বাংলায় কথা বলি,বাংলায় লিখন লিখি, বাংলায় চিন্তা করি, বাংলায় স্বপ্ন দেখি। আমার অস্তিত্ব জুড়ে বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ।
পঞ্চম শ্রেণী টেনেটুনে কোন রকমে পাস করে ভর্তি হলাম জয়পাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে। কোন উপজেলার কেন্দ্রীয় স্কুলটাকে সেই সময় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় বলা হতো। জয়পাড়া পাইলট ছিল অনেক বড় একটি স্কুল।
অনেক তার ছাত্র। মোট ২৬ জন শিক্ষক। এর মাঝ খানে ছোট একটা খাল । ওইপাড়ে বালিকা বিদ্যালয়। নাম বেগম আয়েশা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।
বর্তমানে খালটি ভরাট করে ফেলা হয়েছে। স্কুলের সাথে ব্রিজটি আর নেই। তবে আমাদের সময়ের যে পরিবর্তনটি এখন চোখে পড়ে তা হলো ছেলেরা বেশী বেশী করে বালিকাদের বিদ্যালয়ে ভীড় করে। যখন বয়েজ স্কুলের সামনে ব্রিজ ছিল আর নীচের খালটি ভরাট করা হয়েছিল তখন দেখতাম ছেলেরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বিড়ি ফুঁকছে আর মেয়েদের আনাগেনা দেখে হা-পিত্যেশ করছে।
১৯৮৪ সালে আমি জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই।
আমার কাছে তখন এ বিদ্যালয়টিকে এক বিশাল জগত মনে হয়েছিল। কারণ দেড় হাজারেরও উপরে ছাত্র। ২৬ জন শিক্ষক। আমি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার শাখা ছিল ক।
যারা বাইরের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আসে তাদেরকে ক শাখায় নেয়া হতো। হাইস্কুল থেকে যারা ৫ম শ্রেণী পাস করে আসত তারা থাকত খ শাখায় । তারা ছিল অপেক্ষাকৃত ভাল ছাত্র। তবে আমার ক শাখায়ও অনেক স্কুলের প্রথম স্থান অধিকারীরা ছিল। তারা দেখতাম ধামধাম করে সব অংক করে ফেলত।
আমি মাঝে খুব অসহায় বোধ করতাম। অংকটা আমার কাছে সারা জীবনই ধরাছোয়ার বাইরে রয়ে গেল। জীবনের কোন অংকই ঠিকমতো মেলাতে পারলাম না।
স্কুলের একটু দুরেই উপজেলা পরিষদ আর সব সরকারী অফিস। পাশে উপজেলা হাসপতাল।
এক সময়ের দেবীনগর হাট খ্যাত জয়পাড়া বাজারও কাছেই।
স্কুলের ঠিক পিছনে খালের পারে বড় বটগাছের নীচে এলাকার শ্মশান। ক্লাশ বিরতির সময় এক সময় শবদাহ দেখতাম আর ভয় পেতাম। এক বার এক শবদাহের সময় শ্রীবাস দা'র কণ্ঠে "আর হবে না মানব জনম ভাঙ্গলে মাথা পাষাণে" শুনে দার্শনিক ভাবনা এসেছিল মনের মাঝে। মানুষের জীবন কত তুচ্ছ।
কেউ পুড়ে ছাই হয় আবার কেউ বা মাটিতে মিশে যায়।
৬ ষ্ঠ শ্রেণীতে যে শিক্ষকটি আমার দৃষ্টি কেড়ে নেন তিনি জনাব মোঃ আইউব আলী মিয়া। এই স্যারের পড়ানো আমার এতো ভাল লেগে গেল যে আমি রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমাদের ক্লাসের ইংরেজি প্রথম পত্র নিতেন তিনি। তিনি যে চ্যাপ্টারটি পড়াতেন তা ছিল তার মুখস্ত।
ক্লাসে একবারও বই দেখতেন না। ফলে আমি দ্রুত তার মহাভক্ত হয়ে গেলাম। তিনি প্রথম যে কবিতাটি পড়িয়েছিলেন তা হলো :
Two Little black birds
Sitting on a wall
One called peter
And the other called Paul.
