বাড়ীর সামনের আলটা ধরে এগিয়ে গেলেই ডান দিকে মিয়াদের বাঁশঝাড় আর বাম দিকে ধানি জমি। ফাঁকে ফাঁকে লাউয়ের মাচা । কিছুক্ষন এগুলেই রেল রাস্তা। রেল রাস্তা পার হলেই আবার মেঠো পথ। নিখিলদের কলা বাগান ডান দিকে রেখে বাম দিকে মালো পাড়া।
পূর্ব পুরুষদের মত উত্তর পুরুষরাও এখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাস করে আসছে যুগ যুগ ধরে । পৌষ-পারবনে ,আচারে-অনুষ্ঠানে হিন্দু-মুসলিম একে অপরকে নিমন্ত্রন করে আসছে। ঈদের আমেজ কেটে গেলেও তার গন্ধ যেন লেগে আছে। আর সেই গন্ধটাকে উসকে দিতে আসছে দুর্গোৎসব। অসুরকে বধের জন্য যুগ যুগ তার এই আগমন প্রত্যাশা করে ভক্ত কুল।
কর্মব্যস্ত এ জীবনে গোটা দিনের যান্ত্রিক রুটিনের খোলশ ছেড়ে উৎসবের মসলিন গায়ে জড়িয়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি এক কাতারে মিলতে যাচ্ছে । যান্ত্রিক রুটিন অথচ যান্ত্রিক না হওয়া শরীরটাকে নিয়ে সারাদিন ব্যস্ততার পর ঢলে পড়া আবির রঙা বিকেলে মাঝে মাঝে বেলকনিতে দাঁড়ালে স্মৃতি গুলো ভর করে। ধূলি জমা স্মৃতির বন্ধ চৌকাঠ খুলতেই একে একে জীবন্ত হয়ে উঠে স্মৃতি গুলো । শীতের রাতে মালো পাড়ার সেই ধূপের গন্ধ ,ঢাক আর শাখের আওয়াজকে পাশ কাটিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার মত বাধ্য ছেলে ছিলাম না কোন দিনই। মার কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে বলে অনুমতি নিয়ে ঠিকই হাজির হতাম মন্ডপে।
আরতির মোহ যে কাছে টানতো। তার চেয়েও বেশি টানতো লাড্ডু,নাড়ু আর প্রসাদের লোভ। আরতি শেষে ঢুলু-ঢুলু চোখে লাড্ডু আর প্রসাদের তৃপ্তির ঢেকুর তুলে তবেই না বাড়ী ফেরা। পর দিন আবার মালো পাড়া। বার বার কি যেন একটা অজানা আকর্ষন আষ্টে পৃষ্ঠে বেধে রাখতো দশভুজা দূর্গা।
মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকতাম । প্রতিমাতে আর কে আছে না আছে সেটা নজরই কাটতো না । ঐ বয়সেই দেবী দূর্গাকে দেখে বুকের গহীন কোণে কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠতো। যতবারই তার কাছে গিয়েছি তাকে নতুন করে আবিষ্কার করেছি। নতুন ভাল লাগায় আচ্ছন্ন হয়েছি।
যে ভাল লাগার মায়াবী পরস আজও আছে অনউন্মোচিত। হয়তো থাকবে। স্কুলের গন্ডি আর গ্রামের সেই স্মৃতির লাড্ডু রেখে পা রেখেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হয় দূর্গোৎসব। প্রতিবারের মত এবাও চলছে তার প্রস্তুতি।
মন্ডপ তৈরী ,রং করা,অনুষ্ঠান সুচী কতকিছু। যেন সাজসাজ রব। প্রসাদ হবে । আনন্দ হবে । হিন্দু ছাত্ররা আয়োজন করলেও সব ধর্মাবলম্বী ছত্ররা যোগ দেবে ।
বাঁধ ভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাবে ধর্মের বৈপরিত্য। বড় হয়ে উঠবে মনুষ্যত্ব । যে মনুষ্যত্ব ধরে রাখবে সহস্র বছরের অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই গাট ছাড়া বন্ধন প্রবাহিত হোক প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।