ব্রাজিলের পুলিশ গত বুধবার রাজধানী ব্রাসিলিয়ার ছয়টি এলাকা থেকে ৮০ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে। তাঁরা সবাই বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি পাওয়ার আশ্বাসে দালালদের জনপ্রতি আট লাখ টাকা করে দিয়ে দেশটিতে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’র খবরে এ কথা জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে ১৬ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে এই ৮০ জন প্রথমে ব্রাজিলের প্রতিবেশী দেশ পেরু, বলিভিয়া ও গায়ানায় যান। এরপর কোনো ভিসা ছাড়াই ব্রাজিলে প্রবেশ করেন।
ব্রাসিলিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এ খবরে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে তদন্তের ক্ষেত্রে ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে দূতাবাস।
এই ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, বরং শরণার্থী মর্যাদার জন্য আবেদন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটবে, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে দেশটির শরণার্থীবিষয়ক জাতীয় পরিষদ।
কেন্দ্রীয় বিচারমন্ত্রী পল আব্রাম জানান, ব্রাজিলের আইনে পাচারের শিকার ও অমর্যাদাকর কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবিক বিবেচনায় দেশটিতে আবাসিক ভিসা পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেসব বিদেশি কাজ পান, তাঁদের নিয়মিত কাজের ভিসা দেওয়া হয়। অন্যদের মানবিক বিবেচনায় দেশটিতে থাকতে দেওয়া হয়। তিনি ব্রাসিলিয়ায় সাংবাদিকদের আরও বলেন, এ সুবিধা পাওয়ার আগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রমাণ করতে হবে, তাঁরা পাচারের শিকার বা শ্রমদাস হিসেবে তাঁদের ব্যবহার করার জন্য দেশটিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এমনটি প্রমাণিত হলে তাঁদের সুরক্ষায় করণীয় সবকিছু করবে ব্রাজিল।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাজিলে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশটির কেন্দ্রীয় পুলিশ ‘ফ্রিডম’ নামে একটি অভিযান পরিচালনা শুরু করে।
২০১০ সালে দেশটিতে ৩৯ বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন। পরের বছর এ সংখ্যা ১১১ জনে পৌঁছায়। রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বেশি আবেদন করে এমন চারটি দেশের তালিকায় গত বছর বাংলাদেশ ঢুকে পড়ে।
পুলিশের তথ্যমতে, উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। এক ঘরে ২০ জন গাদাগাদি করে ছিলেন।
তাঁরা সবাই বর্তমানে বেকার এবং নির্মাণপ্রতিষ্ঠানে কাজের সন্ধান করছিলেন। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই এ অবস্থায় দেশে ফিরে যেতে চান না।
মিলাদ আহমেদ (৩৫) পোলট্রি খামারে কাজ করার জন্য অবৈধভাবে দেশটির পারানা রাজ্যে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ব্রাসিলিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে তিনি এসতাদাও ডি সাও পাওলো পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ফিরে যেতে পারব না।
ঢাকায় আমার চাকরি বা অর্থ নেই। আমি এখানে নির্মাণপ্রতিষ্ঠান, কসাইখানা বা ভারতীয় রেস্তোরাঁয় কাজ করতে পারি। আমি যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারব। ’ দেশে ফিরলে পুলিশ তাঁকে হয়রানি করবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ওই পত্রিকাকে মিলাদ আহমেদ বলেন, তিনি ঢাকা থেকে দুবাই, সাও পাওলো ও বুয়েন্স এইরেসে যাত্রাবিরতি করে বলিভিয়ার সান্তা ক্রুজ ডি লা সাইরাতে পৌঁছান।
সেখান থেকে তিনি ব্রাজিলের পারানার উদ্দেশে বাসে ওঠেন। তবে তাঁকে ব্রাসিলিয়াতে নামিয়ে দেওয়া হয়।
অর্থনৈতিক ও বেতনের ভালো অবস্থার কারণে ব্রাজিল এখন বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের মানুষের কাছে খুবই কাঙ্ক্ষিত দেশ। যে কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে অবৈধভাবে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।