আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলিটিকাল ইসলামের দুই মুখ। বাঙালি মুসলমানের মুখ কোন দিকে? - ১

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র “স্বয়ং হযরত মুহম্মদ নবুয়ত লাভের পূর্বে মধ্যে মধ্যে নিভৃত চিন্তায় মগ্ন থাকতেন হেরা পর্বতের গুহায়। ভোগ বিমুখতা ও বিষয়ে অনাসক্তি তার চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট”। - আহমদ শরীফ (বাঙলার সূফীসাধনা) ফিরে যাও, আমি কোন মুশরিকএর সাহায্য নেবোনা –হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ( বদরএর যুদ্ধে মুসলিমদের পক্ষে যুদ্ধ করতে আসা এক অমুসলিমএর উদ্দেশ্যে। সহিহ মুসলিম) আবু উমাইয়া, আমরা আগামীকাল যুদ্ধে যাবো। তোমার অস্ত্র আমাদের ধার দাও ( অমুসলিম সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ।

ইবনে হিশাম) হাদিস সমালোচনায় বর্ণনাকারীকে গুরুত্ব না দিয়ে যদি হাদিসএর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়া হতো তাহলে হাদিসগুলোর বড় অংশই বাতিল হয়ে যেতো – ইবনে খালদুন ( মুকাদ্দিমাহ) সহিহ মুসলিমএর হাদিসটা ছাগুদের পছন্দ হবে। এই হাদিসএর রেফারেন্স টেনে তারা বলতে পারবে যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রামে মুশরিক ইন্ডিয়ার সাহায্য নেয়া ঠিক হয়নাই। হিজুরাও এই হাদিসে খুশি হবে, সারা দুনিয়াকে মুসলিম বনাম অমুসলিম মেরুকরণে এই হাদিস তাদের কামে দিবে। তবে মডারেট মুসলমানদের পছন্দ হবে ইবনে হিশামএর রেফারেন্স। কারন সাফওয়ান ছিলেন মুহাম্মদএর মহাশত্রুদের একজন, মক্কা বিজয়এর পরেও তিনি মুসলমান হন নাই দীর্ঘদিন এবং অমুসলিম থাকা অবস্থাতেই মুহাম্মদ তার কাছে সাহায্য চাইছেন।

এই রেফারেন্সএর সুবাদে সহিহ সেক্যুলার বঙ্গিয় মডারেট আওয়ামী মুসলমানের মন্ত্রী মিনিস্টারগণ বিশ্ব ব্যাংকএর কাছে এই দেশীয় জনগণএর নিতম্ব বিক্রি করে দিয়াও সাহায্য নেয়া জায়েজ করতে পারেন। আহমদ শরীফএর উক্তিখানা ব্লগিয় ও ফেসবুকিয় ক্রম যুদ্ধরত আস্তিক এবং নাস্তিক দুই গ্রুপের জন্যেই কিঞ্চিত অস্বস্তিকর হবে। আহমদ শরীফএর কোন লেখা জীবনেও পড়ে নাই, এবং বাঙালি মুসলমানএর মান সম্মান রক্ষার্থে তার অবদান সমন্ধে বিন্দুমাত্র ধারনা না থাকলেও আহমদ শরীফএর লাশ নিয়া আজব গুজবে যারা বিশ্বাস করেন তাদের অস্বস্তির কারন বুঝা সহজ। নাস্তিকএর অস্বস্তির কারন বুঝা তার চেয়ে একটু কঠিন। আধুনিক ব্লগিয় নাস্তিকগণ মুহাম্মদএর বউএর সংখ্যা, বয়স ইত্যাদি বিষয়ে বেশি আগ্রহী।

আহমদ শরীফ সেগুলা নিয়া লিখলে তাদের বড় অংশই স্বস্তিবোধ করতো। আহমদ শরীফ যদি লিখতেন যে মুহাম্মদ ভোগবিলাসী, ক্ষমতা আকাঙ্খি ও লম্পট ছিলো সেইটাতে তারা স্বস্তিবোধ করতো। কিন্তু আহমদ শরীফ উলটা লিখেছেন। ইবনে খালদুনরে নিয়া আরেক হ্যাপা। এই লোক ইতিহাস বিজ্ঞানের জনক বলে পরিচিত, পূর্বে পশ্চিমে সারা দুনিয়ায় সমান ভাবে সম্মানিত।

