আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্নময়!

মানুষ তার আশার সমান বড়...

স্বপ্নময়ের একটা বিশেষ ভালো দিক হচ্ছে সে মানুষের সামনে কাঁদতে পারেনা। এটা তার একটা বিরাট পাওয়া। তবে, সব কিছুতেই ফুটো থাকে। তার এই প্রাপ্তিটুকুতেও ফাঁকিবাজি আছে। সেও কাঁদে।

তবে, তা মনে মনে। চোখের জলে কান্নার তৃপ্তি আছে, মনের কান্নায় তা নেই। মানুষকে কান্নার পানি দেখাতে তার বড্ড ভয় করে। যদি দুর্বল হয়ে পড়ে? অথচ অনেক নিশিরাত সে কাটিয়েছে চোখের জল ঝরিয়ে। নিরবে বয়ে যাওয়া সে কান্নার রাত্রিগুলো তার জীবনের একেকটি বুক ভাঙ্গা কষ্টের রাত্রি।

সেসব ভেবে সে কখনো মনমরা থাকে না। তবে, মাঝে মাঝে বিষন্নতা খুব বেশি নাড়ায় তাকে। সে ছুটে যায় এদিক, ওদিক। সেনে কারো কথা, কান্না, হাসি তার ভেতরে প্রবেশ করে না। সে হয়ে যায় যেন অন্য ভুবনের বাসিন্দা।

তখন তার না থাকে কোনো সুখ, না থাকে কোনো দুখ। আজ তার মন ভালো নেই। মন ভালো না থাকলে সে খুব কম কথা বলে। কাশরুমের জানলা দিয়ে বাইরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কাশ শুরু হয়, কাশ শেষ হয়... তার ধ্যন ভাঙ্গে না।

কোলাহল করে সবাই। কাছাকাছি হাসি ঠাট্টার রোল ওঠে, তার কানের ভেতর খুব কমই সেসব প্রবেশ করে। কাশ শেষে সবাই একে একে বিদেয় হয়। থেকে যায় সে। অনেকন পর তার ধ্যন ভাঙ্গে।

অলস ভাবে সে চারদিকে তাকায়। এককোনে 5/6 জন এখনো রয়ে গেছে। নিলয়, সুমা, লিন্ডা, হাসানদের দেখে সে এগিয়ে এসে কাছাকাছি সিটে বসে। তারপর কি দেখা হচ্ছিল বাইরে...? পঙ্খিটঙ্খি পাওয়া গেল না? ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করে- লিন্ডা। স্বপ্নময় হাসে।

মরা হাসি। ভিটামিন নেই যে হাসিতে। এভাবেই শুরু... সময় যায়, আড্ডা দৌড়ায়। একসময় হাসিঠাট্টা থামিয়ে সুমা প্রশ্ন করে সবাইকে, "আচ্ছা আমি যদি কাল মারা যাই, তবে তোমরা কে কি ভাববা?"। আজব প্রশ্ন! সবাই একে অপরের দিকে তাকালো।

হাসান বললো- "এটা কেমন প্রশ্ন হলো? অ্যাঁ, আজরাইল কি সত্যিই তোমাকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে!" সবাই হেসে ওঠে। স্বপ্নময়ের এমনিতেই মনটা ভালো নেই। তারপরও মুখ খোলে- "দেখতে হবে তোমার মৃতু্যটা কিভাবে আসে? যদি এক্সিডেন্ট করো, তাহলে আমার একরকম ভাবনা হবে। যদি ঘুমের মধ্যে মরো, সেটাও আরেক ভাবনার কথা; কিন্তু যদি আত্মহত্যা করো... তাহলে একটা কথা মরার আগে শুনে যাবার দরকার তোমার! সবাই কান সজাগ করে শুনার প্রতীায় অধির। সুমা মুখটা সাদা করে বলে- কি কথা? যদি আত্মহত্যা করো তবে, আমার ভাবনা হবে... তুমি মৃতু্যর আগ পর্যন্ত বোকা-ই ছিলা।

হাত তালি... চারদিক হাত তালিতে মুখোরিত হলো। জোস ভাবনা, নিলয় মুখ খুলে। সুমা খুব চেষ্টা করেমুখে হাসি ফুটাতে। পারেনা। মিনমিনিয়ে বলে- কেন তোমার এমন ভাবনা হলো? --- আমি হলে আত্মহত্যার কারণটাকে সঙ্গি করে সাইন করতাম।

একটা কথা আছে না, বিষে বিষয়। কিযে সোভাগ্য তোমার! গম্ভির মুখটায় হাসি ফুটিয়ে স্বপ্নময় রহস্য ফুটানোর চেষ্টা করে। সফলও হয়। --- সুমা আর নিজেকে সামলাতে পারেনা। জানলার পাশে চলে যায়।

গুমরে সে কেঁদে ওঠে। খুব চেষ্টা করে কান্না থামানোর, পারেনা। সবাই খুব অবাক হয়। এতদিন সুমাকে সবাই শক্ত ধাতুর তৈরী বলে জানতো। এখন বেরিয়ে এসেছে তার অন্য রূপ।

সবাই স্তম্ভিত। কি এমন দুঃখ তার? এত কাছাকাছি থেকেও তা কেউ জানেনি? স্বপ্নময় কাউকে সান্তনা দিতে জানেনা। সে বেরিয়ে আসে কাশরুম থেকে। গরম বাতাস বাইরে। যেন কেউ অদৃশ্য আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে ঢাকার বাতাসে।

রাস্তা পার হয়ে বাস ধরতে হবে। ওভার ব্রিজ রয়েছে। প্রতিদিন সে ওভার ব্রিজ দিয়েই রাস্তা পার হয়। আজকাল কেন জানি তার আইন ভাঙ্গতে খুব ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে নিয়ম ভাঙ্গতে... রিক্স নিতে।

রিক্স...! বয়সটাই এমন। মৃতু্যচিন্তা এ বয়সে তেমন একটা আসেনা। এ বয়সে 'মরে যাব' ভাবতেই একটা রোমহর্ষক রহস্য জেগে ওঠে। সুমার ভেতর সেটাই এখন বসত করেছে। মানুষ... কত বৈচিত্রময় মানুষ পৃথিবীতে...।

--(2)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।