আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রসব যন্ত্রনায় একজন নারীর আত্মহত্যা ও আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা



আমাদের দেশের স্বাস্থ্যনীতি যে দরিদ্র জনসাধারনের জন্য নয় তা আরেকবার প্রমান করে দিয়ে গেল ছিন্নমূল খবিরন । যদিও নিরবে নিভৃতে । কেননা ২৪ আগষ্ট প্রথম আলোর ভেতরের পৃষ্টার এই খবর কতজন পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে তা আমার জানা নেই । ২২ আগষ্ট সন্ধ্যা ছয়টায় অন্ত:সত্ত্বা খবিরন প্রসব বেদনা নিয়ে ভর্তি হতে যায় সাভার থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে । কিন্তু তার হাতে টাকা ছিল না বলে ডাক্তাররা তাকে ফিরিয়ে দেয় ।

পরামর্শ দেয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যেতে । প্রত্যদর্শীরা জানায় অনেক কাকুতি মিনতি করার পরও ডাক্তাররা তাকে ভর্তি নেয়নি । এরপর সে সাভার বাসষ্ট্যান্ডে রাত ১২ টা পর্যন্ত ঘুরাঘুরি করে কিন্তু টাকার অভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে পারেনি সে । অবশেষে প্রচন্ড প্রসব যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে সাভার বাসষ্ট্যান্ডের ফুটওভার ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পরে আত্মহত্যা করে । অবসান ঘটে যন্ত্রনার ।

অবসান হয় পৃথিবীতে আসার জন্য মরিয়া হয়ে ইঠেছিল যে শিশুটি তার জীবনেরও । কিছুণ পর পুলিশ গিয়ে দেখতে পায় মৃত খবিরন ও তার পেট ধেকে বেরিয়ে আসা নবজতককে । এই হচ্ছে আমাদের স্বা¯্য’্য সেবার নমুনা যা দেখে সভ্যতা লজ্জা পায় । যা দেখে অবাক হতে হয় - কি করে পারা যায় একজন প্রসব বেদনায় কাতর নারীকে চিকিৎসা না দিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় ফেলে দিতে! আমাদের দেশে চিকিৎসা সেবা যে মূলত ব্যবসা আর এটা যে ধনীদের করায়ত্ত তা আমরা কম বেশী সবাই জানি । কিন্তু এর ভেতরটা যে কতটা কদর্যতায় পূর্ণ তা উন্মোচিত হয়ে পড়ে এরকম দু একটি ঘটনার মধ্য দিয়ে ।

দেশের নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু কি হচ্ছে আমাদের দেশে ? এখানে কি সে অধিকার রতি হচ্ছে ? আমাদের দেশের সরকারগুলোর নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার যদি ইচ্ছে থাকত তাহলে সরকারি হাসপাতালগুলোর এরকম বেহাল দশা হত না । দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভর করে । অথচ এসব হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মান , পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতি ,পর্যাপ্ত ওষুধ সর্বোপরি সুব্যবস্থাপনার চরম অভাব । গাল ভরা বুিল ছাড়া এই সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ কোন সরকারের আমলেই দেখা যায় না ।

অথচ স্বাস্থ্যসেবার নামে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন কিনিক ,ডায়গনষ্টিক সেন্টার, ্এবং দামী দামী বেসরকারি হাসপাতাল । সরকার তা অনুমোদনও দিচ্ছে । যা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ধরা ছোয়ার বাইরে । কিস্তু কাদের স্বার্থে এসব হাসপাতাল ? এসব হাসপাতালগুলোতে কি দরিদ্রদের প্রবেশাধিকার আছে ? যদি না থাকে তাহলে কি উদ্দেশ্য আমাদের দেশের স্বাস্থ্যনীতির - প্রসব যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে খবিরনদের আত্মহত্যা আর চিকিৎসা ব্যবসায় প্রসার লাভ করে কতিপয় ধনী লোকের আরো ধনী হওয়া ? এটাই কি তাহলে আমাদের স্বাধীন দেশ যেখানে একজন খবিরনকে আমরা জীবন তো দিতেই পারি না মানুষের মত মৃত্যুও দিতে পারি না - যার মৃত্যু পশুর মৃত্যুকেও হার মানায় ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।