ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ও পরিবেশ আইন ভঙ্গ করেই রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে মধ্যরাতের পর থেকে শুরু হয় ভবন মালিকদের অত্যাচার। বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানি যারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সুবিধাপ্রাপ্ত তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করেই প্রতিবেশীদের ভোগান্তিতে ফেলে ভবন নির্মাণ করছেন। এতে রোগী ও শিক্ষার্থীদের যেমন অসুবিধা হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে বিদ্যুতেরও অপচয়। অথচ ভবন নির্মাণকালে সঠিকভাবে নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকির দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হলেও এ কাজে প্রতিষ্ঠানটি দৃশ্যত তেমন কাজ করছে না।
সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে, রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, মিরপুর, বনশ্রী, পুরান ঢাকা ও ধানমন্ডিসহ অন্যান্য আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব এলাকায় নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য কোন নিয়ম-নীতি না মেনেই রাস্তার ওপর ফেলে রাখা হচ্ছে ইট, বালু, সিমেন্ট ও সুরকিসহ অন্যান্য উপকরণ। নির্মাণের সময় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ব্যবহৃত হচ্ছে পুরনো যন্ত্র। সারা রাত নির্মাণশ্রমিকরা উচ্চৈঃশব্দে কাজ করে এলাকাবাসীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন। উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডের অধিবাসীরা অভিযোগ করেন, রাত ১২টার পর থেকে উচ্চৈঃশব্দে শুরু হয় আবাসিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। তারা এ জন্য রাতে ঘুমাতে পারেন না। সন্তানদের পড়ালেখায় সমস্যা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশন ও সমিতির কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল মিলছে না। সংশ্লিষ্টদের মতে, দিনের বেলায় পাশর্্ববর্তী বাসিন্দাদের প্রতিবাদ এড়াতে এবং ট্রাফিক যানজট এড়াতেই অনেক আবাসিক এলাকায় ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ভবন নির্মাতাকে ভবন নির্মাণের পূর্বে পরিবেশ অধিদফতরের প্রাথমিক পরিবেশগত সমীক্ষা দাখিল করতে হয়। কিন্তু এসব নির্দেশনা পালন না করেই পরিবেশ আইন অবহেলা করে বেশির ভাগ ভবন মালিকরা ভবন তৈরি করছেন। আর ভবন নির্মাণে নাগরিকদের নিরাপত্তা, স্বাচ্ছন্দ্য ও পরিবেশ সম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র আবশ্যক। এ ব্যাপারে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে রাতে আবাসিক এলাকার শব্দের মাত্রা কিছুতেই ৪০ ডেসিবেলের ওপর হওয়া যাবে না। কিন্তু এটি মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে দিনে ভবন নির্মাণের উপকরণ বহনকারী ট্রাকের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাধারণত গভীর রাতেই এসব ট্রাক থেকে শব্দদূষণ তৈরি হয়। তবে পরিবেশ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ভবন মালিক ও নির্মাণশ্রমিকদের আরও সচেতন হতে হবে। সেফটি এবং রাইট সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, দেশে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য কোনো নিরাপত্তা বিধান নেই। রাজধানীর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মানা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)-এর পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণের সময় চারপাশে ক্ষণস্থায়ী বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেখানে নির্মাণাধীন ভবনের সংশ্লিষ্টরা ছাড়া কারও প্রবেশাধিকার নেই। কিন্তু রাজধানীতে ভবন নির্মাণের কোনো আদর্শ ব্যবস্থাপনা নেই। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মহাসচিব ড. মো. আবদুল মতিন বলেন, বিদেশে ভবন নির্মাণের সময় ইটের টুকরো ও ধুলা এড়াতে নীল রঙের প্লাস্টিক টাঙিয়ে রাখা হয়। এ ছাড়া নির্মাণসামগ্রী মেশানোসহ অন্যান্য কাজে সনাতন যন্ত্রপাতির পরিবর্তে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হলে শব্দদূষণসহ অন্যান্য দূষণরোধ করা সম্ভব। ভবন নির্মাণকালে সঠিকভাবে নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকির পুরো দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।