আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মামুনের ঈদের পাঞ্জাবি

Shams

জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয়ের ৩ বছরের সেশনজটের কল্যানে ছাত্র জীবন আরো লম্বা হওয়ার খুসিতে আমরা যেখানে ধুমসে মোটা হচ্ছি মামুন সেখানে দিন-দিন পাটকাঠি হচ্ছে। ওকে দেখে মনে হয় চলমান কাপড়ের হ্যাঙ্গার! এর জন্য মামুনকে আমরা খেতাব দিয়েছি কে.কে.বি.এফ মানে কারিনা কাপুরের বেস্ট ফ্যান। মামুনের ঈদের পাঞ্জাবি কিনতে গিয়ে আমরা তো পেরেসান: সব পাঞ্জাবি তার গায়ে বেঢপ! শেষে এক পরিচিত দোকানদার হতাশা আর বিরক্ত কন্ঠে উপদেশ দেয়- ‘আপরা রেডিমেড পাঞ্জাবি না খুঁজে কাপড় কিনে বানিয়ে নেন। ’ অগত্যা পাঞ্জাবির কাপড় কেনার জন্য সাহেব বাজারের কাপড় পট্টিতে ঢুকতে হলো। ঈদের সময় মেয়েদের ঠাঁসাঠাসি ভিড় আর মহিলা মোবাইল চোরের উৎপাতের জন্য পরোতপক্ষে আমরা এখানে আসি না।

মেয়েদের ভিড়ে আমারা কোন দোকানে ঢুকতে পারলাম না। জনস্রোতে ভাসতে-ভাসতে ভুবনমোহন পার্কের সামনে এসে দাঁড়ালাম। এমন সময় বৃষ্টির সাথে দেখা হয়। সে মামুনের নতুন ইয়ে। বৃষ্টি আর তার বান্ধুবীরা আমাদের সেখানে দেখে নেতিবাচক কিছু ভাবার আগে মামুন আমাদের সেখানে থাকার কারণ ব্যখা করে।

আমাদের উদ্ধার করার জন্য বৃষ্টি ও তার বান্ধুবীরা পাঞ্জাবির কাপড় কেনার দায়িত্ব নেয়। সকাল ১১টায় তারা কাপড় পট্টিতে ঢুকে যায় আমরা আপেক্ষায় থাকি। জোহরের আজান হয়ে যায়। আমরা বড় মসজিদে নামাজ পড়ে বারান্দায় ঝিমুতে থাকি। বৃষ্টিদের কোন খবর নাই।

আসরের আজান দিচ্ছে সে সময় বৃষ্টি ফোন দেয় পঞ্জাবির কাপড় কেনা হয়ে গেছে। আমর তো ভেবে ছিলাম এতক্ষনে বোধায় সারা বছরের বাজার করা হয়ে গেছে কিন্তু দেখি ওদের এ সময় লেগেছে শুধু মাত্র মামুনের পঞ্জাবির কাপড় কেনার জন্য। বৃষ্টি মামুনকে বারবার বলে দিলো ঢিলাঢালা করে পাঞ্জবি বানাতে। তা না হলে দর্জি কাপড় মেরে টাইট ফিটিং বানিয়ে দিলে, পরে আর পরতে পারবে না। এবার দর্জি খোঁজার পালা।

পরের দিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমরা রাজশাহী শহরের বিখ্যাত থেকে অখ্যাত, বড় থেকে ছোট দর্জির দোকানে ধরনা দিলাম কিন্তু পাঞ্জাবির অর্ডার দিতে পারলাম না। ঈদের ৫ দিন আগে কোন দর্জির সময় আছে? শেষে ফুটপতের এক বুড় দর্জিকে পেলাম। ভালো পঞ্জাবির বানিয়ে দেওয়ার গ্যারান্টি দিয়ে অর্ডার নিলো। মামুন দর্জিকে বারবার বলে দিলো যেন ঢিলঢালা করে বানানো হয়। দর্জির মাপ নেওয়ার পরে আরো কাপড় বাঁচে কি না জানার জন্য সে জিঙ্গেস করে- ‘চাচা, এ কাপড় দিয়ে কি ১টা রুমাল বনিয়ে দেওয়া যাবে?’ খাতায় মাপ লিখতে-লিখতে বুড় দর্জি বলে-‘হাঁ।

