পাখি এক্সপ্রেস
মনিমুক্তা সিনেমা হলে এক টিকিটে দুই ছবি টাঙানোর পর ৩ কিলোমিটার লম্বা এ রাস্তার পথচারীগো যৌন অনুভূতি মিটারের উপরে দিয়া চলে। রাস্তার দুই পাশের ইলেক্ট্রিক খাম্বার শরীলে আঁটানো আধা ন্যাংটা মাইয়াগো পোস্টার দেইখ্যা শিশ্নধারী ব্যাটাগুলা অযথাই পিউবিক অঞ্চলে টাইট ফিটিং ফিল করে। ফিলিংস খারাপ না, আরামই লাগে। কিন্তু শালারা মাইয়াগো লাইগ্যা কোন ব্যবস্থাই রাখলো না। সিনেমার পোস্টারে দুই একটা হাফ প্যান্ট ওয়ালা জওয়ান পোলার ফটো দিলে কি অমন ক্ষতি অইতো!
মো: আবদুল বাকের কোন আকিকা ছাড়াই আসাদুজ্জামান নূরের বরাতে বাকের ভাই নামটা পেয়ে গেলেন।
এতোদিন গেরামেই রিকশা চালাইতেন। ধ্বজাভাংগা টেম্পুগুলানের হেভভী লোকাল সার্ভিসের লগে টিকতে না পাইরা এরকম ম্যালা রিকশাওয়ালা ঢাকা শহরে আইসা বাসা বান্ধছে। এতদিনে বাকের ভাই নিজেরে বহুত আধুনিক ভাবতে স্টার্ট করছেন। আগের চাইতে ইনকামে বরকত আসনের কারণে টাকার ধান্ধা নিয়া তেমন টেনশন লয় না। কিন্তু শহরটা নিয়া বাকের ভাইর বড় আবিষ্কার "এ শহরে ম্যালা আরাম"।
আগের চাইতে স্মার্ট হওনের চেষ্টাও ব্যাপক। গায়ে আরাম মাখাইতে হইলে স্মার্ট হওনের কোন বিকল্প নাই। বিশেষ কইরা গলা জড়ায়া পিঠগামী ওড়না ওয়ালী মাইয়াগুলা বাকের ভাইর চোখে বিশেষ সৌন্দর্য। এসব দেখতেই বেশি বেশি আরাম।
শহরটারে মাঝে মইধ্যে কসাইখানা মনে হয়।
মাংসের চাইতে অ্যাভিলাবল এ শহরে আর কিছুই নাই। এটা তার একান্তই ধারনা। এসব খুচরা পাইকারি ধারণা ছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড আর কিছুই তার নাই। অবশ্য গড়পরতা বন্ধু হাশেমের লগে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা চলে। তার জন্য জমায়া রাখে অযুত কুটি পরামর্শ।
বন্ধুদের মইধ্যে হাশেমের বৌ আছিলো অত্যন্ত সৌন্দর্য্যের। কিন্তু হারামজাদা বৌয়ের রূপের অবহেলা কইরা কইরা একটা জ্যন্ত রাজরাণীরে চোতমারাণী বানায়া ছাড়ছে। এ নিয়া হাশেমের উপর ভীষন চটা। ঢাকা শহরের বিলবোর্ডগুলার অ্যাডভার্টাইজিং পড়ার জন্য আবদুল বাকেরের কেলাশ এইট পাসই এনাফ। এগুলান দেইখ্যা দেইখ্যা রূপচর্চার আপডেট প্রডাক্টের খবর ঠিকই হাশেমরে পৌঁছায়া দেয়।
নিজের বৌ নিয়া বাকের ভাইয়ের কোন টেনশন নাই। কারণ বৌয়ের চামড়ায় অনেক আগেই ভাঁজ পইড়া গেছে। সতের বছর বয়সে বিয়া কইরা প্রথম মৌসুমেই মাইয়া চুটকিয়ার আব্বা হওনের ক্ষ্যামতা অর্জন করা এই পাবলিক বৌয়ের কাছে আর কিছু আশা করে না।
বাকের ভাইয়ের অরজিনাল শত্রু টাই পরা ভদ্দরলোকরা। সুযোগ পাইলেই কড়া ভাষায় সাম্যবাদের বুলি শুনায়া ছাড়েন।
দরদাম কইরা না উঠলেই বাকেরের ১০ টাকার ভাড়া ১৫ টাকা হইয়া যায়। ভদ্দরলোক ১০ টাকা দিলেই রেকর্ডকৃত টেপ বাজা স্টার্ট। আশপাশের রিকশাওয়ালারাসহ নির্যাতিত মানুষের অদৃশ্য মিছিলে তখন "বাকের ভাই জিন্দাভাই" "বাকের ভাই চাই কি? রিকশাওয়ালার শান্তি" শ্লোগানে মুখরিত হইতে থাকে চারপাশ। নির্যাতিত মানুষের নেতা ভাড়ার ঝামেলা চুকাইয়া গদির উপর বইসা একটা স্টার সিগারেট ধরাইতে ভুল করেন না। গদির নিচেই থাকে স্টার সিগারের প্যাকেটটি।
বিশেষ বিশেষ টাইমে এ সিগারেট জ্বইলা উঠে। বাকের ভাইয়ের চাইতে বিদ্রোহী রিকশাওয়ালা ঢাকা শহরে টু স্ট্রোক ইঞ্জিনের মতোই দুর্লভ। বাকের ভাই ইজ বাকের ভাই, অনলি ওয়ান পিস।
