদের মধ্যে বিরাজমান অদৃশ্য এক দেয়াল…। তারা কিছু একসাথে,অন্যরা আলাদা… কিছু বড়ভাই তাদের দেখলে কথা বলে,খবর নেয়… আর কিছু ভাই দেখলে দূরে দূরেই থাকে…।
কয়েকদিনের মধ্যে বুঝতে পারল যে,সে আর কিছুই নয় বরং এক রাজনৈতিক দলের ব্যানারে জনশক্তি………। আস্তে আস্তে তাকে অনেক কিছুই বুঝানো হল,তাদের আদর্শ ছাড়া আর সব আদর্শ বস্তাপচা,দেশ ও দশের জন্য তারাই একমাত্র দল যারা কাজ করছে… ইত্যাদি ইত্যাদি ………। । দেখতে দেখতে বাবা মায়ের আদরের নাফিস হয়ে উঠল এক রাজনৈতিক দলের খেলার কার্ড………। ।
সাধারন থেকে রাজনৈতিক কর্মী…। কিছু না করেও বলির পাঠা………।
## বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিস্ঠানের আজ এই অবস্থা। আপনাকে যদি হলে থাকতে হয়,কোন না কোন রাজনৈতিক দলের নামে উঠতে হবে…। নিরপেক্ষ বলে কোন রুম নেই… প্রসাশন ও নিয়ন্ত্রণ করে সরকারী দল,আপনি কোন ভাবেই এটাকে পাস কাটাতে পারবেন না…।
আপনি কিছু করেন আর নাই করেন,হলে থাকলে আপনি সেইদলের কর্মী বলে গন্য হবেন… আপনি হয়ে যাবেন রাজনৈতিক দলের কর্মী …………। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।