একটা মেয়ের একটু কথা।
অপরের বিড়ম্বনা দেখে হাসি নাই এই রকম বীর নারী পুরুষ খুব কমই আছে ( কম কথাটা ভদ্রতা কৈরা বলসি আসলেই নাই- সমীকরণ এক)। আর আমি এই কমের মধ্যে পড়ি (সমীকরণ এক দ্রষ্টব্য)। ছেলেদের প্রধান বিড়ম্বনা সম্ভবত সখিনা কুলসুম ফুলিদের নাম মনে রাখতে না পারা। নাম তো দুরের কথা কণ্ঠই মনে থাকে না।
তাদের চোখে আর কানে সম্ভবত সমস্যা আছে (ভাইয়ারা কিছু মনে নিয়েন্না সত্য ইজ সত্য)। সবাইকে তাদের একরকমই লাগে। আর যার নাম মনে থাকে (অনেক রিহার্সেলের পর) তার বার্থডে ভুলে যায়! মেয়েরা আবার এই সব ব্যাপারে সাবধান। এককেজি মুরগির মাংসে কতটা এলাচি লাগবে থেকে শুরু করে পরিচিতদের নাম-ধাম. ঠিকানা, বার্থডে আর কে কখন কি বলসে সব মনে থাকে। এই ক্ষেত্রে ভাইয়ারা ধরা খায়।
কথা বলার সময বলতেই থাকে পরে ভুলে যায় কি বলসে। এইটা নিয়ে ভাবি/ হবু ভাবিদের সাথে নিয়মিত সংদীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। আর নিয়ম করে হারে। যাই হোক ম্যালা প্যাচাল পাড়সি (ইচ্ছা কৈরাই কিন্তু)। এবারে আসল কথায় আসি।
হ্যাঁ কথা হচ্ছিল বিড়ম্বনা নিয়ে। বাস্তব জীবন থেকে ধার করা কিছু বিড়ম্বনা ময় ঘটনা লিখতে ইচ্ছা হলো হঠাৎ করে।
১/
আমার ফুপাতো ভাইয়ের বিয়ের স্টোরি বলি। দীর্ঘ আট বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে তার ইচ্ছা হলো অনেক হৈসে এবার দেশে যাওয়া যাক (আসল ঘটনা বিয়ে করবেন)। পাঁচমাসের জন্যে দেশে আসলেন।
আমাদের সব কাজিনদের মধ্যে প্রথম বিয়ের ঘটনা। সবাই এক্সাইটেড। শুধু ফুপুর কথা জনি না। তিনি এসবের উর্দ্ধে চলে গিয়েছেন ভাইয়া প্রবাসে থাকা অবস্থাতেই। যাইহোক ভাইয়া বিয়ে করবেন এই কথাটা শোনার পরে রাস্তায়, শপিং এ, কলেজে সুন্দরী মেয়ে দেখলেই তাকায়া থাকতাম।
মেয়েদের দেখলেই কথা বলার চেষ্টা করতাম। খাতির জমিয়ে (এই ব্যাপারে আমার দক্ষতা নিয়া আমার পরিচিত কারো সন্দেহ নাই) ফোন নাম্বার নিতাম। নিজেরে ইভটিজার মনে হইতো তখন। ছেলে কাজিনরা বলতো তুই ছেলে হইলে মাইয়া পটানো কোম্পানির এমডি হইতি। বিশেষ দ্রষ্টব্য আমার ভাইয়া ঝিমকালা নামের বর্ণের অধিকারী।
একই সাথে তার মাইয়া পটানোর কোন হিস্টোরী নাই। কোন মেয়ের সাথে ভালো ভাবে কথাই বলতে পারতো না। খেয়াল রাখতে হইতো যে মাইয়া যেন আমার মতো ফাজিল না হয়। যাইহোক আমরা সব কাজিনরা তীব্র বিতর্ক লাগসিলাম যে ভাইয়াকে দুরে বিয়ে দেয়া হবে না কাছে। বড়রা ঠিক করলো যে দুরে বিয়ে হলে ভালো।
কারণ বৌ গোস্বা করে কথায় কথায় বাপের বাড়ি যাওয়ার হুমকি দিতে পারবে না। আমরা পরবর্তী তিনমাস বৌ দেখার জন্যে ময়মনসিংহ, রংপুর, পঞ্চগড়, সিলেট এসব যায়গায় মাইক্রো ভাড়া করে হৈ চৈ করতে করতে যেতাম আর চলে আসতাম। পিকনিক পিকনিক মনে হচ্ছিল। কিন্তু আসল কাজ হচ্ছিল না। মানে মেয়ে পছন্দ হচ্ছিল না।