অল্প বয়সে যৌবনজ্বালা টের পাওয়া বাকের ভাই এখনও প্রথম যৌবনের কথা ভাইবা উদাস হন। দশ বারো পরিবারের বিশাল বাড়িতে বড় হয়েছিলেন।
ওই টাইমে স্যানেটারি ল্যাট্টিন আছিলো না। পাটের চট দিয়া ঘেরা গর্তের উপর জোড়া বাঁশের সাঁকোর উপরেই বাড়ির মহিলারা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যেতেন। পুরুষদের লাইগ্যা বাড়ির দরজায় মোটেসোটে একটি স্যানিটারি ল্যাট্টিন আছিলো। বদনা হাতে নিয়া বাড়ির কোন মহিলার বাগিছার দিকে আগায়া যাবার সীন বাকের ভাইয়ের জন্য এনাফ! সেক্সের আরামে হাবুডুবু খেয়ে জইমা যাওন যাইতো। তাড়াতাড়ি বিয়া না করলে হাতখরচেই শ্যাষ হইতো পুরা যৌবন।
বাকের ভাইর মাইয়্যা কেলাশ নাইনে উঠনের পর কিছু মানুষ মাইয়্যার বাপরে দাঁড়ি রাখার জন্য বকাবকি করতাছে। এসব কথায় পাত্তা দেওনের সময় বাকের ভাইর নাই। তাই ফোন কইরা বাড়ির খবর নিতে ভুল হইলেও তিনদিন পর পর ক্লীন শেভ করতে ভুল হয় না।
রিকশার যাত্রী যদি হয় ব্যাটা মানুষ, তাইলে বাকের ভাই ভোগেন হতাশায়। ইর্ষাকাতর বাকের ভাই টায়ার্ড হইতে থাকেন মারাত্মক ভঙিমায়।
হাতের গামছা আর কপালের আলগ হয় না। ঘামের স্রোতও থামেতে চায় না। কিন্তু রূপসী গোছের মাইয়্যা মানুষ যাত্রী হইলে কোন কথা নাই। রিকশা ভাড়া মহিলার ইচ্ছামতোই পরিশোধিত হয়। রিকশার মেশিনে কয়েকটা মটর আইসা জুইড়া যায়।
তার রিকশা মোটর গাড়ির হর্ণের বেগে চলতে থাকে। এক মাইয়্যা মাইনষের সামনে টায়ার্ড ফিল করলে কি আর ইজ্জত থাকে? গামছা তখন কোমবন্ধনী হইয়া যায়। পারফরম্যান্স শো করার সুযোগ হাতছাড়া করার মতো মদনা নয় আবদুল বাকের। ছোটখাট ভাঙা রাস্তা ক্যান; যদি উহুদ বদরের পরিখাও সামনে পড়ে, পাত্তা দেয়ার টাইম কই! নিজের ফিটফাট শরীলটার পিছে এক রূপসী মাইয়া মানুষ বইসা আছে ভাবতেই আরামের ঠাঁসাঠাঁসি লাইগা যায়। মনে পড়ে যায় বদনা হাতে আগায়া চলা বাগিছাগামী বেটীদের কথা।
"আহা কি আরাম এই আকাশে বাতাসে"। স্বাভাবিক ভাড়া ১৫ টাকার হইলেও মহিলার হাসিমাখা মুখে বাড়ায়া দেয়া ১০ টাকা নেওনের সময় নিজেরে লুল ভাবার কোন সুযোগ পায় না। এখানে আসলেই বাকের ভাই অত্যন্ত সৎ মানুষ। পথে পথে পুলকে পুলকে ভাসায়া রাখনের পারিশ্রমিক হিসেবে রূপসী প্যাসেঞ্জারকে ৫ টাকা পরিশোধ করতে ভীষণ সচেতন তিনি। তার উপর বোনাস হিসাবে আছে ভোর রাতের হাত খরচের রসদ।
বাকের ভাই বহুত আধুনিক পাবলিক। হাই প্রোফাইল মাইয়া মানুষ ছাড়া হাতখরচের মজমা জইমা উঠে না।
তিন চার মাস পর পর গেরামের বাড়ি যান বাকের ভাই। স্কুল পড়ুয়া মাইয়্যার জন্য রূপচর্চার কঠিন তরল ব্যয়বীয় যাবতীয় পদার্থ গাঁট বাঁইন্ধা নিয়া যান। অবশ্য এর লগে বন্ধুরে দেয়া পরামর্শের কোন মিল আছে কিনা, ভাইবা দেখনের টেনশন হয় না।
কিন্তু দিন দিন সেয়ানা হইয়া উঠা মাইয়াটারে নিয়া বাকের ভাইয়ের বিশেষ টেনশন। তাই স্কুলে যাওনের টাইমে গলা জড়াইয়া রাখা পিঠগামী ওড়না দেইখা আদরের মাইয়াটারে কাছে টাইনা কইতে থাকেন- "মারে, পোশাক আশাক আমলে রাইখা রাস্তায় চলবি। দিনকাল ভালানারে মা, কুন সময় কুন অঘটন ঘইট্যা যায়!"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।