জাতীয় সংগীতের ব্যবহার নিয়ে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাণিজ্যিকভাবে জাতীয় সংগীতকে মোবাইল ফোনের রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহারকে বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসেবে জাতীয় সংগীতকে ব্যবহার করায় তিনটি মোবাইল ফোন কম্পানিকে ৫০ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে। রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে গ্রামীণফোন, রবি (একটেল) ও বাংলালিংককে এই অর্থ অনুদান হিসেবে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, কিডনি রিসার্চ সেন্টারসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কালিপদ মৃধা ২০০৬ সালে মোবাইলের রিং টোন এবং ওয়েলকাম টিউন হিসেবে জাতীয় সংগীতের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন দায়ের করেছিলেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই সময় ওয়েলকাম টিউন ও রিং টোনে জাতীয় সংগীতের ব্যবহারকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্ট কম্পানি ও সরকারের প্রতি রুল জারি করেন। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪ অনুচ্ছেদ মোতাবেক জাতীয় সংগীতকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংগীত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতে হয়। কিন্তু রিং টোন ও ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহার করায় হরহামেশাই তা অবমাননা করা হচ্ছে।
আইনজীবীদের মতে, এভাবে ব্যবহার করে অর্থ নেওয়াটাও বেআইনি এবং অবৈধ। এর আগে বাংলাদেশ জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় প্রতীক অবমাননা (সংশোধনী) আইন ২০১০-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে অবমাননার জন্য নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
জাতীয় সংগীত কখন, কোথায় পরিবেশন করা হবে তারও একটা নিয়ম আছে। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবসে সম্পূর্ণ জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম রয়েছে।
আবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যেসব অনুষ্ঠানে থাকবেন, সেসব অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম আছে। আবার জাতীয় সংগীত আংশিক পরিবেশনেরও নিয়ম আছে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই জাতীয় সংগীত বিকৃত করা যাবে না। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় সম্মান প্রদর্শনের অনুমোদিত বিধি রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্য স্থানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের নিয়ম আছে।
আইন অনুযায়ী মোবাইল ফোন কম্পানিগুলোর ওয়েলকাম টিউন বা রিং টোন হিসেবে জাতীয় সংগীতের ব্যবহার অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। মোবাইল ফোন কম্পানিগুলো সংবাদমাধ্যমের কাছে আত্দপক্ষ সমর্থনের একটা চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের সে যুক্তি কতটা যৌক্তিক সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। জাতীয় সংগীতকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের যে পন্থা বেছে নিয়েছিল মোবাইল ফোন অপারেটররা সেটা অবশ্যই অন্যায়। আমরা আশা করব মোবাইল ফোন কম্পানিগুলো ভবিষ্যতে জাতীয় সংগীতের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।