Miles to go before I sleep.....
(সাঈফ শেরীফের দারুন একটা পোস্টের কমেন্ট হিসেবে দিয়েছিলাম।
Click This Link )
পশ্চিমাদের শিখানো বুলি এবং তাদের কাছে মৌলবাদী সেজে যাব এই ভয়ের নিমিত্তে ইসলামকে কনটেক্সট ছাড়া শুধু শান্তির ধর্ম উল্লেখ করা আসলেই ভুল বার্তা প্রেরণ করে। ইসলাম তো খ্রিস্টিনিয়াটি, হিন্দুইজম(বুদ্ধিজম) এরকম অনেক ধর্মের মত নিতান্তই একটা ধর্ম না, এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা রাজনৈতিক দিক আছে। তাই সমাজতন্ত্র বা পূঁজিবাদ, জাতীয়তাবাদ বা বৈশ্বিকবাদ এসবের সাথে সাথে ইসলাম একটা রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিচয়েরও অধিকারী। আর স্বভাবতই কোন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক (এমনকি সামাজিকও) মতাদর্শ সার্বিক অর্থে শান্তির হতে পারেনা, কারন এরকম মতাদর্শ অন্যান্য মতাদর্শকে ভ্রান্ত বলে মনে করে আর সেজন্যই নিজে সলুশান দিতে চায়।
সকল রাজনৈতিক মতাদর্শই কনফ্রন্টেশনাল, তাকে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে অবশ্য কম্পিটিং মতাদর্শের সাথে কনফ্রন্টেশানে যেতে হবে। প্রকৃতপক্ষে নখদন্তবিহীন কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ বড় আকারে প্রতিষ্ঠা হওয়া সম্ভব না, সেরকম কোন তথাকথিত শান্তিবাদী মতাদর্শ হয়ত কিছু রাজনৈতিক দার্শনিকদের গবেষণার বিষয়বস্তু হবে, এর বেশি কিছু না।
প্রফেটের জীবনী পড়ে আমি যা বুঝেছি সেটা হচ্ছে ব্যক্তিগত স্পেকট্রামে প্রফেট খুবই কোমল এবং ক্ষমাবাদী ছিলেন, তাই ব্যক্তিগত দিক বিবেচনায় ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের মত শান্তির ধর্ম বলা চলে।
কিন্তু রাজনৈতিক-সামাজিক সুবিচার আর ইগ্যালিটারিয়ান অর্ডার তৈরীর জন্য তথাকথিত শান্তিবাদী হওয়া সম্ভব না, তাতে মতাদর্শের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধিত হয়না। আর সেজন্যই প্রফেটকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে কখনই তথাকথিত শান্তিবাদী বলা যাবেনা, সেটা যতই তিনি ব্যক্তিগতভাবে শান্তিকামী হোন না কেন।
ইসলাম যেহেতু একটা ইগ্যালিটারিয়ান সোসিয়ো-পলিটিকো-ইকনমিক অর্ডার তৈরীর জন্য মতাদর্শগত এবং বাস্তবায়নগত অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছে তাই রাজনৈতিক ইসলামকে শুধুই শান্তির ধর্ম ("ধর্ম" এখানে আসলে মিসনমার!) বলে পশ্চিমাদের হাততালি পাওয়ার চেষ্টা ভন্ডামীরই নামান্তর। প্ব্রাসংগিকভাবে প্রশ্ন আসে ইসলাম যদি রাজনৈতিক মতাদর্শ হয়, তাহলে পশ্চিমাদের চিরস্থায়ী জুজু যে ইসলাম ওয়ার্লড ডমিনেশান চায় সেটা সত্যি কিনা। সকল রাজনৈতিক মতাদর্শ তার ডমিনেশান বাড়াতে চাইবে, সেটা সত্যি। সে হিসেবে যে কেউ ইসলামী রাজনৈতিক মতাদর্শের অধিকারী হলে সেও চাইবে ইসলাম রাজত্ব কায়েম করুক, যেমনটা চায় সমাজতান্ত্রিকেরা বা পূঁজিবাদীরা। তবে সেটা প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলাম নিজেই ফোর্স করতে নিষেধ করেছে, হয়ত এখানেই রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে ইসলাম অন্যান্য মতাদর্শ থেকে ভিন্ন।