How are you Peter?
Not good at all.
How is your Broter?
Not bad at all.
Goodbye Peter
Goodbye Paul
Come back Peter
Come back Paul.
পরে জেনেছিলাম, বাস্তবিকই তিনি অনেক ভাল ছাত্র ছিলেন। দারিদ্র্য আর নানান ঝামেলায় তার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। যোগ দেন তার নিজেরই স্কুলে শিক্ষকতার কাজে।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। যিনি শিক্ষকতাকে নিয়েছিলেন একটি মহান ব্রত হিসাবে সেখানে তার জীবনে আসে মহাবিপদ। তিনি কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। সম্ভবত ১৯৮৯ কিংবা ১৯৯০ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি স্কুলের ছাত্রদের সুবিধার্থে একটি গ্রামার বই লিখেছিলেন।
তখন তো মুদ্রণ কাজ আজকের মতো এতো উন্নত ছিল না। ফলে তাকে অনেক টাকা কর্জ করতে হয়। সে টাকা তার উঠে আসেনি। তার কথা মাঝে মাঝে অনেক মনে পড়ে। ছোট্ট একটি কন্যাকে রেখে যিনি চলে গেলেন সেই কন্যাকে নিয়ে বিধবা কি করবেন? জগতে কষ্টের কোন শেষ নেই।
সম্ভবত আইউব আলী স্যারের কারণে কিনা জানি না। আমি কেন যেন ইংরেজি একটু একটু বুঝতে শুরু করলাম। সাথে সাথে অন্যান্য বিষয়ও । ফলে আমার অসহায়ত্ব গেল কমে। গ্রামের স্কুল হিসেবে আমার রেজাল্টও খুব খারাপ ছিল না।
আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই তখন মাঠের উত্তর পাশের খালের পাড়ে ছিল বড় টিনের ঘর। সেই ঘরের পূর্ব পাশের শেষ রুমে ছিল আমাদের ক্লাস।
এখন যে বড় রাস্তার পাশে মার্কেট হয়েছে সেখানে ছিল বড় টিনের ঘর। একবার (সম্ভবত ১৯৯০ সালে) হাডুডু খেলা দেখতে অনেক ছেলে ঘরের চালে উঠায় ঘরটি পড়ে যায়। ঘরটি আর মেরামত না করে বিক্রি করে দেয়া হয়।
অনেক দিন জায়গাটি ছিল খালি। পরে রাজনীতির দোলাচলে পড়ে সেখানে এখন বিরাট মার্কেট হলেও মার্কেটের আর্থিক সুবিধা নাকি স্কুলের চেয়ে এলাকার নেতারাই বেশী পেয়েছে।
সেই সময় স্কুলের বড় আকর্ষণ ছিল জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারি মাসের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। উপজেলার সমস্ত স্কুলের খেলোয়াররা এসে হাজির হতো। খেলা হতো স্কুলের বড় মাঠে যেটা স্কুলের একটু দূরে অবস্থিত।
খেলা হতো ২ দিনে। প্রথম দিন বালকদের । পরের দিন বালিকাদের। সেই আমলে স্কুলে অনেক বড় বড় মেয়েরা পড়ত। সম্ভবত সেই কারণেই কিনা কে জানে, বালিকাদের খেলার দিন মাঠের চারিপাশে খেলা দেখার মতো একটু জায়গা খুঁজে পাওয়া ছিল মহাভাগ্যের ব্যাপার।
আমাদের স্কুলের আরো ৩ টি আকর্ষণ ছিল- ১. বার্ষিক মিলাদ মাহফিল ( মিলাদুন্নবী সঃ) ২. বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী উৎসব। ৩. বার্ষিক নাটক মঞ্চায়ণ। স্কুলের ছেলেরাই নায়ক-নায়িকা হতো। নাটক পরিচালনার গুরুভার বহন করতেন শ্রদ্ধা ভাজন খান জলিল স্যার ও জাবেদ আলী স্যার। একটি নাটকের সংলাপ তো আমার আজো মনে পড়ে।
জমিদার সাহেব কোন ঝামেলা হলেই তার সহকারীকে বলতেনঃ ওহে নিষ্পত্তি!
