আমি সত্য জানতে চাই
সাম্প্রতিক সময়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগর ঘন ঘন উত্তাল হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমুদ্রে পানির তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় উপকূলীয় অঞ্চল ক্রমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতি বছরই ছোট-বড় সামুদ্রিক ঝড়ে উপকূলের প্রকৃতি ও জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে এ ক্ষতি আরো বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে মারা যায় প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের ভয়ঙ্কর ঝড়ে মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। ’৭০ ও ’৯১ সালের ঝড় এতসংখ্যক উপকূলীয় অধিবাসী মারা যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ দুর্বল সতর্ক ও উদ্ধারব্যবস্থা। এরপর ঝড়ে-জলোচ্ছ্বাস থেকে প্রাণ ও সম্পদ রক্ষার্থে উপকূল অঞ্চলে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র (সাইক্লোন শেল্টার) তৈরির উদ্যোগ নেয় সরকার। ’৭০ ও ’৯১ সালের চেয়ে তীব্রতর ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ হামলে পড়ে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর। ওই ঝড়ে মারা যায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ।
সিডরের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না-উঠতেই ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’র আঘাত। আইলায় অবশ্য ক্ষয়ক্ষতি হয় অনেক কম।
উপকূলে ধেয়ে আসছে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন' শঙ্কিত হওয়ার মতো খবর বটে। তথ্যপ্রযুক্তি ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে খবরটি বেশ আগেই পেয়ে গেছি আমরা। শহরাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি বা সংবাদমাধ্যম হাতের নাগালে থাকলেও এটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে অতটা সহজলভ্য কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
ফলে দূরবর্তী উপকূলীয় জনপদের মানুষ ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের হালনাগাদ খবর পাচ্ছে কিনা, তা পরিষ্কার নয়। স্বীকার করতেই হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে অনেকখানি। আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ নির্ভরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।
এখন দুর্যোগ প্রস্তুতি কার্যক্রমকে জোরদার করে ঝুঁকি হ্রাসের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
ফলে গত এক দশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বেশ সফলতা অর্জন করেছে। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কৌশল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশংসিত। দুর্যোগের সময় ও পরে আহতদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া, জরুরি চিকিত্সাসেবা প্রদান, নিরাপদ পানি এবং জরুরি খাদ্য-বস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দেশ এগিয়েছে অনেকখানি।
সিডর ও আইলা আঘাত হানার পর পরই সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার ও রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ‘জরুরি সাড়াদান কমিটি’কে কার্যকর করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার, খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণে হাত বাড়িয়ে দেয় সশস্ত্র বাহিনী।
প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম থাকায় বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা আগের তুলনায় হয়তো কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দুর্যোগে প্রাণহানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এলেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনায় খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি।
