হাউকাউ পার্টি
গাছপালা আর পশুপাখির প্রতি অদম্য আকর্ষণ আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। ছেলেবেলাটা ছোট মফসল শহরের উঠোনওয়ালা খোলামেলা বাড়িতে কেটেছে, যার কারণে সেই সময় এই শখ গুলোর কিছুটা হলেও পুরন করতে পেরেছিলাম।
তবে মায়ের চোখ রাঙানির কারনে পাখি পশু পোষার ব্যাপারে খুব একটা সুবিধা করেতে পারিনি
যতবারই উদ্যোগ নিয়েছি খরগোশ, বা কুকুর ছানা বা সাদা সাদা গিনিপিগ বা টিয়া, ময়ন পুষবার, ততবার আম্মুর ষড়যন্ত্রের কারণে তা ভেস্তে গেছে, সে সব ইতিহাস আরেক দিন বলবো!!
আজ শুধু বৃক্ষ বন্দনা.....
বাগান আর গাছপালার ব্যাপারে আমার মা'র নিজেরও উৎসাহ ছিল, তাই মা মেয়েতে যৌথ ভাবে আমাদের সেই মফ্সলের কোয়াটারে ছোট্ট সুন্দর একটা বাগান গড়ে তুলেছিলাম।
খুব যে দু:স্প্রাপ্য গাছপালা ছিল একথা বলবো না, খুব সাধারণ সব গাছ, কিন্তু ভালবাসা ছিল অনেক।
আমার মা প্রায় রাতেই টর্চ লাইট নিয়ে বাগানে নেমে যেতেন কি কি ফুল ফুটলো, তা দেখার জন্য।
আর আমি যখন হল থেকে ছুটিতে বাসায় যেতাম, তখন আমাদের ভার্সিটির ফয়সাল নার্সারী থেকে গাছ নিয়ে যেতাম, বেশির ভাগই গোলাপ।
তারপর ছুটির সময়টা লেগে থাকা সেই আহলাদী গোলাপকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টায়
একুশে ফেব্রুয়ারী, বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসগুলোতে বাগানের ফুল গুলোকে বাচানোর জন্য আমি অনেক রাত পর্যন্ত বসে থেকেছি কতদিন!
তারপরও একবার দেয়াল টপকে এসে আমার চন্দ্র মল্লিকা, আর ডালিয়ার গাছ সহ উপরে নিয়ে গিয়েছিল বিজয় দিবসের অর্ঘ্য দেবার জন্য,
খুব কষ্ট পেয়েছিলাম সেই দিন।
চারা গাছ থেকে বড় করে তোলা, তারপর তাতে ফুল ফোটানো যে কি অনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। গাছগুলোকে তখন আত্মজের মতোই লাগে!!
তবে দু:খের বিষয় হলো, বাবার রিটায়ার্ডমেন্টের সময় হয়ে গেছে, সাধের বাগানটা এখন আমাদের ছেড়ে আসতে হবে।
আর আমি এম্নিতেও তো অনেক দূরে চলে এসেছি সেই ছোট্ট এক টুকরো স্বর্গোদ্যান থেকে।
এখন এই রোবোটিক আর বিশ্রী শহরে, চড়ুই পাখির মতো ফ্লাটে তেমন জায়গা কোথায় বাগান করার?
তারপরও বারান্দায়, ঘরের কোনে এখনও রেখেছি কিছু অক্সিজেনের ফ্যাক্টরী!
কিন্তু তাতে কি আর চোখ ও মনের শান্তি হয়? তাই আগারগায়ের বৃক্ষমেলা, ফুল আর বানসাইয়ের প্রদর্শনী গুলো আমি কখনোই মিস করি না!
যখনই দেখি বৃক্ষমেলা শুরু হয়ে গেছে, সেদিন থেকেই দিন গুনতে থাকি কবে যাবো, কবে যাবো!
আবার মেলায় গিয়েও শুরু অপসোসের অন্ত থাকে না!