নিষ্পত্তি বলতঃ আমি সাধাসিধে লোক, দাদা!
এই ডায়ালগ শুনে কেন জানি না আমার অনেক ভাল লেগে গেল। আজ অনেক দিন পর নাটকের ২ জন পরিচালক স্যারের কথা মনে পড়ছে। তারা আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তাদের স্মৃতি আমাকে পীড়া দেয়।
এই প্রসঙ্গে আমি জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৬ জন শিক্ষকের নাম মনে করার চেষ্টা করবঃ
১. জনাব হায়াত আলী মিঞা- প্রধানশিক্ষক
২. জনাব মোঃ মোনসের আলী-সহকারী প্রধান শিক্ষক (পরলোকগত)
৩।
জনাব মুন্সী আব্দুস সালাম
৪। জনাব আব্দুস সালাম ব্যাপারী (পরলোকগত)
৫। জনাব ইন্দ্রজিত পাল ( বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক)
৬। জনাব আব্দুল জলিল খান (পরলোকগত)
৭। জনাব জলিল মোল্লা
৮।
জনাব মোঃ রজব আলী। (পরলোকগত)
৯। জনাব মোঃ আব্দুল হাকিম
১০। দেওয়ান বাদশা মিয়া
১১। জনাব আইউব আলী মিঞা (পরলোকগত)
১২।
জনাব সৈয়দ আলী মিঞা (পরলোকগত)
১৩। জনাব সা’দ আলী মিয়া। (পরলোকগত)
১৪। জনাব শেখ মোঃ ইদ্রিস আলী
১৫। জনাব আব্দুস সামাদ
১৬।
জনাব মোঃ শরীফ
১৭। জনাব মোঃ গোলাম মোস্তফা (পরলোকগত)
১৮। জনাব জাবেদ আলী মিঞা (পরলোকগত)
১৯। জনাব সুধীর চন্দ্র পাল।
২০।
জনাব জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র পাল।
২১। জনাব পরেশ চন্দ্র রাজবংশী
২২। জনাব মাওলা খায়রুল বাশার
২৩। জনাব মাওলানা মতিউর রহমান।
(পরলোকগত)
২৪। জনাব মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান
২৫। জনাব হরিদাস মন্ডল
২৬। জনাব কোব্বাত হোসেন খান।
স্যারদের মধ্যে হেড স্যার হায়াত আলী মিঞার সুতীব্র চিৎকার “এই ছেলেরা!” শুনে পিলে চমকে যায়নি এমন ছাত্র ছিল বিরল।
তাকে ভয় পেত না এমন কোন ছাত্র আমি নিজে খুজেও পাইনি। চাকরি জীবনের শেষের দিকে তিনি অবশ্য কেন জানি না অনেক মাটির মানুষ হয়েগিয়ে ছিলেন। বর্তমানে তিনি আর প্রধানশিক্ষক হিসাবে নেই। তবে তার স্মৃতি আমাকে আবেগ তাড়িত করে। টিভি অভিনেতা আবুল খায়ের ছিলেন তার শিক্ষক।
জনাব আবুল খায়ের এক সময় আমাদের স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আমাদের স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে আবুল খায়েরের প্রতি তার ভক্তি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম।
শিক্ষকদের কমনরুমের এক প্রান্তে সহকারী প্রধান শিক্ষক জনাব মোনসের আলী স্যার বসতেন। একটি হলুদ রংয়ের ফিলিপস রেডিও কানে লাগিয়ে তিনি খবর শোনার চেষ্টা করতেন। পরে জেনেছিলাম, রেডিওটা দোষযুক্ত ছিল।
