আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তেঁতুল মজিদ, পাতিল মজিদ আর টেবিল মজিদ-by নাজমুল আলম শিশির

পৃথিবীটাকে যেমন পেয়েছ তার থেকে সুন্দর করে রেখে যেতে চেষ্টা কর

কর্মক্ষেত্রে দুজনের নাম এক হলে চরিত্রের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রেখে নামের আগে-পিছে উপাধি যোগ হয়ে নতুন নামকরণ হয়। ফলে অনেককে হারাতে হয় পিতৃপ্রদত্ত নাম। যেমন_নেত্রকোনায় বাড়ি বলে একজন নেত্র আরিফ আর কিশোরগঞ্জে বাড়ি থাকায় অন্যজন কিশোর আরিফ নামে বন্ধুমহলে পরিচিত। এভাবেই মোটা শিপলু, চিকনা শিপলু, গোবাইজা শাকিল বা মফিজ শাকিল নামে পরিচিত হয়েছে অনেকে। কেউ হয়েছে শরমছাড়া শান্ত।

আমাদের গ্রামে তিনজন মজিদ আছে। ফলে নামের এমন বিশেষণ থেকে বাদ যায়নি তিন মজিদও। এদের নামের বিশেষণগুলোও অদ্ভুত_তেঁতুল মজিদ, পাতিল মজিদ আর টেবিল মজিদ। নামের মিলের সঙ্গে তাদের চরিত্রের অদ্ভুত মিল আছে। ব্যবহারে কেবল বংশেরই পরিচয় নয়, ব্যক্তিরও পরিচয় হয়।

এই যেমন_তেঁতুল মজিদ। তার পেশাই ছিল ফল চুরি করা। ডাব, গাব, জাম্বুরা, কলা, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফল চুরি করত সে। কিন্তু ধরা খায় তেঁতুল চুরি করতে গিয়ে। সেই থেকে ওর নাম তেঁতুল মজিদ।

পাতিল মজিদও চুরি করত। তবে কেবল পাতিল, মানে রান্নার পাতিল। অন্যের রান্নাঘর থেকে খাবারভর্তি পাতিল নিয়ে আসত সে। তারপর খাবারটা খেয়ে পাতিলটা বিক্রি করে দিত। তেঁতুল মজিদের মতো সেও ধরা খায় পাতিল চুরি করতে গিয়ে।

সেই থেকে ওর নামের আগে পাতিল শব্দটি যোগ হয়। তেঁতুল মজিদ আর পাতিল মজিদের মতো টেবিল মজিদ টেবিল চুরি করত না। ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার ছিল সে। তবে চৌকিদার হলে কি হবে, তার পাওয়ার মানে ক্ষমতা ছিল দেখার মতো। আর ক্ষমতার অপব্যবহার বা সদ্ব্যবহার যা-ই বলি না কেন, তা ভালোভাবেই করত টেবিল মজিদ।

বিচারের নামে টাকা খাওয়া, মিথ্যা ভয়ভীতি দেখানো আর মুরগির খোঁয়াড় ইজারা দেওয়া থেকে শুরু করে গম চুরির ভাগ সবই পেত টেবিল মজিদ। বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্যক্তির যেমন কিছু আদর্শ থাকে, টেবিল মজিদেরও তেমনি একটি আদর্শ বা দর্শন ছিল। তা হচ্ছে, তিনি নিজ হাতে টাকা নিতেন না। টাকা খামে ভরে কিংবা কাগজে পেঁচিয়ে টেবিলের ওপর রেখে যেতে হতো। এ টেবিল-দর্শন থেকেই তার নাম টেবিল মজিদ।

তেঁতুল মজিদ আর পাতিল মজিদের মতোই টেবিল মজিদও একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ে। বিচার করে একে একে তিনজনকেই করা হয় গ্রামছাড়া। অনেক দিন পর ঈদে তিন মজিদকে আবারও একসঙ্গে গ্রামে দেখা যায়। পরনে হাল আমলের ফ্যাশনেবল পোশাক। হাতে দামি মোবাইল।

