আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করেছে মন্ত্রণালয়



দেশের সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে এক পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এই পরিপত্রে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দেওয়াকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে, ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য অনুরূপ এক পরিপত্র জারি করেছিল। এ ব্যাপারে হাইকোর্টেরও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ রয়েছে। পরিপত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি দেওয়া বন্ধ করতে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

যাঁরা শারীরিক শাস্তি দেবেন তাঁদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৮৬০, ১৯৭৪ সালের শিশু আইন এবং ক্ষেত্রমতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি দেওয়া বন্ধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তি প্রদানকারী শিক্ষকদের চিহ্নিত করে বিধিমোতাবেক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর পরিদর্শকেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনের সময় শারীরিক শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মশৃঙ্খলা, পাঠ শিক্ষণে অবহেলা বা অন্য কারণে অমানবিক ও নির্মম শারীরিক শাস্তি দিচ্ছেন।

সংবাদমাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ প্রায়ই প্রকাশিত হচ্ছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো, প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করা একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। কিন্তু শারীরিক শাস্তিতে শিক্ষার্থীর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন করা সম্ভব হয় না। শারীরিক শাস্তি দেওয়া এ কারণে সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত।

এর আগে গত জুলাই মাসে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির নামে নির্যাতন করা কেন অবৈধ ও মৌলিক অধিকার পরিপন্থী হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। জনস্বার্থে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. ইমান আলী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সম্প্রতি স্কুলে কঠিন শাস্তি দেওয়ার পরিণতিতে ১০ বছরের এক স্কুলছাত্র বিষপানে আত্মহত্যা করে। এ নিয়ে গত ১৫ জুলাই প্রথম আলোতে ‘মা আমাকে বাঁচাও’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। শিক্ষার্থীদের অমানবিক শাস্তি দেওয়ার এমন ১৩টি ঘটনা তুলে ধরে জনস্বার্থে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ রিটটি করে।

আদালতের আদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ‘নিষ্ঠুর ও লাঞ্ছনাকর’ দণ্ড বন্ধে অবিলম্বে পরিপত্র জারি করতেও বলা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.