যাইহোক দুরে বিয়ের সব আশায় জলাঞ্জলী দিয়ে ভাইয়াকে আমাদের জেলাতেই বিয়ে দেয়া হলো। উল্লেখ্য যে মেয়েটাকে আমিই প্রথমে রেকমেন্ড করেছিলাম। তো এনগেজমেন্ট হলো । একমাস পর বিয়ে হয়েছিল। তো বিয়ে হলো কাবিন টাবিন সব হলো।
বাসায় আসলাম বৌ নিয়ে। আমি আর আমার মতোই ফাজিল আমার এক কাজিন ভাইয়ার কানে কানে বললাম “ভাইয়া এটা কিছু হইলো? তুমি মাত্র একবার কবুল বলসো! কবুল তিনবার বলতে হয়! তোমার তো বিয়ে হয় নাই!” ভাইয়া প্রথমে পাত্তা দিলেন না। একটু পর শুনলাম ভাইয়া সবাইরে বলতেসে “আমার ভুল হইসেতো আমি কবুল একবার বলসি!” সবাই বোঝায় আরে কাবিন হয়ে গেছে তো বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি আর বোঝেন না। ওদিকে হাসাহাসির রোল পড়ে গেল! ভাইয়ার জেদাজেদির কারণে আবার কাজি ডাকা হইসিল।
তিনবার কবুল বলেই ভাইয়া ক্ষান্ত হলেন! সেদিন আমি আর কাজিন হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরিয়ে ফেলসিলাম! পরে অবশ্য চাচী এই ঘটনা জানতে পেরে সবাইকে বলে দিছিল। ভাবসিলাম সবাই বকবে কিন্তু আমার ফুপার মতো গুরুগম্ভীর মানুষ যখন বকতে গিয়ে হেসে ফেলেছিলেন তখন রিলিফ ফিল করছিলাম! উফফ...
২/
এবার আমার জুতা বিড়ম্বনা নিয়া কিছু বলি। সেই ছোট বেলা থেকে আব্বু আমাকে নিয়ে জুতা কিনতে গিয়া প্রথমেই বাটার দোকানে ঢুকতেন। বাটার এমন কোন জুতা নাই যে আমি পড়ি নাই! এখনো আব্বু জুতা কিনতে বললে দুজোড়া কিনি একজোড়া বাটার একজোড়া পাংখু। মানে বাটার জুতা ছাড়া জুতা কিনে বাসায় আসতে পারি না।
আমি এমনিতে সব সময় ফ্ল্যাট জুতা পড়ি। হাইহিল পড়ে পা মচকাবার কাহিনী আমার অনেক আছে। একবার আমার দুর সম্পর্কের এক প্রায় সমবয়েসী খালার বিয়েতে কমিউনিটি সেন্টারে সবার সামনে আছাড় খেয়ে মানসম্মান বিসর্জন দিতে হইছিল! সাথে পা মচকানো তো আছেই! এরপর থেকে হাইহিল দেখলেই অসুস্থ বোধ করি। কিন্তু কেন জানি এইবার ঈদে শখ হইলো হাইহিল পড়বো। এজ অলওয়েজ বাটা থিক্যা সেই ব্রিটিশ আমলের ডিজাইনের এর একজোড়া জুতা কিনলাম।
আরেক জোড়া হাইহিল (এই জুতার ঢিল দিয়া মানুষ মারা যাইবো)। হাইহিল জোড়া পড়ে দুদিন ট্রায়াল দিলাম কেমনে হাঁটবো ঈদের দিন। সমস্যা হলো আসল মুহুর্তে আমার সবকিছু ভজঘট হয়ে যায়! ঈদের দিন দুপুরে জামা পড়ার আগেই হাইহিল পড়লাম এবং আমার রুমে আসার আগেই আছাড় খেলাম! পা মচকায় নাই অবশ্য। যাইহোক জুতাজোড়া খুলে একবার বিষদৃষ্টিতে তাকালাম এবং ড্রেস পড়লাম। বলাবাহুল্য সেই বাটার প্রাগতৈহাসিক ডিজাইনের সেই জুতা পড়ে ঈদ পালন করতে হৈলো!
