আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নময় ভূবনের খোঁজে

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।

৩১ আগষ্ট মঙ্গলবার। বিকাল ৫.০০ টায় শিশু বিকাশ ছায়া নামে একটি স্কুলে যাব। ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী আবাসিক এলাকা ওয়ারীতে স্কুলটি অবস্থিত।

এই স্কুলের জেনারেল সেক্রেটারী প্রফেসর এ.এন. রাশেদা ম্যাডাম মোবাইলে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন স্কুলটি দেখতে আসার জন্য। স্কুলে কিছু সুবিধা বঞ্চিত ছেলে থাকে। প্রায় ১৮ জন শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীদের মাশরুম প্রশিক্ষণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যায় কিনা? সোজা কথায় কর্মসংস্থানমূলক শিক্ষার সম্ভাব্যতা যাচাই। আমি প্রস্তাবটা লুফে নিলাম।

রাশেদা আপার সাথে আমার পরিচয়টা কাকতালীয়। কর্মসংস্থানমূলক শিক্ষা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত মত বিনিময়ের জন্য সুযোগ পেলেই নানান ব্যক্তির কাছে চলে যাই। সুযোগ করে একদিন গেলাম আমাদের শিক্ষা বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি জনাব রাশেদ খান মেনন, এমপি'র অফিসে। সাথে আমার সহকারী সোহেল। স্যার মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনলেন।

মেঘনাপাড় স্কুলের ১৪০ জন শিশুর শিক্ষার যুদ্ধের কথা শুনলেন। এই শিশুদের নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা বললাম। কিছু সম্মানিত ব্যক্তিত্বের কাছে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন। এর মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী ম্যাডামের সাথে মতবিনিময়ের পরামর্শ ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। কতিপয় তরুণ উদীয়মান সংগঠকের অনলাইন ম্যাগাজিন 'মঙ্গল ধ্বনির' বিপ্লবের কাছ থেকে রাশেদা আপার নাম্বারটা পাওয়া।

একদিন সময় বুঝে মোবাইলে ফোন করে আপার সাথে অ্যাপয়েনমেন্ট করি। নির্দিষ্ট দিনে সময়মত বাড্ডার বাসায় হাজির হই। কিন্তু পত্র পত্রিকায় দেখা রাশেদা কে চৌধুরীর সাথে আপাকে মেলানো যাচ্ছে না। বুঝতে পেরেছি যে ভুল বাসায় চলে এসেছি কিন্তু ইনি তাহলে কোন রাশেদা? ড্রইংরুমে আন্তরিক পরিবেশে আপার সাথে কর্মসংস্থানমূলক শিক্ষার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা হয়। কথায় কথায় আপার পরিচয় জানতে পারি।

মাত্র কিছুদিন আগে অধ্যাপনা থেকে অবসর নিয়েছেন। নডরডেম কলেজে অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা 'শিক্ষাবার্তা'র সম্পাদক। পুরো নাম আফরোজান নাহার রাশেদা। সংক্ষেপে এএন রাশেদা।

আর উপদেষ্টা মহোদয়ের নাম রাশেদা কে চৌধুরী। ভুল যা হবার তাতো হয়েই গিয়েছে। কিন্তু আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমি সঠিক জায়গায় চলে এসেছি। হাসতে হাসতে আপাকে তা বললামও। কথায় কথায় জানলাম এই মহিয়সী নারী এবং সমাজের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি মিলে একটি স্কুল করছে ঢাকার ওয়ারীতে।

একদিন স্কুলটি দেখতে যাব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলাম। ৩১ জুলাই সেই স্কুলটি দেখতে চলে গেলাম। একে একে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিতে জড়িত ব্যক্তিবর্গ আসলেন। প্রত্যেকের সাথে আনুষ্ঠানিক পরিচয় ঘটল। শিশু বিকাশ ছায়ার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাহফুজা খানম এর সভাপতিত্বে স্কুলের অভ্যন্তরীণ মাসিক সভা শুরু হল।

অনার বোর্ডের সামনে থেকে ক্রমান্বয়ে ডানে বসা ব্যক্তিদের পরিচিতি- শিশু বিকাশ ছায়ার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মাহফুজা খানম। মাহফুজা আপার আরেকটি পরিচয় হচ্ছে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক। জয়েন্ট সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট রানী আক্তার। ডান পাশের জন সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ভাইস প্রিন্সিপ্যাল। (দুঃখিত স্যারের ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করতে পারিনি বলে নামটি স্মরণ করতে পারছি না।

প্রফেসর কাজী নুসরাত সুলতানা, ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রফেসর এ.এন রাশেদা, জেনারেল সেক্রেটারী। সালমা বেগম, ডিরেক্টর (জিওফিজিক্স), ট্রেজারার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফ্যাকাল্টি অব ফাইন আর্টের ডিন প্রফেসর ইএইচএম মাতলুব আলী। (স্যারকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে না।

) স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক জনাব ফারুক হোসেন। অভ্যন্তরীণ সভা চলছে। এই সুযোগে আমি স্কুলটি ঘুরে ফিরে দেখছি। বাচ্চাদের সাথে কথা বলছি। সবার গায়ে ঈদের নতুন পোশাক।

আজই দেয়া হয়েছে। স্কুল ছুটি, সবাই বাড়ি যাবে। আজ রাতে কেউ কেউ চলে যাবে। অন্যরা আগামীকাল যাবে। ঈদের ছুটি শেষে আবার সবাই চলে আসবে এখানে- যেখানে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বপ্ন সবে অঙ্কুরিত হতে চলেছে।

শিশু বিকাশ ছায়ার শিশুরা। ইএফএলবিডি গবেষণা সহকারী সোহেলের সাথে শিশু বিকাশ ছায়ার শিশুরা। ডোনারদের তালিকা। ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তে মিটিং শেষ হয়। মিটিং শেষে শিশু বিকাশ ছায়ায় কর্মসংস্থানমূলক কি বিষয় নিয়ে কাজ করা যায় তা আমি ব্যাখা করি।

ঈদের পর আরেক দিন স্কুলে এসে মাশরুম চাষ সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করার প্রতিশ্রুতি দেই। সভা শেষ হয়। আমরা যার যার বাড়ির পথ ধরি। একটি স্বপ্নকে ধারণ করে আমরা বিদায় নেই। পরম মমতায় শিশুদের ঈদের সালামী দিচ্ছেন রাশেদা আপা।

বিদায় বেলা হাস্যোজ্জ্বল মাহফুজা আপা। এই শিশুদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার, আমার, সবার। ভবিষ্যতে সম্মিলিতভাবে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আমরা আরও এগিয়ে যাব- এই শুভকামনা। সবাইকে মেঘনাপাড় ধীবর বিদ্যানিকেতন এবং শিশু বিকাশ ছায়ার পক্ষ থেকে অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।