মুখের ভাষায়ও পরিবর্তন। চলতি সময়ের বিষয় বদলে যাওয়ার আহ্বানে তারাও অনেক বদলে গেছে! পুরনো পেশা বদলে তিন মজিদই এখন নতুন পেশায় নিয়োজিত! গ্রামের ছোটখাটো বিষয়েই মানুষের আগ্রহের সীমা-পরিসীমা থাকে না। তিন মজিদের গ্রাম প্রত্যাবর্তন এমনিতেই ছিল টক অব দ্য গ্রাম। তার ওপর তাদের বদলে যাওয়ার কাহিনী মানুষের মুখে মুখে ফেরে। যে মাতব্বররা মজিদদের গ্রামছাড়া করেছিল, তাদেরও আফসোস করতে দেখা যায়।

তারা নাকি আসল রত্ন চিনতে ভুল করেছিল! কথার নানা ডালপালা গজায়, এখানে শিরা-উপশিরাও গজিয়ে গেল। সব কথার শেষে উপসংহারে এসে দাঁড়ায়_তারা তিনজনই কয়েক বছরে বিরাট টাকার মালিক হয়ে গেছেন। সৎপথে তাদের পক্ষে কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। গ্রামের সবাই একটি বিষয়ে একমত হয়_আঠারো বা কুড়ি নম্বর উপায়ে বিস্তর টাকার মালিক হয়েছে তিন মজিদ । সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটনারে জন্য তিন মজিদকে নিয়ে বসা হয়।

জানতে চাওয়া হয় তাদের বর্তমান পেশা সম্পর্কে। প্রথমেই তেঁতুল মজিদ সহজ-সরল ভাষায় বলে, আগে ফল চুরি করতাম আর এখন ফল বদলাই। বিভিন্ন পরীক্ষায় ফল বদলে ফেলি। বিশেষ করে চাকরির ফল বদলে একজনের ফল অন্যজনকে দিয়ে দিই! পাতিল মজিদ বলে, আমিও বদলানোর ব্যবসা করি, তবে কোনো পরীক্ষার ফল নয়। সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের মধ্য থেকে দুই-একটা পাতা কেবল বদলে ফেলি।

আমলারা যেসব কাজ করতে একটু চিন্তাভাবনা করেন, দোটানায় থাকেন, আমি তা করে দিই! সচিবালয়ের অনেকে আমাকে দালাল বললেও আমি নিজেকে তারও ওপরের লোক মনে করি। মানুষের উপকার করাই আমার পেশা! দুজনের কথার পর মুখ খোলে টেবিল মজিদ। তারপর হতাশ হয়ে বলে, তোদের কোনো উন্নতি হলো না। আগে করতি চুরি আর এখন করস ধান্দাবাজি আর ফটকাবাজি। আরে আমারে দেখ।

দেখে কিছু জ্ঞান অর্জন কর, কিছু শিখ! তারপর ভাব ধরে একটা গলা খাঁকারি দেয়। গলার স্বর আরেকটু মোলায়েম করে বলে, বিশ্ব কত এগিয়ে গেছে। মানুষ এখন চাঁদে প্লট কিনছে। দুনিয়াটা ছোট হয়ে যাচ্ছে। গ্লোবালাইজেশনের এ যুগে আমি তো পুরো বিশ্ব শাসন করি! আগে ছিলাম চৌকিদার।

চেয়ারম্যান সাব কী বিচার করবে তা আগের রাতে ঠিক করে দিতাম। আর এখন ক্রিকেট ম্যাচের ভাগ্য ঠিক করে দিই! ১৭ নম্বর ওভারের চার নম্বর বলটি নো বল হবে। ২৬তম ওভারে তিনটা ওয়াইড হবে। উইকেটকিপার পানির মতো সহজ ক্যাচ পেয়েও ফেলে দেবে। আর ক্যাচটি উঠবে ৩২তম ওভারের।

এমন বহুত কিসিমের কর্ম ম্যাচের আগে টেবিলে বসে ঠিক করে দেওয়াটাই এখন আমার কাজ!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.