আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেললাইন ২০ কিমি অবৈধ স্থাপনা ১২০০

লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে নগরীতে রেলওয়ের জায়গায় বস্তি ও স্থাপনা তোলা। বেশ কিছুদিন রেলজমি দখলবাজির দৌরাত্দ্য কম থাকলেও ইদানীং পাল্লা দিয়ে তা বেড়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের হিসাবে রাজধানীর গেন্ডারিয়া স্টেশন থেকে টঙ্গী রেল সেতু পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার রেললাইনে গজিয়ে উঠেছে ১২০০ স্থাপনা। এর মধ্যে ছোট-বড় ২৬টি বস্তিতে ঘরবাড়ি আছে ৯০০। পাকা-আধাপাকা আরও আড়াইশ স্থাপনা পরিণত হয়েছে জমজমাট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে।

অনুসন্ধানকালে দেখা যায়, জায়গা দখল করে স্থাপনা বানিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি দখলবাজরা, রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উল্টো মামলাও দায়ের করেছে তারা। একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়েরের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানির ফাঁকে ফাঁকে রেলজমিতেই স্থায়ী ভিত্তি গড়ে তোলে দখলবাজরা। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, দফায় দফায় অভিযান চালিয়েও অবৈধ দখলদারদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। মোবাইল কোর্টের অভিযানে দখলবাজরা সটকে পড়ে। তবে দু-চার দিন পর আবার তারা পুরনো স্টাইলে একের পর এক গ্রাস করতে থাকে রেলের জমি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেললাইনের পাশের জায়গা বস্তিবাসী ও দোকানদারদের মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া দিয়ে থাকে স্থানীয় মাস্তান ও প্রভাবশালীরা। এয়ারপোর্ট স্টেশনের আশপাশে কিছু জায়গা মোটা টাকার বিনিময়ে এককালীন বরাদ্দ দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে সপ্তাহব্যাপী টানা অভিযান চালিয়ে আট শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। জবরদখলকৃত জায়গা কাঁটাতারের বেড়ায় ঘেরাও দিয়ে রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হলেও তা বেশি দিন বহাল থাকেনি। ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাঁটাতারের ঘেরাওয়ের ভেতরই বিনা বাধায় গড়ে ওঠে বস্তি, ওয়ার্কশপ, গ্যারেজ ও দোকানপাট।

এফডিসি-সংলগ্ন রেললাইনের পাশে ঘেরাও দেওয়া কাঁটাতারের বেড়া কেটে বানানো হয়েছে বস্তিতে প্রবেশের রাস্তা। মালিবাগ থেকে মগবাজার দুই রেলগেটের মধ্যবর্তী জায়গায় রেল বিভাগের হিসাবেই রয়েছে ১২৩টি অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৪১টি গ্রিলের দোকান, ১৮টি মোটর ওয়ার্কশপ, আটটি গ্যারেজ এবং বাকিগুলো অন্য দোকানপাট।

খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় ঠিক রেললাইনের ওপরই বসেছে কাঁচাবাজার। শাক-সবজি, মাছ, ডিম, মুরগি, মাংস-বিক্রেতারা অস্থায়ী শেড বানিয়ে আট-দশ বছর ধরে চালিয়ে আসছেন বাণিজ্য।

ট্রেনের হুইসেলের শব্দে ক্রেতা-বিক্রেতারা একটু সরে দাঁড়ান। ট্রেন চলে যেতেই আবার জমে ওঠে হাট-বাজার। সেখানে অবৈধভাবে দোকান বসানো শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দৈনিক চাঁদা আদায় করেন 'লাইনম্যান' নামে পরিচিত জয়নাল ও ফারুক। প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ টাকা হারে আদায় করা চাঁদার ভাগ পায় খিলগাঁও থানা পুলিশ ও রেলওয়ের সিগন্যাল বিভাগের এক কর্মচারী।

এফডিসি থেকে মহাখালী, দুই ক্রসিংয়ের মাঝামাঝি রেললাইনের উভয় পাশ পরিণত হয়েছে ঘিঞ্জি বস্তিতে।