কোনক্রমেই জোরে আওয়াজ বের হত না। তাই কানে না লাগিয়ে শোনা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আমাদের প্রিয় মোনসের আলী স্যারের। অন্যান্য সব স্যারেরই কম বেশী বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন খান জলিল স্যার ক্লাসে গিয়েই জোরে হাঁক দিতেন “ইউ মিঞারা!”। ইন্দ্রজিত পাল স্যার (তিনি এখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) ক্লাসে উপপাদ্য বুঝিয়ে বলতে না পারলে বলতেন “থাপ্পর দিয়ে কান গরম করে ফেলব, ফাজিল!”।
তবে সব চেয়ে আশার কথা জীবনে তিনি কোন ছাত্রকে কখনো থাপ্পড় দিয়েছেন বলে শুনিনি। জনাব আব্দুল হাকিম স্যার ক্লাসে এসেই তার বকাবকির জন্য অনেক বিখ্যাত ছিলেন। তার বকার কথা আমার মতো অনেকেই কোন দিন ভুলতে পারেনি। তবে তিনি মানুষ হিসাবে খুব খারাপ ছিলেন না।
আমি যখন ছাত্র ছিলাম তখন এত রাজনীতি ছিল না।
কেবল দোহার থেকে যুবলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান মাঝে মাঝে মিছিল নিয়ে এসে জয়পাড়া মেইন রোড চক্কর দিতেন আর এরশাদের পদত্যাগ চাইতেন। এছাড়া আর খুব যে রাজনীতির গরম হাওয়া বইত তা নয়। অনেক ভাল ছিল সেই সব দিন। এখন তো ঘরে ঘরে নেতা। কেউ শিশু নেতা, কেউ বালক নেতা, কেউ ছাত্র নেতা, কেউ যুবক নেতা।
চারিদিকে খালি নেতা আর নেতা।
সেই সময় স্টার মার্ক পাওয়া এক বিরাট ব্যাপার ছিল। একদিন শুনলাম এক জন হাবিবুর রহমান এসএসসি-তে স্টার মার্ক পেয়েছে। সেই খুশীতে সে দিন আমাদের অর্ধদিবস ছুটি দেয়া হয়েছিল। গ্রামের স্কুলে আশির দশকের গোড়ার দিকে স্টার মার্ক পাওয়া অনেক বিরল ব্যাপার ছিল।
আমি যখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি তখন লুঙ্গি পড়ে স্কুলে যাবার বিষয়টি ব্যাপক ভাবে চালু ছিল। হেড স্যার অনেক চেষ্টা করেও প্যান্ট চালু করতে পারেননি। একবার এক পরিদর্শক এসে তো রীতি মতো অপমানজনক কথা বলে গেলেন। সেই থেকে হেড স্যার গেলেন অনেক কড়া হয়ে । তিনি নোটিশ জারি করলেন কোন ছাত্রই স্কুল ইউনিফর্ম না পরে স্কুলে আসতে পারবে না।
যে লুঙ্গি পড়ে আসবে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে।
আমাদের ক্লাস শুরু হতো সকাল ১১টায়। সকাল ১০ টা থেকে হেড স্যার বেত হাতে বটগাছের তলায় দাড়িয়ে থাকতেন। তার অগ্নিমুর্তির কারণেই এক সময় ছাত্ররা লু্ঙ্গি পড়া পুরোপুরি ছেড়ে দিল। সাদা হাফ শার্ট আর নেভি ব্লু প্যান্ট পরে সবাই আসতে শুরু করল।
এমনকি এসএসসির চুড়ান্ত পরীক্ষায়ও তিনি এই ড্রেস পরে আসার নির্দেশ দিলেন। যাতে করে সহজে বুঝতে পারা যায় কারা কারা জয়পাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে।
পরীক্ষাচলাকালীন দিন গুলো আমার অনেক ভাল লাগত। কারণ কোন ক্লাস নেই। পরীক্ষা দিয়েই চলে আসা।
পরীক্ষা আবার ২ বেলায় হতো। সকালে আর বিকালে। একারণে রুটিন ঠিক মতো না দেখলে খারাপ ব্যাপার হতো।
বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণার দিন স্কুলের মাঠে সবাইকে ক্লাস অনুযায়ী লাইন ধরে দাড় করানো হতো। প্রথমে হেড স্যার প্রথম শ্রেণীর রেজাল্ট ঘোষণা করতেন।
