পাঠশালার ছাত্র এখনো
বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হীমশীতল জ্বরে কাঁপছে গোটা দুনিয়া। রেকর্ড পরিমান বরফে আটকে যাচ্ছে উন্নত বিশ্বের উন্নয়ন কর্মকান্ড। যে উন্নয়ন কর্মকান্ডের খেসারতে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর কপালেই রয়েছে ভবিষ্যৎ ভরাডুবির খাঁড়া।
শীতে কাঁপতে কাঁপতে সেদিন গভীর রাতে বাসটার্মিনাল গেছি গরম পরোটা-ডিম ভাজি খেতে। সে কি অবস্থা...শীতের প্রকোপের সাথে পাল্লা দিয়েছে বাতাস, কে কতোটা হীম ছড়াতে পারে... ফেরার পথে বিশাল একটা রেইন্ট্রি গাছকে ধরাশায়ী দেখলাম।
'সিডর'এ নিপতিত গাছটি দেখছি এখনো সরানো হয়নি। হাঁটতে লাগলাম আপন মনে। ঠান্ডার সুঁই-সুতো এফোঁড়-ওফোঁড় করে বিঁধছে আমার গরম কাপড়ের অজানা কোন অলিগলি দিয়ে ঢুকে। ঠান্ডা খেতে খেতেই এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে এগিয়ে চললাম। 'সবুজ শহর' বরিশালের এ কি হাল হচ্ছে? পরিকল্পিত আবাসন প্রক্রিয়ার অভাবে সবুজ হারাচ্ছে নগর।
যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে দালানকোঠা, গা'য় গা ঠেকিয়ে। কেউ এক চিলতে জায়গা ফেলে রাখতে আগ্রহী নয়। হঠাৎ করে নিজের কাছেই কেমন অপরিচিত লাগল চেনা শহর আর চেনা রাস্তাটাকে।
ঘরে ফিরেও ভাবনাটা গেল না মাথা থেকে।
ব্যালান্স হারাচ্ছে প্রকৃতি।
প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের অপরিমিত লোভে। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলাম এক সময়....
হঠাৎ ভিষন শ্বাসকষ্ট....আমি যেন পানির মধ্যে তলিয়ে যাচ্ছি......শ্বাস নিতে পারছি না কোনমতেই। একফোঁটা অক্সিজেন এর অভাবে খাঁচা ছিড়ে বেড়িয়ে যাবে যেন ফুসফুস। বহুদুর থেকে একটা ভোঁতা কন্ঠ ভেসে আসছে...যেন পানির মধ্যে কথোপকথন। আমি জবাব দিতে চাইলাম...পারলাম না।
বরং বিশ্রী শব্দে খক্খক করে কেশে উঠলাম।
সেই সাথে জেগে উঠলাম ঘুম থেকে।
ঘামে ভিজে গেছে আমার বিছানা বালিশ। কিসের শীত কোথায় কি?
পৃথিবীতে বেঁচে থাকবার প্রতিমুহুর্তের অতিপ্রয়োজনীয় অথচ অদৃশ্য বস্তুটির গুরুত্ব যেন নতুন করে উপলব্ধি করলাম। অক্সিজেন।
যা আমরা বিনামূল্যে পেয়ে থাকি।
কিন্তু এর উৎস ও সমাপ্তি নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই।
মনে পড়ে গেল...স্বপ্নের ভেতর কন্ঠটা আমাকে কি বলেছিল।
স্পষ্টই মনে পড়ে গেল।
মনে পড়ল- একটা ভূপতিত বৃক্ষ তাঁর ডালপালা হিংস্রভাবে দুলিয়ে বলেছিল- 'প্রকৃতিতে তোমাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে...হে মানুষ..তোমাদের কারনেই।
সৃষ্টিতে তোমরা বড্ড অলস, অথচ ধ্বংসে তোমাদের ভীষন তরিৎ তৎপরতা। তোমাদের জন্য তাই নতুন আইন পাস হচ্ছে। এখন থেকে যার যার অক্সিজেন এর খোড়াক তার নিজেকেই জোগাড়/তৈরি করে নিতে হবে। উপায় নেই বোকার দল।
যদি বাঁচতে চাও গাছ লাগাও এক্ষুনি....এক্ষুনি.....বেঁচে থাকার জন্য...প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য বন্ধ করে দাও তোমাদের তৈরি ক্ষতিকারক সব ফ্যাক্টরী।
ফ্যাক্টরী হবে- শুধু অক্সিজেন ফ্যাক্টরী। নতুবা কেয়ামত তরান্বিত। '
সারারাত ঘুমোতে পারিনি আর। কয়েক সেকেন্ডর অক্সিজেনের অভাব দুর্বল করে ফেলেছিল আমার শরীর-মন।
যদিও পরদিন সকালেই গেলাম দিব্যি ভুলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।