আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পঃ লিমি (চতুর্থ পর্ব)

মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না।

ছয়ঃ সেদিনের পর থেকে অমি’র লিরাকে কেমন জানি লাগে-নতুন করে নতুন ভাবে। মনে হয় ভালবেসে ফেলেছে। লিরা কি বেসেছে ভাল? লিরার জন্যে মন কেমন করে মাঝে মাঝে।

সেদিনের হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। লিরা হয়ত স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে সবকিছু কিন্তু অমি নিতে পারে না। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই দেখা হয়েছে লিরার সাথে। ওরা ক’দিন আগে ষ্টার সিনেপ্লেক্সএ গিয়েছিল মুভি দেখতে সেদিনও প্রায় সারাটাক্ষন লিরার হাতটা ধরে বসেছিল। এখন নিত্যই দেখা হয় ওদের, আড্ডা হয়, একসাথে খেতে যাওয়া হয়, একসাথে বেড়াতে যাওয়া হয়, অপেক্ষা করা হয়।

সেদিন বিকেল বেলা নূরের সাথে বসেছিল অমি। নূর ক’দিন থেকেই বলছিল তুইতো প্রেমে পড়ে গেছিস। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এটা ভাল হচ্ছে না। তুই এমন করে মজে যাস না দোস্ত। ওরা অনেক বেপরোয়া, ওরা অনেক বেশি আধুনিক, ওদের ইমোশন কম—দেখবি ঠিক সময় এলে ও চলে যাবে।

আমিতো তোকে চিনি। শেষে তুই কষ্ট পাবি। তার থেকে এখন থেকেই দূরে দূরে থাকার চেষ্টা কর। কিন্তু কে শুনে কার কথা। নূর অমিকে বলে-তুই এক কাজ কর মেয়েটার সাথে খোলামেলা আলাপ কর।

আলাপে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আর তুই না পারলে আমি জিজ্ঞেস করতে পারি। আমারতো জিজ্ঞেস করতে কোন সমস্যা নেই। অমি না করে। বলে যা করার সে নিজেই করবে।

বিকেল বেলা ওরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল। আজকাল নূর অমিকে বেশি একটা পায় না। ঠিক তক্ষুনি লিরা ক্যাম্পাসে ঢুকল। ওদেরকে খুঁজে পেয়েছে। হাই তোমরা কেমন আছ? লিরা বলে।

জি ম্যাম আমরা ভাল আছি-নূর বলে। তুমি কেমন আছ? অনেকদিন এদিকে আস না। তা আসা হয় না। আর তোমার বন্ধুওতো আমাকে নিয়ে আসে না। অমি বলে কি ব্যাপার তুমি যে আমাকে বলনি আসবে।

একটু সারপ্রাইজ দিলাম। কেন খুশি হওনি মনে হয়। আরে খুশি না হওয়ার কি আছে। চল তাহলে ক্যান্টিনের দিকে যাই-নূর বলে। তার আগে আমার একটা জিনিস ছিল অমিকে দেওয়ার।

এই বলে লিরা ব্যাগ থেকে একটা প্যাকেট বের করে অমিকে দিল। কিন্তু এখন খুলতে পারবে না। আমি ফিরে যাওয়ার পর খুলবে। সরি নূর তোমার জন্যে কিছু আনা হয়নি। দেখা হবে এটাইতো ভাবিনি।

কিন্তু তাতে কি। আজকে আমি তোমাদের বিকেলের নাস্তা করাব। জানি জানি আমি কে যে আমার জন্যে কিছু নিয়ে আসবে। ওকে আজ মাফ করা গেল-পরের বার মাফ করা হবে না। এই বলে ওরা ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়াল।

প্রায় রাত ৮টা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে লিরা ফিরে গেল। হলে ফিরতে ফিরতে নূর বলছিল-অমি তুই ঠিক করছিস না। লিরার সাথে এক্ষুনি কথা বলা দরকার। এমনতো হতে পারে লিরা তোর সাথে তার খারাপ লাগার সময়গুলো পার করছে। এভাবে হয় না।

বলে ওরা অমির রুমে ফিরল। অমির তর সইছিল না লিরার গিফটটা দেখার জন্য। সে খুলল। কি চমতকার একটা হাত ঘড়ি! অমি অবাক হল। দামও কম হবে না মনে হয়।

নূরকে দেখালো। আসলেই অনেক সুন্দর-নূর বলল। মেয়েটার রুচির প্রশংসা করতে হয়। ওদের কথা আর সেদিন আগাল না। সাতঃ[/sb কোন এক শুভ দিনে অমি আর লিরা গেছে আহসান মঞ্জিল যাদুঘর দেখতে।

অমি এই যাদুঘরটা খুব পছন্দ করে। লিরাকে দেখাতে নিয়ে এসেছে। চমতকার করে সাজানো সবকিছু। প্রবেশ পথ, হাঁটার রাস্তা সব কিছু অনেক ভাল লাগে। ওরা ২জন ভিতরে প্রবেশ করল।

কথার ফাঁকে লিরা বলল-শোন আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি দেশে। আমার কাজ প্রায় শেষ হয়ে এল। অমি আকাশ থেকে পড়ল যেন। এই মেয়ে বলে কি! আর কি কিছু বলবে না। তারপর-অমি জিজ্ঞেস করে।

তার আবার পর কি? আমি আর ১মাস পর ফিরে যাচ্ছি দেশে। তার আগে আরও কিছু কাজ আছে নট রিলেটেড টু রিসার্স-আমার জীবনের জন্যে কাজ। সেগুলো শেষ করে তবে ফিরে যাব। আর তোমার সাথেওতো অনেক কথা বলা বাকী। আর শোন আজকে এই বিষয়ে আর কথা বলব না।