তার পর একে একে বাকি সব শ্রেণীর । যারা প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় হতো তারা উঠে দাড়িয়ে সবাইকে সালাম জানাতো। এলাকার অনেক মুরুব্বী এসে মাঠে জড়ো হতেন। দেখে আমার অনেক ভাল লাগত। জীবনে অনেক পরীক্ষা দিয়েছি।
অনেক পরীক্ষার ফল জেনেছি। কিন্তু স্কুলের ফল ঘোষণার সময় যে মজা পেতাম তা আর কোথাও পাইনি।
শেষ পর্যন্ত কোন রকম একটা ফলাফল নিয়ে ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাস করি। ছাত্র ভাল ছিলাম না। তার প্রমাণও এই পরীক্ষায় পেলাম।
অভিভাবকের টাকা ছিল না। তাই গ্রামের কলেজে পড়ার জন্য নির্ধারিত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কি মনে করে ঢাকা কলেজের ফরম কিনলাম এবং পূরণ করে তা জমাও দিলাম। কিন্তু ঢাকা কলেজে ভর্তি হতে চাইলে যে দীর্ঘ মেয়াদী প্রস্তুতির দরকার হয় তা আমার ছিল না। ফলে চান্সও পেলাম না।
মন খারাপ করে লঞ্চে চড়ে গ্রামে চলে এলাম। জয়পাড়া কলেজে গেলাম। শুনলাম আর মাত্র ক’দিন বাকি আছে । ভর্তি হতে চাইলে এখনই হতে হবে। মন অনেক খারাপ ।
সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না কি করব। কদিন শুয়ে বসে মন খারাপ করে কাটিয়ে দিলাম। শেষ পর্যন্ত আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার বকুনীতে ঢাকায় যেতে রাজী হলাম। ঘুষ দিয়ে ভর্তি হলাম ঢাকার সব চেয়ে পচা কলেজ সোহরাওয়ার্দী কলেজে। সে এক ইতিহাস।
ছাত্র ভাল না হতে পারলে ছাত্রজীবনও ভাল হয় না।
৫ বছর এই স্কুলের ছাত্র ছিলাম। অনেক স্মৃতি। সব কথা হয়তো মনেও নেই। যা মনে আছে তা যদি লিখি তাহলে বিরাট এক বই হয়ে যেতে পারে।
আর আমার লেখা বই তো কেউ পড়বে না তাই আজ আর বড় করছি না। এখানে শেষ করছি। তবে আজ একটি বিষয় খুব অনুভব করি তাহলে, আমরা যারা স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র তাদের অবশ্যই আমাদের যোগ্যতা আর সামর্থ অনুযায়ী আমাদের স্কুলের প্রতি কিছু কর্তব্য পালন করা উচিত। কারণ এখন যারা আমাদের স্কুলে পড়ছে তারাও একদিন প্রাক্তন হয়ে যাবে। তারা যাতে ভাল ভাবে পড়াশোনা শেষ করতে পারে সেই দিকে নজর দিতে হবে।
তাদেরকে উৎসাহ দিতে হবে। তারা যেন স্কুল থেকে ভাল স্মৃতি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে কর্মজীবনের দিকে ধাবিত হতে পারে। স্কুলকে সব সময় রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক খারাপ জিনিস। মাঝে মাঝে মনে হয় ফালতু রাজনীতিকে বাদ দিয়ে এলাকার বড় বড় মানুষ যারা আছেন তারা যদি স্কুলটার উন্নতির কথা চিন্তা করতেন তাহলে এই স্কুলের রেজাল্ট অনেক ভাল হতে পারত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।