৩/
অন্যান্য কিছু বিড়ম্বনার কথাও অল্প ভাষায় বলি।
আমার আম্মুর সবচেয়ে ফেভারিট কালার হলো লাল খয়েরী। আম্মু শাড়ি কিনলে লাল খয়েরী থাকবে। এমনকি আমার ভাইবোনের জামা জুতা থেকে শুরু করে ঘরের পর্দা, সোফার কুশন, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, বিস্কিট লবন চিনির কৌটা, ইভেন রান্নাঘরের এপ্রন পর্যন্ত লাল খয়েরী কিনার অপচেষ্টা করেন! আম্মুর এহেন স্বৈরাচারী কেনাকাটার বিরুদ্ধে আব্বুসহ আমরা সবাই বিরোধী দলের ভুমিকা পালন করি। কিন্তু সরকারী দলের উপরে কোন কথা নাই! কিন্তু কিভাবে জানি আম্মু একবার ডিসিশন পাল্টালেন আমি তখন ক্লাশ এইটে পড়ি। রোজার ঈদ ছিল।
ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি আম্মুর (ভুল)ধারনা ছিল যে আমাকে সবচেয়ে ভালো স্যুট করে কমলা কালার। সেই ক্লাশ ফাইভ থেকে কমলা কালারের(আমার ভাষায় ঠাটা পড়া কালার) কত্ত কত্ত জামা যে পড়েছি গুনে শেষ করা যাবে না। যাইহোক আম্মু সেবার শপিং এ গেলেন। ঘন্টা তিনেক পর বাসায় আসলেন। সব জিনিশ পত্র খুলতে লাগলেন আমাদের সামনে।
প্রথমেই আমার জামা বের করলেন কমলা কালার। আমি ততদিনে অল্পশোকে কাত্রানি ভুলে অধিক শোকে গ্রানাইট হয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর বের করলেন আম্মুর শাড়ি কমলা কালার! ভাইয়ের জন্যে টিশার্ট কমলা কালার! ছোটবোনের জন্যে টপস দেখলাম কালো রং কিন্তু এর চারপাশে চিকন করে কমলা রং এর কি কাজ জানি। আব্বু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলেন “আমার পাঞ্জাবি কিনেছো?” আম্মু অত্যন্ত ব্যাথিত কণ্ঠে উত্তর দিলেন যে রোজা রেখে মাথা ঘুরতেছিল তাই কিনেন নাই। আব্বুর মুখ ফিলিপস বাত্তির মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।
কণ্ঠে মধু ঢেলে বললেন যে আম্মুকে আর কষ্ট করে রোজা রেখে শপিং এ যেতে হবে না তিনি নিজে গিয়েই কিনবেন। আমি ঢোক গিলে দেখলাম আমার জুতার মধ্যেও কমলা রং এর ফুল! একটু পর ভযে ভয়ে দেখলাম আম্মু একটা প্যাকেট বার করলেন। খুলে দেখার সাহস হলো না। এটা কি হতে পারে? যাই হোক নির্ঘাত কমলা রং এর কিছু একটা হবে আমি একশ ভাগ নিশ্চিত ছিলাম! আম্মুকে জিজ্ঞাসা করতে আম্মু উত্তর দিলেন প্যাকেটের ভিতর কমলা!
(সেইবার ঈদে কমলা ড্রেসটা বদলানো হয়েছিল। )
এবার অফ যাই।
বাস্তব জীবনের কিছু ঘটনাকে রম্য করে লিখার চেষ্টা করলাম। আর ব্রাদার এক্সপেরিয়া আমার কাছে একটা রম্য লেখা পাওনা ছিল। এক্সপেরিয়া ব্রো তোমাকে বলছি আমি বাকি টাকি রাখি না কিছু পাওনা পরিশোধ করলাম। কড়ায় গন্ডায় পরিশোধ যেমন করি তেমন আদায়ও করি। হ্যাপ্পি ব্লগিং সবাইকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।