নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবি্লউ) একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের নেতৃত্ব দেওয়া গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, এটি বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস গতকাল এক বিবৃতিতে গোলাম আযমের বিচার প্রক্রিয়ায় পাঁচটি বিষয়কে 'ত্রুটি' হিসেবে তুলে ধরে ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে পক্ষপাতেরও অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে আইনে বিচার চলছে তার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে চাইলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। 'বাংলাদেশ : আযম কনভিকশন বেইজড অন ফ্লড প্রসিডিংস' শীর্ষক ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গোলাম আযামের রায় দেওয়ার আগে ট্রাইব্যুনাল নিজস্ব উদ্যোগে তদন্ত চালানোর যে কথা জানিয়েছে, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তা পারেন না। স্কাইপসহ ইন্টারনেটে প্রকাশিত কথোপকথন নিয়ে পক্ষপাতের যে অভিযোগ উঠেছে তার কোনো ব্যাখ্যা ট্রাইব্যুনাল দেননি। আসামি পক্ষের সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে ট্রাইব্যুনাল ব্যর্থ হয়েছে এবং বিচারক প্যানেলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর গোলাম আযমের রায়ে তাকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে তথ্য-প্রমাণের অভাব ছিল বলে অভিযোগ করেছে এইচআরডবি্লউ। তবে মানবাধিকার সংস্থাটির এই বক্তব্যের পর সংস্থাটির বিপক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলছেন, সব আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার কাজ চালানোর পরও এইচআরডবি্লউ যে বিবৃতি দিয়েছে তা একটি স্বাধীন দেশের 'অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ'-এর শামিল। আমরা নিজেদের আইনে একটি অপরাধের বিচার করছি। এই বিচারের (গোলাম আযমের) একটা পর্যায় শেষ হয়েছে। আমাদের এই বিচার সব আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই করা হচ্ছে। যাদের বিচার এখানে হচ্ছে, তারা এত সুবিধা পেয়েছেন যা অনেক বিচারের আসামিরা পাননি। মোট কথা এখানে স্বচ্ছতার কোনো অভাব ছিল না। অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর আদালত দণ্ড দিয়েছেন। এখন দ্বিতীয় পর্যায় চলছে। সেখানে ট্রাইব্যুনালের রায় পর্যালোচনা হবে। এই পরিস্থিতিতে এ ধরনের মন্তব্য করা যায় না। এর পরও তারা সমালোচনা করছে। আদালত মনে করলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি। তিনি বলেন, ট্রায়াল কোর্ট প্যানেলের পরিবর্তন নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছে। এটা তো একটি সাধারণ বিষয় এবং আইন মেনেই এটা করা হয়েছে। আসামিরা কোনো কোনো অপরাধে খালাস পাচ্ছেন। আবার তাদের বিরুদ্ধে কোনো কোনো অভিযোগ প্রমাণিতও হচ্ছে। এটাই প্রমাণ করে, আদালত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং দলিলের ভিত্তিতে অভিযোগ রাখছে বা খারিজ করে দিচ্ছেন। তাই বিচার নিয়ে তাদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের প্রধান সমন্বয়কারী, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডবি্লউ) জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ নিয়েছে। কারণ বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আসামি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এ বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করেছে। এমনকি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিলও করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেছেন, গোলাম আযমের মামলা নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্যে আমি স্তম্ভিত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কে? এটিও কি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়?
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।