উপকূলীয় এলাকার জানমাল রক্ষায় বিদ্যমান অবকাঠামো ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় ব্যবহার উপযোগী আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার।
আগের তুলনায় দেশের জনসংখ্যা ও গবাদি পশুর সংখ্যা বেড়েছে অনেক গুণ। ফলে আরো প্রায় ২ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রয়োজন। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে হবে দক্ষভাবে। যদিও সরকার সেল ব্রডকাস্টিং প্রযুক্তিতে দুর্যোগের আগাম বার্তা জনগণের কাছে দ্রুত পৌঁছে দিতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সেই সঙ্গে সেলফোন ব্যবহারকারী ফোনের কোনো অপশনে না গিয়েই সেটের স্ক্রিনে সরাসরি দুর্যোগের সতর্কবার্তা পাচ্ছেন।
বর্তমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর ওপর ভরসা রেখেই প্রত্যাশা— ঘূর্ণিঝড় মহাসেন উপকূলে আঘাত করলেও তা সামলানো কঠিন হবে না হয়তো।
ভয়াল ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানার আগে করণীয়ঃ
১। তীব্র বাতাস স্বাভাভিকের চেয়ে বেশী জলোচ্ছঅসের জন্যে প্রস্তুত থাকুন।
২। শুকনা খাবার,খাবার পানি, রান্নার তেল, টর্চ লাইট, ব্যাটারি, বাচ্চা দের খাবার ইত্যাদি জরুরী জিনিষ মজুদ করুন।
তবে অতিরিক্ত মজুদ করে কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি করা ঠিক হবেনা।
৩। গৃহপালিত পশু নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুদ রাখতে হবে।
৪। ঘরে ফ্রিজ থাকলে তা সর্বোচ্চ ঠাণ্ডায় রাখুন।
যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তাহলে ফ্রিয এ থাকা জিনিষ বেশি সময় থাকবে।
৫। জরুরী ওষুধ এর একটা স্টক যথা ব্যাথার ওষুধ ক্লফেনাক, পারাসিটামল, অরসেলাইন, ব্যেন্ডেজ, এন্টিসেপ্টিক ইত্যাদি কাছে রাখুন।
৬। নিজের মূল্যবান জিনিস পত্র যেমন পুরোনো ছবি, চিঠি,দলিল পত্র, ইত্যাদি জিনিষ প্লাস্টিক এর ব্যাগ এর ভেতরে মুড়ে উপরে তুলে রাখুন।
৭। সাইক্লোনে এর বাতাস, অনেক ভারী বস্তু কে তুলে, ছুড়ে ফেলে দিতে পারে। আশে পাশের ভারি বস্তু যেমন চেয়ার টেবল, টিন ইত্যাদি-নিরাপদ জায়গায় রাখুন। কাচের জানালায় টেপ লাগিয়ে রাখুন। তাহলে, কাচ ভেঙ্গে ছুটে আসার সম্ভাবনা কমে যাবে।
এবং ভাঙলেও তা তীব্র বেগে ছুটে এসে আহত করবেনা।
৮। সাইক্লোন এর চেয়ে বড় ভয়ঙ্কর বিষয় হল,জলোচ্ছ্বাস । জোয়ার এর সময় সাইক্লোন, ১২ থেকে ২৫ ফুট উঁচু হতে পারে।
৯।
সাগরের ধারে কাছে যারা থাকেন তারা উঁচু ও নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিন ।
ঘূর্ণিঝড় এর সময় করনীয়ঃ
১। পরিবার এর সবাইকে নিয়ে, যেখানে জানালা কম এমন একটা ভেতরের দিকের রুমে অবস্থান নিন। বাহিরের ও ভেতরের দরজা গুলো বন্ধ রাখবেন। যাতে বাতাস ভেতরের রুম এ ঢুকতে না পারে।
২। ঝড় এর গতি বেড়ে গেলে, সব ইলেক্ট্রিকাল যন্ত্রপাতি বন্ধ রাখুন। প্রয়োজনে.মেন সুইচ বন্ধ করে দিন।
৩। ঘর এর ভেতরে থাকুন।
জলোচ্ছ্বাস এর পানির দিকে খেয়াল রাখুন। বাংলাদেশের সকল ঘূর্ণিঝড়ে প্রানহানি সব চেয়ে বেশি হয়ে হয়েছে ভেসে গিয়ে।
৪। ঝড় এর পর সাথে সাথে বের হলে সাবধানে বের হবেন । বন্যা, ধসে যাওয়া রাস্তা, ইলেক্ট্রিক লাইন এই সব দিকে খেয়াল রাখুন।
দূর্যোগ পরবর্তী সময় করণীয়ঃ
দূর্যোগ পরবর্তী লন্ড-ভন্ড হয়ে যেতে পারে উপকুল এবং জলচ্ছ্বাসের কারণে বন্যা দেখা দেয়। ফলে বিশুদ্ধ মিঠা পানির ঘাটতি দেখা দেয়। যথা সম্বব মাটি খনন করে বা আকাশের পানি সংগ্রহ করতে হবে। পানি বাহিত বিভিন্ন সংক্রামক দেখা দিতে পারে যেমন কলেরা, ডাইরিয়া এজন্য অবশ্যই দুর্ঘোটনা কবলিত এলাকার মেডিকেল টিমের সহায়তা গ্রহণ করতে হবে। নিজেরা দূর্ঘটনায় কবলিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে উদ্ধার এবং পরবর্তী ব্যবস্থার জন্য উদ্ধারকারি দলকে সহায়তা করতে হবে।
সকলে সতর্ক থাকুনস নিরাপদে থাকুন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।