আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না আওয়ামী লীগ

সাতক্ষীরায় অত্যন্ত নাজুক ও হতাশাজনক আওয়ামী লীগের রাজনীতি। দলটির এমন করুণ দশা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি। জেলা ও ছয়টি উপজেলার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে ঢিমেতালে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনগুলোর তৎপরতা নেই বললেই চলে। ক্ষমতার পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগের পক্ষে জাতীয় কোনো দিবস বা কর্মসূচি পালিত হয়েছে কি না তা জানা নেই নেতা-কর্মীদের। বিগত ৯ বছরে কমিটি গঠন দূরের কথা, একটি পূর্ণাঙ্গ সভা পর্যন্ত করতে পারেনি জেলা আওয়ামী লীগ। আর এ কারণে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। আর তাই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারছে না তারা।

দলে ঐক্য না থাকায় জেলায় জামায়াত-শিবিরের হাতে ইতোমধ্যে খুন হয়েছেন অওয়ামী লীগের অন্তত ১৮ জন নেতা-কর্মী। পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মীর বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এই সহিংসতার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিরোধ গড়তে পারেনি জেলা আওয়ামী লীগ। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলা কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা দলীয় চাদর গায় দিয়ে নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত ছিলেন। তৃণমূল কর্মীরা মনে করেন, এসব নেতার বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ক্ষুণ্ন হচ্ছে দল ও সরকারের ভাবমূর্তি। আর এ কারণে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। সাংগঠনিক কার্যক্রমের অভাবে এর আগে জেলার দুটি পৌর সভা ও ৭৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চরম ভরাডুবি হয়েছিল। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, বিগত পাঁচ বছরে দলের জন্য জেলা সিনিয়র সহসভাপতি সদ্যবিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক কোনো কাজই করেননি। দলের এই নাজুক পরিস্থিতির এটিও অন্যতম একটি কারণ।

দলীয় নেতৃত্ব পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ ৯ বছরে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়নি। সভাপতির পদ নিয়ে এখনো রয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। অন্তর্কোন্দলের কারণে জেলা কমিটি মূলত দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান এমপি। তার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক সাংবাদিক আবু আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহম্মেদ, সদর সভাপতি এস এম শওকত হোসেন, শহর সভাপতি শেখ নুরুল হক, তালা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সনৎ ঘোষসহ অধিকাংশ নেতা-কর্মী। অন্যদিকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি জেলায় না এসে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অপর গ্রুপের। তার পক্ষে আছেন সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মুস্তাক আহমেদ রবি, সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ কামাল শুভ্র, সাবেক এমপি ডা. মোকলেছুর রহমান, তালা উপজেলা সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, দেবহাটা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, কালিগঞ্জ উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সরদার মুজিব। এই নেতারা অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে ব্যস্ত ছিলেন আখের গোছানোর কাজে। স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োগ-বাণিজ্য, ঠিকাদারি-টেন্ডারবাজি, দখলদারি থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করেন তারা। সংগঠন সম্পর্কে তারা উদাসীন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা জানান, ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচনের ছয় মাস পর থেকে দলে কোন্দল শুরু হয়, যা আজও চলমান। এদিকে দীর্ঘ ১১ বছর পর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয়। সম্মেলনে ছাত্রলীগ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে প্রধান অতিথি না করে ওই সময়কার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে করায় দলের শীর্ষ নেতাদের আপত্তির মুখে তা স্থগিত হয়ে যায়। এটিকে আ ফ ম রুহুল হকের প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়ালে বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নেয়। শুরু হয় দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারে নানা কৌশল।

ইউনিয়ন কমিটি, উপজেলা কমিটি ও জেলা কমিটিসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনেও শুরু হয় গ্রুপিং।

জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ জানান, জেলা দলের রাজনীতি ধ্বংস করে একটি গ্রুপ রুহুল হকের কান ভারী করে সব সময় সুবিধা ভোগ করেছে। এসব নেতাদের কারণে দলের ত্যাগী নেতারা মন্ত্রীর পাশে যেতে পারেনি।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আপাতত নেই। ইতোমধ্যে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সম্পন্ন হয়েছে। অচিরেই বাকি ছয়টি উপজেলায় কাউন্সিল হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক এমপি জেলা পরিষদ প্রশাসক মুনছুর আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের মধ্যেও এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে পারলে সংগঠন শক্তিশালী হবে। এটি করা গেলে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.