অজানাকে জানতে ছুটছি অবিরাম...!
৩১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে তথাকথিত ‘ইরাক যুদ্ধ’ শেষ করল আমেরিকা। প্রধানমন্ত্রী মালিকির মতে, ইরাক এখন থেকে স্বাধীন। ইরাকের নিরাপত্তা দেশের সেনারাই নিশ্চিত করবে। দেশটির সেনাবাহিনীও সেই চেষ্টাই শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাজধানী বাগদাদে রাস্তায় টহলরত এক ইরাকি সেনা তাদের সহায়তার জন্য দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানায়, বিলি করে লিফলেট।
কিন্তু ইরাকিরা কি নিরাপত্তা নিয়ে এ সেনাদের ওপর ভরসা রাখতে পারছে...?
পর্যবেক্ষক
সাত বছর পাঁচ মাস ১১ দিন পর ইরাক যুদ্ধের প্রতীকী সমাপ্তি টেনেছে আমেরিকা। ২০০৩ সালের ২০ মার্চ শুরু করা কথিত এ যুদ্ধ মঙ্গলবার মধ্যরাতে শেষ হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ক্ষমতা গ্রহণের সময় যুদ্ধ শেষের এ দিন-তারিখ ঘোষণা করেছিলেন। যুদ্ধ সমাপ্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি। এক ভাষণে তিনি ‘ইরাক আজ থেকে স্বাধীন’ উল্লেখ করেছেন।
এদিকে মিশন শেষ উপলক্ষে অঘোষিত সফরে ইরাকে অবস্থান করছেন আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এছাড়া আমেরিকার ওভাল অফিস থেকে আমেরিকার জনগণের উদ্দেশে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে ভাষণ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
‘ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে’ ্অজুহাতে ইরাকে আগ্রাসন শুরু করেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। আমেরিকার সঙ্গে যোগ দেয় বৃটেন। ‘অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম’ নামে এ আগ্রাসনের কিছুদিন পর প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পরাজয় এবং পরে তাকে ফাঁসিতে ঝুলালেও ইরাক যুদ্ধ শেষ হয়নি।
সাড়ে সাত বছরের এ যুদ্ধে দেশটিতে মারা গেছে এক লাখ ছয় হাজার ৩৪৮ জন বেসামরিক ইরাকি (মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য থেকে ওয়েবসাইট আইক্যাজুয়ালিটিসের হিসাব)। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর কয়েকগুণ হবে। কারণ হাজার হাজার ইরাকির কোনো হদিস নেই। অন্যদিকে দখলদার আমেরিকান সেনা মারা গেছে চার হাজার ৪০০ জনের মতো।
যুদ্ধ শেষের প্রক্রিয়া হিসেবে সপ্তাহ দুই আগে ইরাক থেকে যুদ্ধসেনাদের প্রত্যাহার করে আমেরিকা।
তবে এখনো দেশটিতে ৫০ হাজারের মতো সেনা অবস্থান করছে। তাদের কাজ হবে ইরাকি সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সমর্থন দেয়া। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ইরাকে এক লাখ ৭০ হাজার আমেরিকান সেনা অবস্থান করছিল।
ইরাক যুদ্ধ শেষ নিয়ে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমেরিকান জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। এর আগে ইরাক থেকে সদ্য ফিরে আসা সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তিনি টেক্সাসের সেনাঘাঁটিতে যান।
এদিকে আজ বুধবার ইরাকে আমেরিকার ‘কমান্ড এবং মিশন বদল’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাগদাদে অবস্থান করছেন আমেরিকার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অপারেশন ইরাকি ফ্রিডম থেকে নাম বদলে করবেন ‘অপারেশন নিউ ডন’। এরই মধ্যে তিনি বাগদাদে ইরাকিদের আশ্বস্ত করেছেন, ‘তারা (ইরাকিরা) ভালোর দিকে যাচ্ছে। ’
কিন্তু কতটুকু ভালোর (!) দিকে যাচ্ছে তা অনুধাবন করতে পারছে ইরাকিরা। কারণ গত মাসের মাঝামাঝি ইরাকের ১০টি শহরে একযোগে গাড়িবোমা হামলার ঘটনায় ৬৩ জন নিহত ও কয়েকশ মানুষ আহত হয়।
ওই যুগপৎ হামলার লক্ষ্য ছিল নিরাপত্তা বাহিনী। এতে ইরাকিদের প্রশ্ন- যারা নিজেদের নিরাপত্তা দিতেই ব্যর্থ তারা কিভাবে দেশের জনগণের নিরাপত্তা দেবে। এছাড়া ৭ মার্চ দেশটির নির্বাচন হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকার গঠিত হয়নি। নেতৃত্বহীন ইরাকের এমন পরিস্থিতিতে ‘আমেরিকান সেনাদের ২০২০ সালের আগে ইরাক ছাড়া করা উচিত নয়’ বলে মন্তব্য করেন ইরাকের উচ্চপদস্থ এক সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ইরাকিদের অজানা যুদ্ধের ময়দানে রেখে চলে গেল আমেরিকা।
এ নিয়ে সাদ্দাম হোসেন সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আজিজের মন্তব্যও যথার্থ। তিনি বলেছেন, ইরাককে হায়নার মুখে ফেলে সটকে পড়ল আমেরিকা।
তবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকি বলেছেন, আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধ সমাপ্তি ঘোষণা করায় আজ ইরাক স্বাধীন। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি ইরাকি জনগণের উদ্দেশে বলেন, ইরাক আজ স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ। তিনি বলেন, এখন থেকে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী দেশের ভেতরের এবং বাইরের সব ধরনের হুমকি মোকাবেলা করবে, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।