স্বত্ত সংরক্ষিত
একটা খুন করবো। আজ প্রায় তিন বছর হলো ভাবছি-খুন করবো।
বাইরে আবছা আলো,সন্ধ্যে হচ্ছে। আমি ভাবছি একটা খুনের কথা,রক্তের কথা-কিন্তু যত্নের সাথে এড়িয়ে যাচ্ছি একটা প্রসঙ্গ। খুনের পরে কি হবে?
লোকটা খুব ভেজাল করছে আমার শান্তি’র জীবনে।
সকালে পাখির ডাক অথবা অফিস থেকে ফেরার পথে তুমুল যানজট সবখানেই আমি ভাবছি ঐ একটা খুনের কথা। লোকটাকে সরাতেই হবে,আর তার একমাত্র উপায় ওকে খুন করা।
হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রিক শক,পানিতে ডোবানো,ঘুমের ওষুধ-হাজারো উপায় ঘুরছে মাথায়। কিন্তু এর প্রায় সবই সহজ,আর ধরা পড়বার রাস্তা তো পাকাই। আর কি কি উপায় আছে মানুষ মারার?
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা আমি ভাবি খুন করবো।
রাতভোর হয়ে যায় -আমি ভাবি খুন করবো। অফিস বসে ফাইল দেখার সময় ভাবি খুন করবো আর টেবিলের নিচ দিয়ে ঘুষ নেবার জন্যে বাঁ হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমি ভাবি খুন করবো। রাস্তায় যখন বাস ধরবার জন্যে ছুটি তখন ভাবি আমি খুন করবো। আমি খুন করবো।
খুব সাধারণ একটা লোক-সারাদিন কাজ আর পরিবার ছাড়া আর ভাববার কিছু নেই,কোন উচ্চাশা নেই-কোন পাঁচ-তারা স্বপ্ন নেই।
খুব বেশি সাধারণ,ম্যাড়মেড়ে-তুলনা করা যায় আটপৌরে সুতি শাড়ির সাথে,এখানে ছেঁড়া-ওখানে ফুটো। ঐ সাধারণ লোকটাকেই খুন করতে চাই।
এত সহজ কিভাবে হতে পারে কোন মানুষ?কেন সে ঘুষ খাবেনা,কেন সে চুরি-বাটপারি করবে না?তার চেয়েও বড় ব্যাপার তার অমায়িক হাসি আর সরল চাউনি। দেখা হলেই মুখে হালকা হাসি ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করবে-কি খবর?চাকরির প্রথম দিকে তো রীতিমত জ্ঞান দিত কিভাবে কি করতে হবে।
এখন যখন আমার দিকে তাকায় তখন তার চোখে আমি সেই বাবা’র ছায়া দেখি যিনি আমাকে বলতেন -বাবা,সৎ থাকবি।
এ লোকটা যেন মুখে কিছু না বলেই আমায় শাসন করছে তিন তিনটি বছর ধরে। ঠিক বাবা’র মত করে। বাবা গলায় দড়ি দিয়েছিলেন,ঘুষ খাবার অভিযোগে তাকে সাস্পেণ্ড করা হয়েছিলো।
আর এই লোকটাকে আমি খুন করবো। এ কেন বেঁচে থাকবে সৎ হয়ে?আবার অন্যকে উপদেশ বিলিয়ে বেড়াবে-সৎ হও।
আজ একটা উপায় পেয়ে গেছি,কিভাবে ঐ লোকটাকে খতম করবো ঠিক করে ফেলেছি। আমি দেখেছি ভাল চা ওঁর খুব প্রিয়। আমি ওকে ভাল চা’পাতা গিফট করবো বলে ঠিক করেছি;চায়ের পাতায় বিষ মেশানো থাকবে। বিষটা প্যাকেটের ভেতর ঢোকাবো সিরিঞ্জ দিয়ে। সহজেই মিশে যাবে।
*************
দৈনিক নিত্যদিন
৫ই আগস্ট,২০১০
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গতকাল বিকেল পাঁচটা ত্রিশ মিনিটে ঢাকার কারওয়ান বাজারে রাস্তা পার হবার সময় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় নিহত হন আব্দুল হাকিম নামে এক ব্যক্তি। জানা যায়,পথচারীর অন্যমনস্কতার দরুন এ দূর্ঘটনা ঘটে।
************
৫ই আগস্ট
বিকেল সাড়ে পাঁচটা
রাস্তা থেকে একটা বেশ ভাল চায়ের প্যাকেট কুড়িয়ে নিল ইলিয়াস।
নাহয় মরা মানুষটার হাত থেকেই পড়েছে-তাতে কি?চায়ের প্যাকেটটা দেখলেই লোভ হয়। ঝুপড়িতে ফিরেই চা বানাতে বলবে বউকে।
মানুষ মরার ব্যাপারটা না জানালেই হল।
সমাপ্ত
অ। রূ
আগস্ট ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।