আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমজনতার শেষ ভরসা যখন গণমাধ্যম

zahidmedia@gmail.com

‘বেশ কিছুদিন আগে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের দুর্ঘম এলাকার একটি ঘটনা দেশব্যাপী আলোচানায় ছিল। সংবাদপত্রে দেখেছি সেখানে ধর্ষককে ছেড়ে দিয়ে ফতোয়াবাজ সমাজপতিরা ধর্ষিতাকে ১০১ ও তার বৃদ্ধা মাকে ১০ দোররা মেরে রক্তাক্ত করেছে। পরদিন নির্যাতিতরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েও আতংকে ছিল। এ ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা ফতোয়াবাজদের আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বসুরহাট রূপালী চত্ত্বরে ধর্ষকের পে প্রতিবাদ সমাবেশ করে এবং সাংবাদিকদের হুমকি দেন। ’- সেদিনের সেই হুমকির ঘটনায় মফস্বলের সেই সাংবাদিকরা কিন্তু ধমে যাননি।

নিরন্তর লেখনি চালিয়ে গিয়েছেন ধর্ষিতার প। ে শেষ পর্যন্ত দুর্ঘম লোকালয়ের সেই ঘটনা জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু ছিল। স্থানীয় সে হুমকিদাতারা মুখ লুকানোর জায়গা পাননি। বিচার পেয়েছেন ধর্ষিতা। গ্রেপ্তার হযেছে নির্যাতানকরীরা।

সাংবাদিকদের দৃঢ়তা ও সাহসের কারণেই একজন নির্যাতিত পরিবার বিচার পেলেন। বিচারের বানী সেখানে নিরবে কাঁদেনি। এভাবেই গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের ুদ্র জনগোষ্ঠি তাদের আশা-আকাংখা বিশাল জনগোষ্ঠির সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে। আর যেসব কলম সৈনিক ুদ্র জনগোষ্ঠির সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না নিয়ে কাজ করছে তারা শুধু আত্মতৃপ্তি নিয়ে বেঁচে আছে। তাদের মনে আছে সুখ।

অর্থ-বিত্তের মালিক না হলেও তাদের রয়েছে আত্মসম্মান। সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো শক্তি ও সাহাস তাদের রয়েছে। সমাজ তাদের প্রতি সব সময়ই বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়। সত্যি যারা প্রকৃত নিউজম্যান তাদের প্রতি আমজনতার সব সময়ই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রয়েছে। সেই ভালোবাসার শক্তিতে সাংবাদিকের কলম বেঁচে থাকে অনন্তকাল।

আমিও একসময় প্রান্তে সাংবাদিকতা করতাম। পিছঢালা পথের শেষে সবসময়ই সংবাদের গন্ধ খুঁজেছি। কষ্টের অনলে পোড়া মানুষের পেছেনে ছুটতে ছুটতে নিজের দুঃখকে একেবারেই হারিয়ে পেলেছিলাম। নিরন্ন মানুষের কষ্টের কাহিনী যতই তুলে ধরেছি ততই নিজের শরীরটার ভেতরে কষ্ট-বেদনা গুলো নিরবে পুষেছি। কাহিনী লিখতে লিখতে নিজেও কয়েববার পত্রিকার সংবাদ হয়েছিলাম।

জলকাদা ছেড়ে মফস্বলের একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পদনাও করেছি অন্তত ৫টি বছর। প্রান্ত ছেড়েছি মাস দুয়েক হলো। এখনো শরীর থেকে প্রান্তের গন্ধ যায়নি। খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের লোনা গন্ধ এখনো শরীরে বয়ে বেড়ায়। তবে এখন আর সেই মানুষগুলোকে নিয়ে ভাবনা কিংবা দু’চার লাইল লেখার সুযোগ ও সময় পায় না।

রাত পেরিয়ে সকাল হলেই ছুটতে হয় সময়ের পেছনে। সময়ের পিছে ছুটতে ছুটতে একেবারেই কান্ত শ্রান্ত। ইট পাথরের নগরীতে নিজকে বড়ই অসহায় মনে হয়। সেদিন অনেকদিন পর রাত ১টায় ব্যলকনিতে গেলাম। শ্বেত-শুভ্র থালার মত চাঁদটিকে মুগ্ধ হয়ে দেখতে দেখতে আর তার স্নিদ্ধ হাসি গায়ে মাখতে মাখতে ফিরে গিয়েছিলাম অতীতে।

স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে প্রান্তের মানুষ গুলোর কাছে যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। তবে যখন মফস্বলের সে দুরন্ত সাহসী সাংবাদিকদের লেখনিতে দুঃখী মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায়, প্রান্তের সেই সাংবাদিকরা জোতদারদের রক্তচুতে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে জনতার দাবি আদায়ে বলিষ্ট হচ্ছে; তখন সুখে শরীরটাতে শিহরণ জাগে। আমিও তখন চলে যায় প্রান্তের মানুষ গুলোর কাতারে। সেই কলম সৈনিকদের কাতারে যাওয়ার সাধ্য হয়তো আমার এখনো হয়নি।

কিন্তু যখন তাঁরা ফোন কিংবা মেইলে একটু খবর নেন তখন ইট-পাথরের এ নিষ্ঠর নগরীতে একটু আশান্তিত হই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পায়। তাদের পরসে ছুটের চলার ইচ্ছে থাকে অনেক দূর। স্বপ্ন দেখার সাহস খুঁজে পায়। মনে মনে স্বপ্নও বাঁধি।

মানুষের শেষ ভরসা গণমাধ্যম। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে সংবাদকর্মী জনতার ভরসা পূরণ করবে তার জীবনে সাফল্য ধরা দেবে। হাতে মুঠোয় সাফল্য আসবেই। কোম্পানীগঞ্জের সেই ঘটানাটির মতো অনেক ঘটনা মিডিয়ায় আসেছে। বিচারও হচ্ছে।

দুঃখী মানুষের পরম বন্ধু সাংবাদিকরাও সফলতা পাচ্ছে। তারা রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা কিংবা জোতদারদের করুণার পাত্র হচ্ছে না। তাদের বিজয় দেখছে গোটা জাতি। এভাবেই জয় হয় আমজনতার, জয় হয় গণমাধ্যমের।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।