শুধু কারওয়ান বাজার-সংলগ্ন রেললাইনের পাশেই গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক বস্তিঘর। সেখানে চালু রয়েছে বাংলা মদ, হেরোইন ও গাঁজা বেচাকেনার চারটি জমজমাট স্পট। কারওয়ান বাজারের দুটি ক্লাব এবং মাসুদ-তুহিন গ্রুপের নামে প্রতি মাসে চাঁদা ওঠে দেড় লক্ষাধিক টাকা। তেজগাঁও স্টেশন-সংলগ্ন রেললাইনের জমিতে বসানো হয়েছে বড় আকারের ছয়টি কলার আড়ত। কর্মচারী সমিতির সেক্রেটারি পরিচয়ে কামরুল ইসলাম প্রতিটি আড়ত থেকে ৪ হাজার করে মাসিক ২৪ হাজার টাকা ভাড়া তোলেন বলে জানা গেছে।

তেজগাঁও স্টেশনের উত্তর পাশ থেকে তিব্বত আলকাতরা কারখানা পর্যন্ত বস্তির বাসিন্দারা রেললাইন ঘেঁষেই বানিয়েছেন সারি সারি টয়লেট। এসব কাঁচা ও খোলা টয়লেটের দুর্গন্ধে জায়গাটি অতিক্রমকালে ট্রেনযাত্রীদের দম বন্ধের উপক্রম।

মহাখালী পুলিশ বঙ্রে অদূরে রেললাইনের জায়গাজুড়ে বানানো হয়েছে বড় আকারের কাঁচাবাজার, প্রাইভেট গাড়ি রাখার তিনটি গ্যারেজ, পাঁচটি গ্রিল ওয়ার্কশপ ও দুটি রেস্তোরাঁ। মহাখালী থেকে বনানী রেলক্রসিং পর্যন্ত দুই কিলোমিটার লাইনের উভয় পাশে চলছে জবরদখলকারীদের সীমাহীন দাপট। পশ্চিম পাশে রেললাইন ঘেঁষে বিপজ্জনকভাবে গজিয়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক বস্তিঘর।

এসব ঘর থেকে প্রতি মাসে মাসিক ২০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করে থাকে তিনটি চাঁদাবাজ গ্রুপ। অন্যদিকে রেললাইনের পূর্ব পাশ দখল করে আছে আশপাশের ভবন মালিকরা। দোকানপাটের গোডাউন বানানো থেকে শুরু করে রেললাইনের মাটি ধসিয়ে গভীর গর্ত করে বানানো হয়েছে ক্লাবঘর, আড্ডাখানা, হোটেল-রেস্তোরাঁ পর্যন্ত। এসব স্থানে রেললাইন হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে কেটে নেওয়া লাইনস্থল থেকে মাটি ধসে যায় বিপজ্জনকভাবে।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনের একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, একটি যুব সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে রেলের জায়গা মেপে মেপে ব্যবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দিচ্ছেন স্থানীয় আলতাফ, কুদ্দুস মোল্লা, মোতাহার বাবু। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট জায়গা অলিখিত বরাদ্দ নিতে এককালীন পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। কিন্তু পাল্টা অভিযোগ তুলে মোতাহার বাবু জানান, সেখানে গরিব ব্যবসায়ীরা ঝুপড়ি দোকান তুলতে চাইলেও স্টেশন কর্মচারীরা চাঁদা দাবি করে বসেন। লাকড়ির দোকানদার বাদশা, রাজু ও ছবেদ আলীর কাছ থেকে রেল কর্মচারী রহমান প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা নেন বলেও সূর্যসেনা ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন অভিযোগ করেন। রেলের জায়গা জবরদখল ও বেচাকেনার ব্যাপারে রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, রেললাইন ঘেঁষে গড়ে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিগুলো কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

ঘেরাও দেওয়া হয়েছে উদ্ধার জায়গা কাঁটাতারের বেড়া ও দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে। তিনি বলেন, কারওরান বাজার, মহাখালী, রসুলপুর, তেজকুনিপাড়া, জুরাইন ও সায়েদাবাদ এলাকায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিঘরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এক প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, যে কোনো মুহূর্তে চালানো হবে ফের উচ্ছেদ অভিযান। অবৈধ দখলদারদের সতর্ক নোটিসও আর দেওয়া হবে না এখন থেকে। তিনি জানান, সংঘবদ্ধ কুচক্রীরা রেলের জায়গার জাল দলিলপত্র বানিয়ে জবরদখলের পাঁয়তারা চালিয়ে থাকে।

উচ্ছেদ অভিযানের তোড়জোড় শুরু হলেই তারা মামলা ঠুকে দেয় আদালতে। বাধা তৈরির চেষ্টা করে উচ্ছেদ কাজে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.