যদি কোন জনগোষ্ঠী নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক আকাংখা বাস্তবায়ন করার জন্য ইসলামকে কনডিউসিভ মনে করে, তাহলে তারা ইসলামী রাজনৈতিক আদর্শের জন্য প্রথমে মনোজাগতিক পরিবর্তন এবং এরপরে রাজনৈতিক পরিবর্তনের দিকে যেতে পারে, যেমনটা আমরা প্রফেটের জীবনীতে দেখি।
পরের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হচ্ছে সহাবস্থান সংক্রান্ত। সকল রাজনৈতিক মতাদর্শই কনফ্রনে্টশনাল, তবে সমাজতন্ত্র আর ইসলাম একটু বেশিই কনফ্রন্টেশনাল (যদি আমরা শুধু ইসলামের রাজনৈতিক আসপেকটটাকেই ধরি)। আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্যি হল সমাজতন্ত্র আর ইসলামী রাজনৈতিক মতাদর্শের লক্ষ্য খুবই কাছাকাছি, তবে সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রেসক্রিপশানটা অবশ্য অনেকটাই ভিন্ন। সকল রাজনৈতিক মতাদর্শ কনফ্রন্টেশনাল হলেও আমরা দেখি মোটাদাগে কম্পিটিং রাজনৈতিক মতাদর্শের সহাবস্থান সম্ভব।
কেন সম্ভব সেটা অর্থনীতির গেইম থিয়রী মূল ধারণা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়। রাজনৈতিক মতাদর্শগুলো নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই অন্যান্য কম্পিটিং মতাদর্শের সাথে সহাবস্থানে থাকবে! কোল্ড ওয়ারের সময় যে কারনে এমেরিকা আর সোভিয়েট ইউনিয়ন একে অন্যকে পারমানবিক অস্ত্র দ্বারা সম্পূর্ণ বিলোপ করার চেষ্টা করেনি সেকারনটা এখানেও প্রযোজ্য। গান্ধীর সে উক্তিটার মতই "এন আই ফর এন আই মেইকস এভরিওয়ান ব্লাইন্ড" এর মতই। তাই ইসলাম রাজনৈতিক মতাদর্শ হলেও অন্যান্য মতাদর্শের সাথে সহাবস্থান খুবই সম্ভব। তাছাড়া আমরা তো ইতিহাসে ইসলামী খিলাফাতের আমলে যে কোন স্ট্যান্ডার্ডে সবচেয়ে পিসফুল কোএক্সিসটেন্স-এরই সাক্ষ্য পায়।
"মোহাম্মদের অনুসারীরা নাংগা তলোয়ার হাতে তীব্র বেগে ঘোড়ার পিঠে চড়ে রক্তের হোলিখেলার জন্য মত্ত হয়ে আছে আর সবাইকে ধরে ধরে মুসলমান বানাচ্ছে" এই ভ্রান্ত ইমেইজটা এখনও ব্রেইনওয়াশড সেক্যুলার এযুকেটেড এবং আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগা আর পশ্চিমা ধ্যানধারণাকে সার্বজনীনভাবে সেরা মনে করা পাবলিকের মননে গেঁথে থাকলেও পশ্চিমা স্কলাররাই এসব গাঁজাখুরী কাহিনি ডিসকাউন্ট করে দিয়েছেন অনেক আগেই। উল্লেখ্য যেসব ধর্মকে রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসেবে সেসব ধর্মের অনুসারীরা মানতে নারাজ (যেমন ক্রিস্টিয়ানিটি, হিন্দুইজম) সেসব ধর্মের অনুসারীদের হাতও বিপরীত মতের লোকের রক্তে কালিমালিপ্ত, বরং অনেকক্ষেত্রে অনেক বেশীই কালিমালিপ্ত। এই একজায়গায় এসে নাস্তিক-আস্তিক-বৌদ্ধ-ইহুদী-খ্রিস্টান-মুসলিম-হিন্দু সবাই একাকার!
যাই হোক, প্রসংগান্তরে চলে গিয়েছি। মূল কথা হচ্ছে, ইসলামকে নখদন্তবিহীন শান্তির ধর্ম বলার উপায় নেই। প্রকৃতপক্ষে, কোন রাজনৈতিক মতাদর্শকেই "শান্তির" মতাদর্শ বলার উপায় নেই।
তাই ইসলামকে যদি আমরা রাজনৈতিক-সামাজিক-অর্থনৈতিক অল-এনভেলপিং মতাদর্শ হিসেবে চিহ্নিত করি, তবে অবশ্যই ইসলাম তথাকথিত শান্তির ধর্মের ডেফিনিশান এবং নেসেসারী-সাফিসিয়েন্ট কন্টিডিশান কোনটাই সেটিসফাই করেনা।
মূলকথা হচ্ছে "শান্তির ধর্ম -অশান্তির ধর্ম" এরকম বাইনারী ক্যাটাগরীতে শুধু ব্ল্যাক-এন্ড-ওয়াইট এই দুইভাগে যেমন পৃথিবীর তাবৎ মতাদর্শকে ফেলা যায়না, তেমনি ই্সলামকেও না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।