আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতীয় নেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ

থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখবো এবার জগৎটাকে

২০ আগস্ট, ২০১০ জাতীয় নেতা ও মনীষী মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ২৪তম মৃত্যু বার্ষিকী। ১৯৮৬ সালের ২০ আগস্ট ৮৬ বছর বয়সে এই মহান নেতার জীবনের অবসান ঘটে। মহান জাতীয় নেতা মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ব্রিটিশ-বিরোধী সহযোগ আন্দোলনের উত্তাল মুহূর্তে ১৯০০ সালের ২৭ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন সিরাজগঞ্জ জেলার তারুটিয়া গ্রামে প্রখ্যাত এক পীর পরিবারে। উত্তর বাংলার তৎকালীন সময়ের সুখ্যাতিসম্পন্ন আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আবু ইসহাক (র.)-এর তিনি ছিলেন সুযোগ্য পুত্র। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে বালক আবদুর রশীদ হতভাগা দরিদ্র সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও আর্থিক বিনাশে প্ররোচনাদানকারী বগুড়ার কেল্লাকুশীর মেলায় খিলিপট্টি-কুঁড়েপট্টি নামে খ্যাত পতিতাপল্লী উচ্ছেদ করে নৈতিক সুরক্ষা তথা সামাজিক কল্যাণে এক অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেন।

১৯২২ সালে উপমহাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তাক্ত অধ্যায় ঐতিহাসিক সলঙ্গা বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন তরুণ বিপ্লবী আবদুর রশীদ। তার নেতৃত্বে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সেদিন সলঙ্গাহাটে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে, বিদ্রোহে উত্তাল তরঙ্গের মতো আছড়ে পড়ে। ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ নির্যাতনে মারাত্মক আহত হয়ে তিনি কারাবরণ করেন। পুলিশের নির্বিচার গুলীবর্ষণে সেদিন সলঙ্গাহাটে সরকারি হিসাবেই সাড়ে চার হাজার মানুষ হতাহত হন। তরুণ আবদুর রশীদের নেতৃত্বে সংঘটিত সেই সলঙ্গা বিদ্রোহের মহান শহীদেরাই এই বাংলার মাটিতে প্রথম গণকবরে শায়িত হন।

বাংলার দরিদ্র কৃষক সমাজকে জমিদারী মহাজনী শোষণ নিপীড়ন থেকে রক্ষার জন্য তার আন্তরিক কর্মপ্রচেষ্টার ফল নিখিল বঙ্গ রায়ত খাতক সমিতি। জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন এই সমিতির সভাপতি এবং মাওলানা তর্কবাগীশ ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। দেশজুড়ে এই সমিতির ব্যাপক ও বলিষ্ঠ আন্দোলনের ফলেই গঠিত হয় ঐতিহাসিক ঋণ সালিশী বোর্ড। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সভাপতিত্বে যে ইউনাইটেড মুসলিম পার্টি গঠিত হয় এর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর আহবানে ইউএমপি বিলুপ্ত করে মাওলানা তর্কবাগীশ যোগদান করেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগ-এ।

অবিভক্ত বাংলায় ১৯৪৬ সালে তিনি এমএলএ নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পরিষদে বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেন। মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রামরত ছাত্রদের উপর ১৯৫২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অপরিমেয় বলিষ্ঠতার সঙ্গে একাকীই তিনি অধিবেশন মুলতবী করে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার প্রস্তাব উত্থাপনের মধ্যদিয়ে ভাষা আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার ঘটান। পাকিস্তান গণপরিষদে ১৯৫৪ সালে ২ আগস্ট প্রথম বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে তিনি যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেন। একই বছর ২০ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের রাজধানী করাচী থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের দাবি পরিষদে উত্থাপন করেন তিনি। মাওলনা তর্কবাগীশের অনমনীয় দৃঢ়তার ফলেই ১৯৫৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পার্লামেন্টে অন্যতম ভাষা হিসাবে বাংলা স্বীকৃতি লাভ করে।

ঢাকায় বাংলা একাডেমী প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও পরিষদে তিনিই করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে পূর্ববাংলার নাম পূর্ব পাকিস্তান করার তীব্র বিরোধিতাও তিনিই করেন। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাওলানা তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং স্বাধীনতার পরও তিনি রেখেছেন এক অনন্য সাধারণ রাজনৈতিক ভূমিকা। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পরিষদের প্রথম সভাপতি হিসাবে মাওলানা তর্কবাগীশ সর্বপ্রথম বাংলায় যে সংসদীয় কার্যপ্রণালী প্রবর্তন করেন তা আজও চালু আছে।

স্বাধীনতার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া মাদ্রাসা শিক্ষা পুনরায় চালু করা হয় তার একক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগের ফলে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনরও তিনি প্রতিষ্ঠাতা। পরবর্তীতে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র কায়েমের সংগ্রামে তিনি যথাক্রমে ১০ ও ১৫ দলীয় জোট গঠন করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.