আহারে এই গাছটা কিনতে পারলাম না, ইশ ঐ গাছটা কিনতে পারলাম না, জায়গা নেই, পর্যাপ্ত রোদ নেই
বইয়ে পড়া কত গাছই যে চিনালম এখানে এসে! ভেনাস ফ্লাই ট্রাপ, জাফরান, চামেলী, মালতি, লবঙ্গ, বেগুনি জবা, ঝুমকো লতা এই সব সেলিব্রেটিদের সাথে এখানেই আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল!
এবার আপনারাও দেখে নিন এদের.....
যদি হয় সুজন, তেতুল পাতায় নয় জন......
এই সেই বিখ্যাত তেতুল পাতা আর তেতুল ফুল। এটা অবশ্য সেই পেত্নীর বাসস্থান হিসাবে কুখ্যাত কালো শরীরের বিশাল তেতুল গাছ না, টবে রাখা গৃহপালিত ছোট্ট তেতুল।
এগুলো জুই ফুলের ঝাড়।
জুই ফুল দেখেতো আমি অবাক। আমার কল্পনায় জুই ফুলের আকার ছিল আরও বড়, গাছ হবে বৃক্ষ জাতীয়।
কিন্তু দেখলাম এটা আসলে গুল্ম ধরনের গাছ, আর ফুল গুলো খুবই ছোট ছোট......
তবে সুগন্ধটা অপার্থিব!
" ঐ মালতি লতা দোলে,
দোলে, পিয়ালো তরুরও.....
এই গানটা কে না শুনছে!! এই হলো সেই মালতি
এটাও লতানো গাছ, আর ইনিও আমার আশাভংগ করেছেন..
স্বপ্নচারীনি কবিতাকে জেমস বলেছিল তাদের ভালবাসা নাকি পদ্ম পাতার জল। এই যে দেখুন পদ্ম পাতায় জলের বিন্দু কেমন লাগে..
কাছে থেকে..
এগুলো পদ্ম ফল, এর মধ্যে বীজ থাকে। পদ্ম আর শাপলার বীজকে ড্যাপ বলে আর ড্যাপ থেকে তৈরি হয় ড্যাপের খই নামক এক রকম মুড়ি জাতীয় খাবার তৈরি করা হয়
পদ্ম চারা লাগানোর সিস্টেমটা আমার দারুন লেগেছে! এটা একটা বাতিল বাথটাব, এর মধ্যে কিছু মাটি আর পানি দিয়ে গাছটা লাগানো হয়েছে!!যাদের ছাদে বা বাসার লনে পদ্ম কিন্তু ফোটাতে পারেন........
"লেবু পাতায় করমচা,
যা বৃষ্টি চলে যা"
এটাই করমচা গাছ, এবং এটাও টবে লাগানো যাবে। ছোট ছোট হালকা লাল করমচা গুলো দেখতে খুব সুইট হলে কি হবে, খেতে ভয়ংকর টক
এই লাল টুকটুকে ফুলটার নাম নাকি অগ্নিশিখা!! তবে অগ্নিশিখা নামে আমি অন্য আরেক জন কে চিনতাম!
আমাদের ভার্সিটির (জা বি) এক স্যারের বাসায় দেখেছিলাম এই অগ্নিশিখার গাছ। বর্যায় যখন ফুলে ভরে যায় গাছটা, তখন এর নামের সার্থকতা বোঝা যায়।
ঝুমকো লতা....
শুকনো, অধামরার মতো দেখতে এই গাছটার নাম এয়ার প্লান্ট। ইনডোর প্লান্ট.....
বৃক্ষমেলায় মাঝে মাঝে সাপেরাও ঘুরতে আসে...
এখানে গাছ ছাড়ায়ও বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতির উপর বই, গাছের বিভিন্ন মেটেরিয়ালের বিভিন্ন রকমের টব এবং মধু, জ্যাম, জেলি জাতীয় খাদ্য দ্রব্যও কিনতে পাওয়া যায়
প্রথম দফায় কেনা কিছু গাছ, আর সাথে গাছের পাহারাদার..
বি.দ্র: ছাদ বাগানের সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন, " গ্রিন রুফ মুভমেন্ট' এর সাথে! এদের ঠিকানা: ৩৪৯ পশ্চিম রামপুরা, পলাশবাগ রোড, ফোন: ০১৭১১৪৩৪৬৪৭!
চলবে......??
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।