আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপকূলের লাখো মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এর আঘাত থেকে বাঁচতে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এরই মধ্যে বেশ কিছু জেলায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। কোথাও বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। উপকূলের কয়েকটি জেলা থেকে প্রথম আলো ডটকমের প্রতিনিধিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবিলায় শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করছে বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, মহাসেনের সম্ভাব্য দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ উপকূলীয় ১৩টি জেলায় চিকিত্সকদের ছুটি বাতিল করেছে। প্রস্তুত আছে এক হাজার ৩২৭টি মেডিকেল টিম। স্বাস্থ্য ও দুর্যোগব্যবস্থাপনা কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।

কক্সবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ
সতর্কসংকেত ৮ হলে সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু অধিকতর সতর্কতার জন্য জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তে বিকেল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাধারণ মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, পেকুয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় ২০ হাজার মানুষকে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অন্যান্য লোকজনকে রাত আটটার আগে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন রাত ১০টা নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই আগেভাগে উপকূলের অন্তত পাঁচ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ জন্য ৫৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও সাত শর বেশি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, বেসরকারি ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সদস্য ছাড়াও সাত হাজারের মতো স্বেচ্ছাসেবীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। পতেঙ্গা, হালিশহর এলাকা থেকে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৭ নম্বর সতর্কসংকেত জারি করার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একই সঙ্গে চট্টগ্রামের মূল জেটিতে বন্দরের নিজস্ব তিন মাত্রার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বন্দরের সচিব সৈয়দ ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, বন্দরের মূল জেটি ও মুরিংয়ে ২১টি জাহাজ রয়েছে। তিন মাত্রার সতর্কতা অনুযায়ী এসব জাহাজ এখন জোয়ারের সময় পর্যায়ক্রমে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, চ্যানেল নিরাপদ রাখতে জেটিতে থাকা সব জাহাজ সাগরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সাগরে অবস্থানরত জাহাজের পক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা সহজ হয়।
চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবদুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা থেকে নির্দেশ এসেছে। তাই সিগন্যাল ৮-এর জন্য অপেক্ষা করব না। আমরা ৭ নম্বর সিগন্যাল থাকতেই উপকূলীয় এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিচ্ছি। ’
বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম উপকূলীয় এলাকায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।



বাগেরহাট
আমাদের বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বুধবার বিকেল থেকে জেলার উপকূলীয় তিনটি উপজেলা মংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও পাকা স্কুল ভবনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুর থেকে মংলা বন্দরে অবস্থানরত জাহাজগুলোতে মালামাল ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পূর্ব সুন্দরবনে প্রবেশে ইচ্ছুক পর্যটক ও জেলেদের অনুমতি দেয়া বন্ধ রেখেছে সুন্দরবন বিভাগ। সরিয়ে আনা হয়েছে সুন্দরবনে অবস্থানরত পর্যটক ও মত্স্যজীবীদের।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মুহা. শুকুর আলী বুধবার বিকেলে জানান, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় দেড় হাজার প্রশিক্ষিত উদ্ধারকর্মী, ৮২টি চিকিত্সক দল ও পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুদ করা হয়েছে।


মংলা বন্দরের চেয়ারম্যান কমোডর হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় মহাসেন মোকাবিলায় বুধবার দুপুর থেকে বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্দরে অবস্থানরত পাঁচটি জাহাজসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের নৌযানগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বরগুনায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজন সরে যাচ্ছে
বরগুনা প্রতিনিধি জানান, সেখানে থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাঁধের বাইরে থাকা লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাচ্ছে।

ভোলা ও নোয়াখালী
ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ভোলার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে।

আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। ভোলায় ৭ নম্বর বিপত্সংকেত দেখিয়ে যেতে বলায় মাছ ধরা নৌকাগুলো খালের ভেতর নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৯২টি চিকিত্সা দল ও নয় হাজার ১৩৫ জন স্বেচ্ছাসেবী। জেলায় গঠিত সাতটি কন্ট্রোল রুম থেকে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।
নোয়াখালীতেও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।

প্রশাসনের তরফ থেকে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার কথা বলা হলেও নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে হাতিয়ার একটি অংশ, সুবর্ণচরের দুটি ইউনিয়ন চর ক্লার্ক ও মোহাম্মদপুরে আশ্রয়কেন্দ্র নেই। জেলার রেড ক্রিসেন্টের সহকারী পরিচালক মো. আফরিদুল ইসলাম বলেছেন, শহরের পাকা স্থাপনাগুলোয় লোকজনের আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। ।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.