পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যাদের মধ্যে পুরুষরা বাচ্চা প্রসব করে-এরা হল সমুদ্রের ঘোড়া বা ‘সি-হর্স’ ! শুনতে অবাক লাগছে, তাই না!
আসলে বাচ্চা উৎপাদন করতে পুরুষ এবং স্ত্রী সি-হর্স প্রায় সমান ভূমিকা পালন করে।
পুরুষ ও স্ত্রী সি-হর্স বিয়ের আগে প্রায় ৮ঘণ্টা প্রেম করে! ভরা পূর্ণিমায় তাদের মিলন ঘটে। একবার মিলনে আবদ্ধ হলে এরা কখনই একে অপরকে ছেড়ে যায় না। বরং অসুখে-বিসুখে একে অপরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে। মিলনের পর তারা যুগলবন্দী হয়ে চলাফেরা করে।
প্রজনন কালে স্ত্রী সি-হর্স পুরুষ সি-হর্সের পেটের দিকে অবস্থিত বিশেষ থলেতে ডিম পাড়ে। এই থলেকে বলে ’ব্রুড পিচ’। এটা অনেকটা মা ক্যাঙ্গারুর পেটের থলের মতো। পার্থক্য কেবল, ক্যাঙ্গারুদের মায়ের পেটে থলে থাকে। আর সি-হর্সের বাবার পেটে।
বাবা সি-হর্সরা থলের ভেতরে সব বাচ্চাগুলোকে বড়ো করতে থাকে। ডিমগুলো থলেতে নিয়ে সে খুব সাবধানে চলাফেরা করে। বেশিরভাগ সময়ই কোনো গাছ বা পাথরের উপর বসে কাটিয়ে দেয়, যাতে ডিমের ভেতর বড়ো হতে থাকা বাচ্চাগুলোর কোনো কষ্ট না হয়। থলেতে বাচ্চাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি আর অক্সিজেনই পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। দিনদিন বাবা সি-হর্সের পেট ফুলে বড় হতে থাকে।
১০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে বাচ্চাগুলো বের হওয়ার উপযোগী হয়ে যায়। প্রজাতিভেদে সি-হর্স একসঙ্গে ১০টা থেকে ৩০০টা পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে। বাচ্চাগুলো বের হওয়ার সময় বাচ্চাদের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য বাবা সিহর্স তার পেট আরো ফুলিয়ে রাখে। বাচ্চা বেশি থাকলে সব বাচ্চা বের হতে মাঝে মাঝে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়। গর্ভকালীন সময়ে স্ত্রী মাছ প্রতিদিন সকালে একবার করে পুরুষ মাছটিকে দেখতে আসে ও সেবা যত্ন করে যায়।
পুরুষরা মূলত রাতেই বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা জন্মের পরপরই স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
তবে আজব এ প্রাণীটির নাম দেখেই অনেকেই মনে করতে পারেন ওরা বুঝি সত্যিই সাগরের ঘোড়া! আকার-আকৃতিতেও ঘোড়ার সঙ্গে এদের কোনো তুলনাও হয় না।
সি-হর্স নিতান্তই ছোট্ট একধরনের মাছ। তবুও এদের নাম সি-হর্স বা সমুদ্রের ঘোড়া হওয়ার কারন হল এদের মাথা! এদের মাথাটাই দেখতে ঘোড়ার মাথার মতো।
সামনে এগোনোর জন্য এরা পেছনের লেজ ব্যবহার করে। পেছনের লেজটিকে আস্তে আস্তে দুলিয়ে এরা এগিয়ে যায়। পেছনের লেজটি অনেকটা লঞ্চ বা জাহাজের প্রপেলারের মতো কাজ করে। পেছনের লেজটি এদিক-ওদিক করে ডানে-বামেও যেতে পারে। উপরে-নিচে ওঠা-নামা করার জন্য এদের একটা আলাদা অঙ্গ আছে।
যার নাম ‘সুইম ব্লাডার’। এটা হল এদের শরীরের ভেতরে একটা বাতাসের পকেট। এই পকেটে বাতাস কমিয়ে-বাড়িয়ে এরা ভেসে ওঠে কিংবা ডুবে যায়। মানে উপরে-নিচে ওঠা-নামা করে। সিহর্সে লেজটাও কিন্তু ঘোড়ার লেজের মতো নয়।
লেজটা দেখতে অনেকটা কুমিরের লেজের মত। এদের লেজের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট আছে। এরা লেজটা দিয়ে কোনোকিছুকে আঁকড়েও ধরতে পারে।
সি হর্স মৎস প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত প্রাণী। এরা সমুদ্রের লোনা পানিতে বসবাস করে।
স্থলের সাধারন প্রানী ঘোরার সাথে এদের আকৃতিতে কিছুটা মিল থাকায় এদের সি-হর্স নামে ডাকা হয়। মাছ হওয়া সত্বেও এদের শরীর আশের পরিবর্তে চামড়া দ্বারা আবৃত থাকে।
ঘোড়ার মতো গঠন বলে এর ইংরেজি নাম ‘সি-হর্স’।
সুত্র ও সংগৃহিত ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।