আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভংকরের ফাঁকি

এই ব্লগের কোন লেখা আমার অনুমতি ব্যতীত কোথাও ব্যবহার না করার অনুরোধ করছি

শুভংকরের ফাঁকি বাংলা ভাষায় একটা কমন ফ্রেইজ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সোজা কথায় শুভংকরের ফাঁকি বলতে যেটা বোঝান হয় সেটার সহজ উদাহরণ হিসেবে টানতে পারি ডেসটিনির বিজনেস প্ল্যানকে। অর্থ্যাৎ, আপনাকে বোঝান হবে এক হিসাব, কিন্তু ভেতরে থেকে যাবে অন্য হিসাব, ফলাফল- আপনি পড়বেন বিপদে। এটা শুধু ডেসটিনি বা এমএলএম এর হিসাবেই নয়, যে কোন ক্ষেত্রে আপনি পড়তে পারেন শুভংকরের ফাঁকিতে। আপনি হয়তো খেতে গিয়েছেন শখ করে কোন রেস্টুরেন্টে, সঙ্গে আছে গার্লফ্রেন্ড বা এমন কেউ যার সামনে ইজ্জত একটা বড় ইস্যু, ধরেই নিয়েছেন দামী রেস্টুরেন্ট, সব কিছুরই দাম বেশি হবে, পকেটটা তাই ভারীই আছে আপনার।

মেনু দেখলেন, দাম সবই নাগালের ভিতর, কিন্তু প্রতিটা প্যাকেজ এমনভাবে সাজানো, যে আপনি না চাইলেও আপনাকে গচ্চা দিতে হবে অনেকগুলো টাকা, যেগুলো উল্লেখ করা নেই মেনুতে, এবং বিল আনলে পরে বুঝতে পারবেন যে শুভংকরের ফাঁকি বলতে আসলে কী বোঝান হয়! সে যাই হোক, ছোটবেলায় আমরা সবাই এমন কিছু শুভংকরের ফাঁকিতে পড়েছি। একটা খেলার গল্প বলব আজ, ছোটবেলায় এটার ফাঁকিটা ধরতে পারিনি, অদ্ভূত লাগত তখন আমার কাছে। আপনিও হয়তো খেলেছেন এই খেলা, এবং বন্ধু-বান্ধবীর কাছে খেয়েছেন ধরা। আজ সেই গল্প বলব, চলুন, শুরু করি। ১।

তোমার জন্মদিনের তারিখের সংখ্যাটির সঙ্গে ৪ গুণ কর। ২। ফলাফলটির সঙ্গে মনে মনে ১৩ যোগ কর। ৩। যা পেলে তার সঙ্গে ২৫ গুণ কর।

৪। এর থেকে ২০০ বিয়োগ কর। ৫। এর সঙ্গে যে মাসে জন্মেছ সেই মাসের সংখ্যাটি যোগ কর। ৬।

ফলাফল যা পেলে তাকে ২ দিয়ে গুণ কর। ৭। এ থেকে ৪০ বিয়োগ কর। ৮। এর সঙ্গে ৫০ গুণ কর।

৯। এর সাথে এবার যে বছর জন্মেছ সেই বছরের শেষ দুটি ডিজিট যোগ কর। ১০। ফলাফল থেকে ১০৫০০ বিয়োগ কর। ১১।

এবার ফাইনাল রেজাল্টটা আমাকে বল। আপনিও বলে দিতেন, এবং সাথে সাথেই বন্ধুরা জেনে যেত আপনার অনেকদিন ধরে লুকিয়ে রাখা মহাগোপন জন্মতারিখটি! কী করে সম্ভব এটা? খুবই সম্ভব, কারণ এই হিসাবের ভেতর রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। অর্থ্যাৎ, আপনাকে অনেক যোগ-বিয়োগ-গুণ করতে বলে মূলত যেটি বলা হচ্ছে সেটি এক কথায় শুভংকরের ফাঁকি। লক্ষ্যনীয় যে, হিসাবটা আমি যেভাবে বললাম, ছোটবেলায় হয়তো একটু অন্যরকম ভাবে দেখেছেন, কারণ এটি অনেক ভাবেই করা যায়, মূলত যেটা হয় সেটা এইরকমঃ ধরি, m হচ্ছে মাসের সংখ্যাটি, d হচ্ছে দিন এর সংখ্যা এবং y হচ্ছে বছরের শেষ দুটি ডিজিট। তাহলে অনেক যোগ-বিয়োগের ফলে আপনাকে যা মূলত করতে বলা হত সেটি হচ্ছে- 10000*d + 100*m + y কাজেই, আপনি যদি দিন ধরে নিন ২১, মাস ধরে নিন ৯ এবং বছর ধরে নিন ৮৮(১৯৮৮), আসলে আপনি মাথা ঘামিয়ে, হিসাব করে, বন্ধুদের দিয়েছেন ২১৯৮৮ সংখ্যাটি যাকে লিখতে পারি- ২১/৯/৮৮, আপনার জন্মদিন! এই ডিসগাস্টিং পোস্টটি পড়ে যারা ইতোমধ্যে শুভংকরের ফাঁকিতে পড়েছেন এবং মুখের অবস্থা বা বা বা হয়ে গিয়েছে, তাঁদের জন্য একটা ফানি কমেন্ট, বলাই বাহুল্য, এটাকে ফানি বলা হলেও আসলে সবই শুভংকরের ফাঁকি! নারীদের জীবনে গণিত একটা ভালোবাসা।

তারা তাদের বয়সকে ২ দিয়ে ভাগ করে, নতুন কেনা জামাটার মূল্যকে ২ দিয়ে গুণ করে, এবং সবচেয়ে ভালো বন্ধুর বয়সের সঙ্গে অন্তত ৫ যোগ করে বলে! অবশেষে বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মাইনাস প্রদানের ইচ্ছা থাকিলে অন্যত্র প্রদান করুন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।