তখন গ্রীষ্মকাল। জার্মানির এক ছোট্ট শহর উইন্সবার্ডেন, ফ্যাংকফুটের কাছেই।
সজল আর হিমু নামের দুই জার্মান প্রবাসী বাঙালি যুবক মাঠে তাবু টানিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ মাঝরাতে সজলের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে ডেকে তুললো তার বন্ধু হিমুকে।
দোস্ত দ্যাখ, আকাশ দেখা যাচ্ছে।
হিমুর ঘুম ছুটে গেল। তিনিও চোখ মেলে দেখলেন আকাশ। তারপর ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট ধরালেন। এরপর ব্যাপারটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিতে লাগলেন, আকাশ দেখা যাচ্ছে।
আকাশে আবার তারাও দেখা যাচ্ছে। তার মানে আকাশ পরিষ্কার। আকাশ পরিষ্কার মানে আকাশে মেঘ নেই। আকাশে মেঘ নেই মানে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা কম। বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা কম মানে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ...
এ পর্যায়ে সজল হিমুকে থামিয়ে দিলেন।
বললেন, আমি বলছিলাম, আমাদের তাবুটা কে যেন চুরি করে নিয়ে গেছে ...
হিমু প্রচন্ড হতাশ হয়ে আরেকটি সিগারেট ধরালেন।
বেশ কিছুকাল যাবৎ ব্লগে, ফেসবুকে, এটা প্রমাণের চেষ্টা হচ্ছে যে, মুসা ইব্রাহীম এভারেস্টে উঠে নাই। এটি প্রমাণ করতে গিয়ে কি বোর্ড ফাটিয়ে ফেলছেন ফেলুদা,শার্লক হোমস, মাসুদ রানা গং।
সচলায়তন ব্লগে প্রখ্যাত ব্লগার হিমু সিরিজ লেখা শুরু করেছেন। সিরিজের নাম নেভারেস্ট।
নেভারেস্টের প্রথম পর্বে লেখার শুরুতে তিনি চারটা বৃত্ত ( এর মধ্যে একটি বড় বৃত্ত এবং তিনটি ছোট বৃত্ত ) একেঁ বুঝিয়ে দিয়েছেন মুসা কতবড় প্রতারক। নেভারেস্ট ২য় পর্ব সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, সেটিও পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
ফেসবুকে এই বিষয়ে একটি গ্র“পও খোলা হয়েছে । অতি আগ্রহ নিয়ে আমি সেই গ্র“পে জয়েনও করেছি। সেখানে দেখলাম মুসা যে এভারেস্টে উঠে নাই, তার প্রমাণ হিসেবে সার্টিফিকেট প্রসঙ্গ এসেছে।
সেখানে লেখা :
এরপরও আমরা দেখেছি অনেকে প্রশ্ন করছেন, তাহলে সার্টিফিকেট পেলো কি করে! তাহলে আসুন দেখি মুসার সার্টিফিকেট জালিয়াতি!
মুসা ইব্রাহিম এর এভারেস্ট সামিট এর সার্টিফিকেট বা এর কোনো ছবি কি কেউ দেখেছেন? হঠাৎ মনে হলো এভারেস্ট সামিট এর সার্টিফিকেট কেমন হয় একটু দেখি! গুগুল বাবাজি হেল্পাইলো- আসুন প্রথমে দেখি মুসা ইব্রাহিম এর সার্টিফিকেট সম্পর্কে কি তথ্য আছে- ২৬ মে ২০১০, বিডিনিউজ মারফত আমরা জানতে পারি মুসা Tibet Mountaineering Association এর কাছ থেকে সার্টিফিকেট পেয়েছে।
একই খবর ২৭ তারিখের ডেইলি স্টার এ ছাপা হয়। ডেইলি স্টার মারফত আমরা জানতে পারি মুসা'র সার্টিফিকেটে লেখা আছে- "This is to certify that on 23 May, 6:50 am, Md Musa Ibrahim climbed the peak of Everest, Chomolungma of Mount Everest" is written on Musa's certificate.
(Click This Link)
এবার আসুন দেখি Tibet Mountaineering Association এর কাছ থেকে পাওয়া কোনো সার্টিফিকেট এর ছবি গুগুলে আছে কিনা! পাওয়া গেছে- প্রথম পেইজেই দুইটা ছবি একটা ১৯৯৯ সালের, আরেকটা ২০০৯ এর পার্থক্য এটুকুই সাদাকালো থেকে কালার হয়েছে। (হিমু সাহেব বলছেন ২০১০ এর সার্টিফিকেট ও তাঁর কাছে আছে) এবার দেখুন তো ভাষাটা কি লেখা ওখানে?
"This is to certify that on 21 May 2009 at 07:30 the Mrs 'X' has reached the altitude of 8848m above sea lavel on an expedition to peak Everest Himalaya of Mount Everest" যা কিনা উপরের মুসার সার্টিফিকেট লেখার সাথে মিল বিহীন। এখন আমার প্রশ্ন হলো- গত নয় বছরে যেই সার্টিফিকেট পরিবর্তন হলো না, সেটা কি শুধুমাত্র মুসা ইব্রাহিম এর জন্য আলাদা করে বানানো হলো? মুসা কি আসলেই সার্টিফিকেট পেয়েছিলেন? পেলে কি তা আসল সার্টিফিকেট?
ব্লগার সিমু নাসের সেটি কিছুক্ষণ আগে মুসার সার্টিফিকেট সামু ব্লগে আপলোডও করেছেন।
তাতে দেখা যাচ্ছে সার্টিফিকেট নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ ভূয়া।
যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার ১০১ কারণ ছিল। প্রথম কারণটা হচ্ছে বারুদ ভেজা ছিল। বাকি একশটা কারণ শোনার কোনও প্রয়োজন নাই। মুসার সার্টিফিকেট নিয়ে যে বিশাল রচনা ফাঁদা হয়েছে , সিমু সেটি মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছেন।
আমি বাংলা গোয়েন্দা ব্লগারদের এই ঘোর দুর্দিনে হিমু সাহেবকে এক প্যাকেট হোয়াইট শেখ সিগারেট পাঠাতে চাই। তার ঠিকানা কী কেউ দেবেন ...
ছবি পরিচিতি : উইন্সবার্ডেনের সেই ঐতিহাসিক জায়গায় লেখক হিমুর স্মরণে সিগারেট ফুকছেন ....দূরে সেই ঐতিহাসিক তাবুর স্মরণে নির্মিত বেদী ....
পাদটীকা : দুই বন্ধুর গোয়েন্দাগিরির শখ এখনো মেটেনি। বছর কয়েক আগে জার্মানিতে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে তারা কোনও শিক্ষা পাননি। ঐদিন যে তাবু চুরি যায়নি, এটা প্রমাণ করার জন্য আমি জোর চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।