ইতিহাসকে মিথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উত্তির্ণ করার অবদান তার। তিনি যখন বলেন এই কথা তখন শরিয়তী ইসলাম কায়েমএর মধ্য দিয়া যারা আধুনিক দুনিয়ায় খেলাফতএর স্বপ্ন দেখেন অথবা সেই স্বপ্ন না দেখলেও শরিয়তে ভরশা রাখেন তারা পরেন ফাপরে। বিভিন্ন হাদিস থেকে মুহাম্মদএর বিরুদ্ধে নানান আদী রসাত্মক এবং ভয়ঙ্কর উপাদান খুজে তারে নৃশংস, বর্বর, লম্পট বানানোতে যারা ব্যস্ত থাকেন তাদের জন্যেও হালকা ফাপর আছে। হাদিস, সিরা এগুলা যদি মুহাম্মদ বিষয়ে অথেন্টিক সোর্স না হয়, তাইলে মুহাম্মদের চারিত্রিক সনদ তারা ক্যামনে দিবে? কে তাহারে চিনতে পারে? “এসে মদিনায়, তরিক জানায়। তরিক জানায় এ সংসারে।

কে তাহারে চিনতে পারে?” প্রশ্নটা লালনএর। এমনিতে আমরা অনেকেই ভান করি যে আমরা তারে চিনি, যারা তার উম্মত তারাও আবার যারা তার গিবত গাই তারাও। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ কে ছিলেন, কেমন ছিলেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত ধারনা পাওয়া কষ্ট। তার শিক্ষা ও শিক্ষার ভাবাদর্শ কি কি তা নিয়াও বিভিন্ন ইসলামি মাজহাব এবং ইসলাম বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। এর পেছনে কারন আছে।

ঐতিহাসিক তথ্য মতে মুহাম্মদএর জীবনী যেগুলা সিরা নামে পরিচিত সেগুলা রচিত হইছে তার মৃত্যুর অন্তত শখানেক বছর পরে। হাদিস গ্রন্থগুলা প্রায় দুইশ বছর পরে। আধুনিক যুগে মাত্র ৪০ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই আমাদের কাছে নানান বিকৃতি নিয়া হাজির, আর এইটা তো ১৪০০ বছর আগের কথা। গোয়াড় না হইলে এইখানে সমস্যা কোথায় তা বুঝতে কারো সমস্যা হওয়ার কথা না। পলিটিকাল ইসলাম ও মুহাম্মদ মুহাম্মদরে চিনার চেষ্টা করা এই লেখার উদ্দেশ্য না।

সেইটা অনেক বড় কাজ। তবে মুহাম্মদএর রাজনীতি এইখানে ধরার কিঞ্চিত চেষ্টা করা হচ্ছে। মুহাম্মদএর রাজনীতি বুঝার চেষ্টাও আধুনিক কালে ব্যবহৃত ‘পলিটিকাল ইসলাম’ শব্দের মুখ বা দিক খুজতে গিয়াই। পলিটিকাল ইসলাম কি জিনিস তা নিয়াও মতভেদ আছে। এই ব্লগেই কিছুদিন আগে এক পোস্টে বিভিন্ন মত পাওয়া গেলো।

এমনিতে ইসলাম রাজনীতি বিযুক্ত কোন ধর্ম না। মুহাম্মদ নিজেও একজন রাজনীতিবীদ ছিলেন। সুতরাং ইসলাম এমনিতেই রাজনৈতিক হওয়ার কথা। সুতরাং ইসলামএর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেইকা বর্তমান দুনিয়ার রাজনীতিরে ডিল করার যেই রাজনীতি সেইটাই পলিটিকাল ইসলাম, এইটা পলিটিকাল ইসলামএর ব্যাখ্যায় আদর্শ বক্তব্য। আমিও এমনটাই বলছিলাম সেই পোস্টে।

পোস্ট লেখক রাতুলবিডি কইলেন যে পলিটিকাল ইসলাম শব্দটাই পশ্চিমাদের বানানো। সেইখানে আমি যেই দাবি করেছিলাম তা হইলো যে পলিটিকাল ইসলাম আর ইসলাম নিয়া পলিটিক্স ভিন্ন জিনিস। আমার এই কথাটার ভালো কাউন্টার দিলেন গার্ডেড ট্যাবলেট, তিনি কইলেন যে আদতে আধুনিক দুনিয়ায় ইসলাম সংশ্লিষ্ট তাবৎ রাজনীতিই পলিটিকাল ইসলাম। বাস্তবতা বিচারে গার্ডেড টাবলেটএর এই বক্তব্য আমি উড়ায়া দিতে পারিনাই। কিন্তু এই বাস্তবতা গ্রহণ করলে পলিটিকাল ইসলামএর মুখ বা দিক বুঝা আরো কঠিন হয়।

