মুক্ত আকাশ দেখব বলে বয়ে চলা। আকাশ কেন মুক্ত হয় না।
পাঁচঃ
অমির বেশীক্ষন দাড়াঁতে হল না। লিরা এসে গেছে। মেয়েটার সময় জ্ঞান খুব ভাল লাগল অমির।
কিভাবে যাওয়া যায়!
লিরা তোমার রিক্সাতে আপত্তি নেইতো?
আপত্তি আমার থাকবে কেন। ঢাকা তোমার শহর। তোমাকে কেউ একটা মেয়ের সাথে দেখে ফেলতে পারে। আর দেখে ফেললে তুমি সামাল দেবে। তাই ভেবে দেখ রিক্সাতে যাবে কিনা।
আমার কিন্তু হেঁটে যেতে সমস্যা নেই। তবে দূরত্বতো কম নয়। লিরা বলে।
আরে ঠিক আছে। সে কেউ দেখে ফেললে দেখুক না।
দেখে একটু ঈর্ষা হউক কারও কারও। চল রিক্সাতেই যাই তাহলে।
ওরা রিক্সাতে ওঠে বসেছে। রিক্সা ঢাকা কলেজের সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর দিয়ে যাবে।
একটু যানজটতো ছিলই। অমির কেমন কেমন জানি লাগছে। এই প্রথম লিরার পাশে বসে কোথাও যাচ্ছে। রাস্তার অপর পাশ থেকে অনেকেই তাদের রিক্সার দিকে তাকাচ্ছে। টার্গেট যে লিরা এটা বুঝতে অমির কষ্ট হয় না।
লিরার হাতটা ধরতে খুব ইচ্ছা করছে অমির। কিন্তু এটা কি ঠিক হবে। লিরা যদি রাগ করে। আর যদি কখনও দেখা না করে। অমি হল থেকে বের হবার আগে আয়নার সামনে নিজেকে যখন দাঁড় করায় তখন ঠিক বুঝতে পারেনা নিজেকে।
আসলে কি লিরাকে ভাল লাগে। আসলে কি লিরা তাকে পচ্ছন্দ করে। নাকি লিরা তার কাজের মাঝে সময়গুলো অমির সাথে পার করছে! কাজ শেষে চলে গেলে সব ভুলে যাবে। অমি কিছুই বুঝতে পারে না। থাক যেভাবে চলছে চলুক না।
কারন সবকিছুর উপরে লিরার সাথে চলতে ভাল লাগে, কথা বলতে ভাল লাগে, দেখা হলে ভাল লাগে, ম্যাসেজ পেলে ভাল লাগে-যতদিন এভাবে কাটছে কাটুক না। মানুষের সুখের সময় বেশীদিন স্থায়ী হয় না। তাই এই ভালালাগার সময়টা যত দীর্ঘ হয় ততই মঙ্গল।
লিরা আমি কি তোমার হাতটা ধরতে পরি---অমি বলেই বসল।
লিরা হা হা হা করে হেসে দিল।
এই কথাটা বলতে তোমার এতদূর আসা লাগল। সেই কখন থেকে তুমি চুপচাপ। এতো কি ভাবছিলে? আমি যদি তোমাকে হাত ধরতে না দেই। তো কি হয়েছে। তোমার মান-সম্মান চলে যাবে।
মান-সম্মান কি এতো সহজ কিছু? ছেলে মানুষ-সাহস থাকতে হয়। কিছু চাইতে গেলে কিছু হারাতে হয়। তুমি হাত ধরতে চাইবে আবার সম্মানের ভয় করবে তাতো হয় না। এই কথাগুলো বলার ফাঁকে লিরা অমিকে হাতটা ধরতে দিল। অমি একটু লজ্জা পেল যেন।
কেন সে জানে না। একটা মেয়ে হয়ে লিরা কত স্বপ্রতিভ আর অমি কেমন জানি। অমি লিরার হাতটা ধরে রাখল। কিছু বলছে না তেমন। ওরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝ দিয়ে, কলা ভবন পাশে রেখে, টিএসসি গলিয়ে বাংলা একাডেমীতে পৌঁছল।
বটগাছটার তলায় বাঁধানো অংশে বসে গল্প করছে। আজ ছুটির দিন নয় তাই মানুষের আনাগোনা কম। লিরার পাশে বসে থাকতে বেশ ভাল লাগছে অমির। লিরার কেমন লাগছে অমি ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েরা অনেক রহস্যময়ী।
বোঝা ঠিক সহজ কাজ নয়। আবার বুঝতে যাওয়াটাই মনে হয় ঠিক না। তারপর ওরা এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করল-এ স্টল থেকে সে স্টল। কিছু বই কিনল। হুমায়ুন আজাদের ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ বইটা কিনে লিরাকে দিল।
আচ্ছা অমি তোমার কার লেখা পছন্দ?
সমরেশ ভাল লাগে, সঞ্জীব তো খুব প্রিয়, হুমায়ুন আহমেদের কিছু কিছু বই অনেক ভাল লাগে, সুনীল পড়া হয়েছে অনেক। সত্যি কথা বলতে কি আমি লেখক দেখে পড়ার চেয়ে ভাল বই পছন্দ করি সে যার লেখাই হউক।
লিরা প্রীতিলতাকে নিয়ে লেখা একটা বই কিনল। সেটা অমিকে দিল।
অমি লিরাকে জিজ্ঞেস করল ‘তুমি প্রীতিলতাকে জান?’ খুব ভাল লাগছে দেখে।
জানবনা মানে। আমি কি বাঙ্গালী নই? তবে এটা ঠিক কলকাতার বাঙ্গালীরা বাংলাদেশের অনেক ভাল কিছু জানে না। আমি ছোটবেলা থেকে একটু আগ্রহী ছিলাম বলে জানি। আর তোমাদের দেশে আসার আগে কিছু পড়লেখাতো অবশ্যই করেছি। দেখ আগ্রহই যদি না থাকবে তাহলে গবেষনা করার জন্যে কেন তোমার দেশ পছন্দ করলাম।
শুনে ভাল লাগছে বেশ, অমি বলল। আসলে তোমাদর বাঙ্গালীরা ঠিক বাঙ্গালী নয়। হিন্দির ছড়াছড়ি ওখানে। রাস্তায় বাংলা বলে না। সত্যকার অর্থে বাংলাকে মর্যাদার আসনে রেখেছে বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা।
সে যাই হউক চল আজ যাওয়া যাক। এই বিষয় নিয়ে আর একদিন কথা বলা যাবে। প্রায় ৮টা বেঁজে গেছে—লিরা বলে।
অমির যদিও আর কিছুটা সময় থাকতে মন চাইছিল।
ওরা বইমেলাকে বিদায় দিল সেদিনের মত।
(স্বত্ব লেখকের)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।