মুক্ত মন....সারাক্ষণ
তাঁর কপালে হাত রাখতেই দু'চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। কেবিন নং ৭৯।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ২০০৬ সালের ২৯ জুলাই। আমার সাথে আছেন বর্তমানে বিডি নিউজ-এ কর্মরত বিখ্যাত আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন ভাই।
উদ্দেশ্য আমি সাক্ষাত্কার নিবো আর মামুন ভাই ছবি তুলবেন।
ইত্তেফাক-আনন্দ বিনোদন এর তত্কালীন সম্পাদক মুন্না রায়হান আমাকে উদ্দেশ করে বললেন, এই লেখাটা আপনি লিখুন। আপনার লেখায় আবেগ আছে-লোকটার উপকার হলেও হতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের অন্ধকারময় এক কেবিনে শুয়ে আছেন তিনি। তার পায়ের কাছে বসে আছেন স্ত্রী ও ছেলে।
আমি বসলাম মাথার কাছে। একটু দূরে মামুন ভাই।
সাক্ষাত্কার পর্ব শুরু হলো। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিও বুশ তাঁর কাঁধে হাত রেখেছিলেন, সে গল্প দিয়েই শুরু করলেন তিনি। বলতে লাগলেন, একে একে অনেক জীবন-গনিষ্ঠ কথা।
কীভাবে ৫৫ হাজার টাকার গয়না বন্ধক রেখে সেই টাকা দিয়ে পিজি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন, অশ্রুমাখা ভাঙা গলায় সে গল্পও শুনালেন আমাদের।
তিনি কাঁদছেন, অঝর ধারায় কাঁদছেন।
তাঁর গাল, কানের লতি বেয়ে দর দর বেগে জল গড়িয়ে পড়ে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। কাঁদছেন তাঁর স্ত্রীও। সান্ত্বনা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।
আমার চোখ জোড়াও যে আর মানছে না।
শুধু বললাম, দয়া করে আপনারা কাঁদবেন না, দেখি কী করা যায়।
৩ আগস্ট ২০০৬ ইত্তেফাক আনন্দ বিনোদন এ তাঁকে নিয়ে আমার লেখাটি প্রকাশিত হলো। শিরোনাম ছিল " শিল্পীর জীবন প্রদীপ জ্বালাতে"
লেখা প্রকাশিত হবার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর খোঁজ নেয়া হলো। ব্যক্তি পর্যায়ে সামান্য সাহায্য সহযোগিতাও আসতে লাগল।
কিন্তু, তাঁর জীবন প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে যে টুকুন সাহায্য কিংবা সহযোগিতা, সহমর্মিতা দরকার ছিল, আমাদের সরকার তা করতে পারে নি, পারি নি আমরাও।
প্রিয়, আব্দুর রহমান বয়াতি, আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, সবসময় আপনাদের সাথে আমার যোগাযোগ বজায় থাকবে। কিন্তু পারি নি। কথা রাখতে পারি নি আমি।
দীর্ঘ ৭ বছর পর আপনার মৃত্যু সংবাদ পাবার পর মনে হল, অন্তত একটি বার অন্তত আর একটি বার যদি আপনার সাথে দেখা হয়ে যেত আমার, তবে আপনার কপালে হাত রেখে বলতাম, হে মহান শিল্পী, এই অভাগা, আর হৃদয়হীনদের দেশে আপনাদের জন্মাতে নেই................আপনাদের জন্মাতে নেই.........
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।