অন্য একদিন বিস্তারিত আলাপ হবে। এখন চল ঘুরে ফিরে দেখি। লিরার এরকম কথায় অমি কিছুই বুঝতে পারল না। এত রহস্য করে বললে কেমন করে বুঝবে। তবে এটুকু বুঝতে অসুবিধা হল না যে লিরাও তাদের বিষয়্টা নিয়ে ভাবছে।

যাই হউক এসব নিয়ে আজ না ভেবে আরেকদিন বিস্তারিত আলাপ করতেই হবে। চল এক কাজ করি। আজকে আমাদের বাসায় তোমাকে নিয়ে যাই। যাদিও আমাদের বাড়ি ঢাকা থেকে একটু দূরে কিন্তু মনে হয়না যে জয়দেবপুর যেতে বেশী সময় লাগবে। বাড়িতে মা-বাবা-সুতপা আছে।

আমার ছোট বোনটা খুব ভাল। তুমিতো জানই সব। চলো যাওয়া যেতে পারে। না আজ থাক-লিরা বলে। আমার কিছু কাজ বাকী।

ছু্টির দিনেইতো একটু একটু করে করতে হয় সবকিছু। তারচেয়ে বরং চল আজকে আমার বাসায়। আমি রান্না করব যা কিছু পারি তারপর আমরা ২জন মিলে খাব। যদি তুমি আমার রান্না খেতে পার। আচ্ছা ঠিক আছে চল।

আমি কতদিন ভাল-মন্দ খাই না। হলে থাকলে কি আর ভাল খাওয়া হয় নাকি। আটঃ কদিন পর অমি ভারতের ভিসার জন্যে আবেদন করল। নূর জিজ্ঞেস করল কেন করছে। অমি বলেছে লিরা যখন চলে যাবে সেদিন লিরাকে কলকাতা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবে।

লিরাকে কিছুই বলা হবে না। একটা সারপ্রাইজ দেওয়া আর কি। তোর এই পাগলামী আমার ভাল লাগছে না। তুই সবকিছু ক্লিয়ার না করে এভাবে ওর পিছনে সময় নষ্ট করছিস আমার দেখে ভাল লাগছে না। প্লিজ এমন করে সময় নষ্ট করিস না।

তোকে মানাচ্ছে না ঠিক। ২দিনে ভিসা পেয়ে গেছে। আর মনে হয় ১৫ দিন পর লিরা চলে যাবে। লিরার সাথে এখনও কথা বলা হয়নি। কিভাবে শুরু করবে অমি বুঝতে পারে না।

একদিন বিকেলে ওরা ধানমন্ডি ৩২এ বংগবন্ধু যাদুঘরের সামনে লেকের পারে বসে কথা বলছিল। আজ অমি ঠিক করে এসেছে লিরাকে সব বলতে হবে। অমি শুরু করে। লিরা তুমি এভাবে চলে যেতে পার না। তুমি খুব ভাল করেই জান আমি তোমাকে পছন্দ করি।

শুধু পছন্দ নয় তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। বলতে পার ভালবাসা হয়ে গেছে। তুমি এমন করে নীরবে চলে যেতে পার না। লিরা মাথা নিচু করে বসেছিল। অমি আমি জানি সব।

আর আমি ঠিক আজকের দিনটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। কখন তোমার সাথে বিস্তারিত আলাপ করতে পারব। তোমাকে বুঝতে না পারার কিছু নেই। আমি নিজে যে ভাবিনি সেটাওতো নয়। কতদিন কতভাবে ভেবেছি, তোমাকে বলব বলে অনেক কিছু সাজিয়ে নিয়ে গিয়েও বলতে পারিনি।

তোমাকে প্রথম যেদিন দেখি সেদিনি আমার ভাল লেগে গেছিল। আর তাই আমি নিজে থেকেই এগিয়ে গেছিলাম। জানতো আমাকে অনেক সময় অনেক ছেলে প্রপোজ করেছে কিন্তু কাউকে তেমন করে ভাল লাগেনি। কিন্তু তুমি কিছুই করনি তাও তোমাকে ভাল লেগে গেল। আমি অনেক অনেক ভেবে দেখেছি তোমার আর আমার পথটা একেবারে আলাদা।

আমি একটু আউটগোয়িং আর তুমি ইনট্রুভার্ট, দেশে থাকতে পছন্দ কর, স্বপ্নও সীমিত। তাই বলে আমি তোমার জ্ঞান, পড়াশুনা, প্রজ্ঞা কোনকিছুকেই খাটো করে দেখছি না। এরকম ভেব না। দেখ আমি অনেক আউটগোয়িং বলেই যখন বুঝতে পারলাম বাংলাদেশে আমার রিলেটেড কাজ হচ্ছে দেরী করি নাই, চলে এসেছি। এখানে শেষ হলে অন্য কোন দেশে চলে যাব।

আমার গন্তব্য জানা নেই। আর তুমি তোমার গন্তব্য কি সুন্দর ঠিক করে রেখেছ। সাথে সাথে দেশের সীমারেখাতো আছেই, পরিবারের ব্যাপারতো আছেই, বাবা-মা রাজী হবার ব্যাপারতো আছেই। লিরা এক নিশ্বাসে সব বলে যায়। (শেষ পর্ব বাকী।

যারা মনযোগ দিয়ে পড়ছিলেন আর একটা পর্বের জন্যে অপেক্ষা করুন প্লিজ) ১ম পর্ব Click This Link ২য় পর্ব Click This Link ৩য় পর্ব Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।