পকেট
সরসিজ আলীম
যে মেয়েটি নদীতে নৌকার উপর ভেসে ভেসে
আকাশ ওড়াতো পূর্ণিমার ভেতর,
মেয়েটি গায়ে হাত রাখলেই বাঁশি শোনাত পাহাড়,
সেই মেয়েটি বাঁশের সাঁকোটি পেরিয়ে এসে
দাঁড়ালো একটা বটবৃক্ষের ছায়ায়, ছায়ার ভেতর
জড়াজড়ি ক’রে আমিও যে ছিলাম।
ছায়ার ভেতর দিয়ে উঠে যাওয়া সিঁড়ি,
সিঁড়ির উপর সেই তো আমাদেরই বসত,
আমরা তবে রচিলাম গেহ সিঁড়ির উপর।
মেয়েটির চুলের গভীরে বিলি কেটেছি যে হাতে
সে হাত আর কখনোই ফিরিয়ে আনতে পারিনি।
মেয়েটির চোখে চোখ রেখেছি যেদিন,
সেইদিন হতে আমার চোখ আর ফিরে পাইনি
আমাতে।
মেয়েটির সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়েছি যেদিন
সেদিনো নিজেকে হারিয়ে এসেছি বৃষ্টির ভেতর।
নগরীর মোড়ে মোড়ে হরেক উৎসব, উৎসবের
পাশ দিয়ে যেতে যেতে আছাড় খেয়েছি,
মুখ থুবড়ে পড়েছি।
কাঁদা মাখা মুখ নিয়ে উঠতে উঠতে
বাড়ি ফিরতে ফিরতে মধ্যগগণে রাত।
বাড়ির দরোজায় দাঁড়িয়ে সারা শরীর হাতড়িয়ে
পকেট খুঁজে পাইনি, বাড়িতে প্রবেশাধিকারের জন্য
দস্তুর মতো একটা পকেট থাকা তো চাই।
ফিরে এসেছি বারবার এই পথে পথে,
পকেট খুঁজছি আছাড় খাওয়ার ভেতর, মুখ থুবড়ে
পড়বার ভেতর।
বাড়ির গেটের সামনে গিয়ে থামতেই বাড়ির গেটম্যানটা
নেমে এসে গাড়ির দরোজা খুলে স্যালূট দিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকে যে বন্ধুটিকে,
প্রতিদিন সেই বন্ধুটির হাত ঝাকিয়ে, কাঁধ দুলিয়ে, কোমর
নাচিয়ে গল্প বলা শুনি:
এই নতুন সরকারের আমলেই
দুই-পাঁচ কোটি টাকার মালিক ব’নে যাবো নিশ্চিত!
দু’একজন মানুষ অনেক অনেক টাকার মালিক ব’নে
যাওয়া মানেই অনেক অনেক মানুষের পকেট না থাকা।
কিন্তু বাড়ি ফিরে যাবার জন্যে আমার অন্ততঃপক্ষে
একখানা পকেট থাকা চাই।
একটা পকেট থাকলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাবো বারবার যাবো
মেয়েটির ঘরে, আমাদের ঘরে।
২৬.০৮.২০১০. ঢাকা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।