আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুড়িয়ে পাওয়া মোটাতাজা মানিব্যাগ -আর আমার বউ-এর মন্তব্য

ও গানওয়ালা, আর একটা গান গাও... আমার আর কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।
প্রতিদিন বাসে আফিস থেকে বাড়ি ফিরি। যথারীতি থাকে উপচে পড়া ভীর বোনাস হিসাবে দীর্ঘক্ষণ জ্যাম, চেচামেচি, গরম। প্লাস যাত্রীদের বাংলাদেশের রোড সিস্টেমের উপর গুষ্টি উদ্ধার করা বিভিন্ন সংলাপ। আ.লীগ আর বিএনপি সাপোর্টারদের অযৌক্তিক চুলোচুলি কথাতো বাদই দিলাম।

(ভাবে মনে হয় হেরা উনাগো বউ-পোলাপান ছাইরা দিতে রাজি আছে মাগার নিজের দলের অন্ধ সাপোর্ট করা ছাড়বো না) । যাহোক ঘটনার দিন সিট পেয়েছিলাম বাসের একদম শেষের কোনার দিকটায়। আমি নামি শেষ স্টপেজ মোহাম্মদপুরে। যাত্রার শেষের দিকে বাস প্রায় খালি হয়ে আসে। ধানমন্ডি ১৫ আসতেই বাস অর্ধেক খালি, আমার বসা পেছনের ছিট পুরোটাই খালি।

আমি রিল্যাক্স মুডে সরে বসতেই অনুভব করি পশ্চাদ্দেশের নিচে শক্ত কি যেন!! জী ভাই, দেখি একটা মোটা তাজা মানিব্যাগ, ফেলে গেছে কেও। আশে পাশে কেও নাই। অদ্ভুত ব্যাপার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হলো আমার ব্যাপক বুক ধড়ফড়ানি। কি করি, কি করি!! সামনে মাত্র ৩/৪ জন যাত্রি। ১০০% শিওর মানিব্যাগের মালিক নেমে গেছে।

এক্ষেত্রে বাস স্টাফদের জানালে আমার কাছ থেকে নিয়া তারা নিজেরাই গাপ করে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। সিদ্ধান্ত নিলাম আমি নিজেই এর মালিককে খুজে দিয়া আসবো। তাই চুপচাপ মানিব্যাগটা হাতে করে নিয়া বাসায় চলে আসি। এই মানিব্যাগ প্রাপ্তিটা আমার বৈচিত্র্যহীন জীবনে বিশাল একটা বৈচিত্র বটে!! তাই চিন্তা করলাম বউ এর সাথে একটু মজা করি। মাথায় ছিল হুমায়ুন আহমেদের লিখা একটা ছোট গল্প (নাম মনে নাই), যেখানে জামাই থাকে মলম পার্টির লোক।

বউ প্রথম প্রথম জামাই এর এ কাজ অপছন্দ করতো। পরে বউটা খুব ইন্টারেস্টের সাথে জামাই এর চুরি-ডাকাতি করা মানিব্যাগ, ব্রিফকেস মালামাল খুলে টুলে দেখত। যাহোক ঘরে ঢুকেই ষড়যন্ত্রকারীর মত বউ এর দিকে তাকিয়ে দরজা দিলাম বন্ধ করে। এতেই মোটামুটি একটা আবহাওয়া তৈরি হয়ে যায়। এবার নাটক শুরু।

"বউ আজকে একটা আকাম করছি!" প্রথম কথাই ছিল এটা। - "মানে?" বউ এর ধারণাই নাই এর পর আমি কি বলব। - "দেখ আমার পকেটে কি?" (ততক্ষণে পাওয়া মানিব্যাগ পিছনের আর একটা পকেটে চালান করে দিছি। ) - "মানিব্যাগ?" ধরে বলে। - "আর এ পকেটে?" অন্য পকেটে দেখিয়ে।

- "ওহ! আর একটা, নতুন কিনছো?" সে মোটামুটি হতাশ। ভাবখানা এই নিয়া এতো কাহিনী!! - "বের করেই দ্যাখোনা!" রহস্য করে বললাম। পুরানো মানিব্যাগ দেখলেই চেনা যায়। একটা আলাদা গোল ভাঁজ পরে। বউকে মানিব্যাগ বের করে দিতেই সে বুঝলো এটা পুরানো, আমার না অন্য কারো।

বলে "এটা কার?" বললাম, " আজকে বাসে বাড়ি আসার টাইম, একটা কাহিনী হইছে। আমার সামনের সিটে বসা পাবলিকের পকেট থেকে এই মানিব্যাগটা পইরা গেছিলো, আকামটা হইলো আমি দেইখা চাইপা গেছি! পরে তুইল্লা আনছি!" হেঁয়ালি করে, আরো কনফিউজ করার জন্য বলি, "এমনি পরেনি, আমি ছুটো একটা টানও দিছি!! না, নাহ!! টান না, হাত দেই নাই, খাওয়ার ডিব্বা দিয়া খোঁচা দিয়া ফালায় দিছি! অনেকখানি বের হয়েছিল, আমার দোষ কম, ওইটা এমনিতেই পরতো। হেঃ! হেহঃ!! হেঃ!!" বোকা বোকা ধরা খাওয়া হাসি মারতে লাগলাম! মানিব্যাগটা বের করে ওর হাতে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলি, "দেখ দেখ, কত্ত টাকা আছে!" (যদিও আমি তখনও জানি না এর ভিতর কি কি আছে, কত টাকা, তবে পাঁচশত টাকার নোট উকি ঝুকি মারছিল! তখনই ঠিক বজ্রপাতের মত আমার বউ কয়, ছিহ!! তুমি এই কাজটা করতে পারলা!! হায়! হায়! বউ কয় কি? হে আমারে এতো দিনেও চিনল না!! তাও আবার প্রেম কইরা বিয়া!! গুরুজনে কইছিল, "বউরা জামাই ছাড়া হগলের কথা/কাম ভালা পায়!" দেখি পুরাই সত্য! --------------------------------------------------------- মনটা খারাপ হয়ে আছে! এই মানিব্যাগ ফেরত দিতে যাইয়া ও এক বিরাট কিচ্ছা-কাহিনী হইছিল! পরে আর এক দিন মুড ভালো থাকলে কমুনে।
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।