’ মামুন আমতা-আমতা করে জিঙ্গেস করে-‘১টা টুপি হবে? ’ বুড় আবার হাঁ বলে। মামুন আবার জিঙ্গেস করে- ‘ কোটি কি হবে?’ ‘হবে। ’ মামুন ভাবে সব যখন হবে তখন ১টা পায়জামা হলে মন্দ হয় না। সে পায়জামার অর্ডারও দেয়। বুড় দর্জি সে-টারও অর্ডার নেয়।

আমারা বৃষ্টির জ্ঞান দেখে অবাক হয়ে যায়, সে যদি না জানাতো তা হলে কি এত কিছু বানানো যেত? বুড় দর্জির উপরে আমাদের শ্রদ্ধা বেড়ে যায়- তার সততার জন্য বোধায় আজও তিনি ফুটপাতে আর অন্য দর্জিরা কাপড় চুরি করে বড়-বড় দোকানের মালিক। বুড় দর্জি আগাম কিছু বাণি চায়। মামুন পুরো বাণি-ই দিয়ে দেয়। চাঁদরাতে আমরা মামুনের পাঞ্জাবি, পাজামা, কোটি আর টুপির আনতে গিয়ে বেকুব হয়ে যায়। বুড় দর্জি ১ বছরের বাচ্চার মাপের পাঞ্জাবি, পাজামা, কোটি আর টুপি বের করে দেয়।

বুড়কে ধমকাতে গেলে বুড় উল্টা আমাদের ধমকায়-‘সাড়ে ৩ গজে যা যা বানাতে বলা হয়েছে, তাই বনিয়ে দিয়েছি। এবার ঝামেলা না ফুঁটো। ’ বুড়ো দর্জির যুক্তি অখন্ডক। অতয়েব আমরা ফাঁটা বেলুনের মত চুপসে ফেরার পথ ধরি। পাড়াতে ঢুকতেই আমাদের সাথে আমাদের পাড়ার মোস্ট সিনিয়ার পলাশ ভাই আর নিশার সাথে দেখা হয়ে যায়।

৩ বছর আগে নিশা মামুনকে ছ্যাঁক দিয়ে ডিভি পাওয়া পলাশ ভাইকে পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। এবার ১ বছরের ছেলে কে নিয়ে ঈদ করতে দেশে ফিরেছে। আমরা জুনিয়ার মামুন-নিশার ব্যাপারটা জানলেও পাড়ার বড়রা কেও জানে না। পলাশ ভাই আমাদের হাতে বাচ্চাদের পায়জামা-পঞ্জাবি দেখে জিঙ্গেস করে-‘কিরে, কার জন্য এগুলো?’ আমরা কিছু বলার আগে মামুন জবাব দেয়-‘কার আবার আপনাদের বাবুর জন্য। বাবু এবার আমাদের সথে ঈদ করতে এসেছে! আমরা বেকার হলেও আমাদের তো কোন কর্তব্য আছে, তাই না।

’ বলে মামুন আমাদের ইশারা করে, আমরা পাঞ্জাবি, পাজামা, কোটি আর টুপি পলাশ ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়। বর্তমানটা হলো অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তাই সবার অধিকার আছে যে কোন তথ্য জানার অথবা জানানোর। কিন্তু সব তথ্য কি ‘বিএসটিআই অনুমদিত’ ভোজালমুক্ত কিংবা তার মাধ্যম যে ‘আইএসও-৯০০০ মান নিয়ন্ত্রণের সনদপ্রাপ্ত’ হবে তার তো কোন কথা নাই। বৃষ্টির কাছে যে খবরটা পৌছালো তা হলো: মামুন ঈদে নিজে পাঞ্জাবি না বনিয়ে নিশার ছেলের জন্য পাঞ্জাবি, পাজামা, কোটি আর টুপি বানিয়ে দিয়েছে।

ঈদের দিনে সবাই নতুন-নতুন জামা-কাপড় পরে সুস্বাধু মজার-মাজার হরেক রকমের সেমাই, মিষ্টি, চটপটি, হলিম, বিরিয়ানি, মাংস-পোলাও আরো নাম না জানা কত কি খেলাম। আর মামুন? সে পুরাতন পাঞ্জাবি পরে বৃষ্টির কাছে ছ্যাক খেলো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.