কারন ইসলাম সংশ্লিষ্ট রাজনীতি বারাক ওবামা থেইকা শুরু করে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া, মতিউর রহমান নিজামী সবাই করেন। ইসলাম নিয়া রাজনীতি হিজুরাও করে এবং আওয়ামীলীগও করে। এইসবেরে মিলা পলিটিকাল ইসলামএর গতি প্রকৃতি বুঝা একটু কষ্ট হয় বটে। তাও বলা যায়যে বর্তমান দুনিয়ায়, বিশেষ করে ৯/১১ পরবর্তি দুনিয়ায় পলিটিকাল ইসলামএর মুখ বা গতি প্রকৃতির একটা সরল চেহারা আছে। সেই সরল চেহারায় বুশ আর লাদেনএ ফারাক নাই।

সেই সরল চেহারায় ব্লগিয় হিজু, ছাগু এবং ভারতিয় বিজেপি ও সদা ইসলাম বিষয়ে গিবতে রত নাস্তিকে ফারাক নাই। কারন এরা সবাই মুহাম্মদএর রাজনীতির একি ইন্টারপ্রিটেশন মেনে নিয়েছেন। হাদিসএর যেই আয়াত ব্যাবহার কইরা একজন জিহাদ ডাকেন, অন্যজন সেই একি আয়াত ব্যাবহার করেন অপরজনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিতে। জিহাদী অথবা সন্ত্রাসী এই দুইএর এক হওনের বাইরে যেনো আধুনিক মুসলমানের আর কোন রাজনৈতিক দিকদর্শন নাই। মুহাম্মদ আর ইসলামএর এই পাঠ দুই পক্ষেই প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক, এইখানে যেই রাজনীতি সেই রাজনীতির আসল শক্তিই সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি।

পলিটিকাল ইসলামএর এই এক মুখ আমাদের সবারি অতিপরিচিত হইয়া উঠছে ইদানিং। কিন্তু অস্ত্র হাতে যুদ্ধই রাজনীতি না। আহমদ শরীফ মোহাম্মদএর যেই চরিত্র ব্যাখ্যা করেন তা করেন বাঙলায় সুফিবাদএর বিকাশ ব্যাখ্যা করতে গিয়া। এইযে ভোগবিমূখ মোহাম্মদএর চরিত্র তিনি আকছেন এই চরিত্রে কি রাজনীতি নাই? ভোগবিমূখতাও একটা রাজনীতির বিষয়। ঠিক যেমন আধুনিক পূজিবাদী ভোগবাদ একটা প্রচন্ড রকম রাজনৈতিক বিষয়।

এই ভোগবাদ আধুনিক দুনিয়ার তাবৎ রাজনীতির মূল শক্তি। বদর, উহুদ, খাইবারএর যুদ্ধে মুহাম্মদরে নিয়া যেই রাজনীতি সেই রাজনীতির ডিসকোর্স প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধ পরিকর জিহাদী এবং সেই জিহাদীদের সন্ত্রাসী যারা বলেন তারা এইসব ডিসকোর্সএর পক্ষের হাদিসে ইন্টারনেট ভরে ফেলেছে। কিন্তু এর বাইরেও হাদিস আছে, এর বাইরেও সিরার বহু কাহিনী আছে। যেইসব কাহিনীতে দেখা যায় মুহাম্মদ খোদার দুনিয়ায় সবাইরে সমান দাবি করছেন, দরিদ্রদের সাথে নিয়া ধনীদের বিরুদ্ধে রাজনীতি করছেন, দাসদের সম্মান দিয়া বুকে টাইনা নিচ্ছেন, সামাজিক ঐক্যের কথা বলছেন, সূদ ব্যাবসার বিরুদ্ধে রাজনীতি করছেন, ভোগবাদএর বিরোধীতা করছেন এবং পাড়া প্রতিবেশীর হক আদায়এর দাবি রাখছেন। এইখানেও ব্যাপক রাজনীতি আছে।

সেই রাজনীতি হইতে পারতো পলিটিকাল ইসলামএর আরেক মুখ। কিন্তু তা হয়নাই। কারন পুজিবাদী মুসলমানেরা প্রতিবেশীর হক নিয়া চিন্তিত না, ভোগবাদ তাদের মজ্জাগত। তার তুলনায় মুহাম্মদ বিষয়ে পশ্চিমা রাজনীতির মঞ্চে রোল প্লে করা সহজ। (চলবে) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.