আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৃত্যুর আগে সম্মান চাই

সম্প্রতি আমরা হারিয়েছি গুণী শিল্পী আবদুর রহমান বয়াতীকে। তাকে নিয়ে কিছু বলুন?

রহমান ভাই যেমনি ছিলেন একজন গুণী গায়ক তেমনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ। রহমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় কত আগে ঠিক মনে নেই। তবে ২৫-৩০ বছর তো হবেই। তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হাইকোর্ট মাজারে।

সেখানে আমি গান করতাম। গান করতে করতেই তার সঙ্গে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি আমাকে বোন ডাকতেন, আর আমি তাকে ভাই ডাকতাম। এর পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনেকবার আমরা একসঙ্গে গান করেছি। টিভিতেও একসঙ্গে গেয়েছি।

একবার কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে দুজন একসঙ্গে গেয়েছিলাম। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত মনের। তার মৃত্যুর খবরে খুবই দুঃখ পেয়েছি। মৃত্যুর আগে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। আমি সরকারের কাছে বলতে চাই, আমরা মৃত্যুর আগে সম্মান চাই।

মৃত্যুর পর সম্মান দিয়ে কী হবে?

 

আপনার জীবন-সংসারের গল্পটা এখন কেমন?

কী আর কমুরে বাপ সেই কষ্টের কথা। গায়ের রং কালো বলে স্বামী সুধীর হালদার আমার "চুলের মুঠি ধইরা ফিক্কা দিয়া ফালায় উঠানে। কচি শরীরে একের পর এক পড়তে থাকে চড়-লাথি। ভয়ে-ঘৃণায় অাঁতকে উঠি। কুত্তা-বিলাইয়ের মতো জীবন চলতে থাকে।

দীর্ঘদিন এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করেছি। ছেলেমানুষি না কাটতেই সন্তানের মা হয়ে যাই। স্বামী-সংসার নিয়ে আর দশটা মেয়ের মতো সংসার করার স্বপ্ন ছিল আমারও। আমার তা করা হয়নি। স্বামীর নির্যাতন চলে ক্রমাগত।

দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। এক দিন আমি আমার কন্যা পুষ্পকে কোলে নিয়ে পালাই। বাবার বাড়িতেও ফেরার সাহস পাই না। শুরু হয় ভবঘুরে জীবন। এ বাড়ি, ওবাড়ি, ঝি-চাকরের কাজ।

ঘটনাটি স্বাধীনতা যুদ্ধের বছর দুয়েক আগের।

 

আমরা যতদূর জানি আপনার নাম অনিতা, কাঙ্গালিনী সুফিয়া নয়। নাম পরিবর্তনের কারণ কি ছিল?

দারিদ্র্য, ক্ষুধা আর কষ্টের চাপা আগুন থেকে আমার মুখে ফুটে ওঠে গান। বেলগাছির লালন সাধক দেবেন ক্ষেপার সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। তার কাছেই গানের তালিম নেওয়া শুরু।

শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। সারা দেশের নারী নির্যাতনের খবর আসতে থাকে। নিজের জীবন বাঁচাতে নিজের নাম পরিবর্তন করি 'সুফিয়া'। তারপর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ই স্বামী ওপারে চলে যায়। আর ফেরেনি।

যুদ্ধের তিন বছর পর ঢাকায় আসি। হাইকোর্ট মাজার আর শাহআলী মাজারে আমার থাকার জায়গা। এই দুইখানে থাকতাম আর গান করতাম। গানে আর চোখের জলে ভাসতে থাকে আমার জীবন। শিল্পকলা একাডেমীর এক অনুষ্ঠানে গান গাইতে যাই।

সেখানে মুস্তাফা মনোয়ার নাম দেন 'কাঙ্গালিনী'। সেই থেকে আমার নামের আগে কাঙ্গালিনী লেজ লাইগা যায়। "

 

আপনার সময় কাটে কীভাবে?

আমার অবসর সময় কাটে টিভি দেখেই। আমার প্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ। আমার একটা ইচ্ছা আছে।

মরার আগে একবারের জন্য তাকে আমি বাস্তবে দেখতে চাই। একটু কথা বলতে চাই।

আপনার স্কুলে যাওয়ার গল্পটা একটু বলেন?

ফরিদপুরের ভাটিয়াপাড়ায় জন্ম আমার। বাবা খোকন হালদার, মা কমলা বালা। সংসারে সবার ছোট বলে আমার আদর ছিল বেশি।

জীবনে একবারই স্কুলে গিয়েছিলাম। শিক্ষকের মার খেয়ে ও পথে আর যাওয়া হয়নি। আমি অক্ষরজ্ঞানহীন হতে পারি কিন্তু ধর্ম, মানবজীবন, প্রেম, বিচ্ছেদ, ঈশ্বরতত্ত্ব, শরিয়ত, মারফত ও দেহতত্ত্ব সম্পর্কে আমার রয়েছে অগাধ জ্ঞান। আমি প্রকৃতি থেকে শিখেছি জীবন ও গানের নানা কলা। আমি একতারা হাতে গেয়ে চলেছি সাধারণ মানুষের গান।

বাংলার প্রাণের গান। নিজের গান ও সুর নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি বাংলার পথে-প্রান্তরে।

 

আপনার অ্যালবামের সংখ্যা কত আপনি জানেন?

তা আমি বলতে পারব না। কিন্তু আমার পাঁচ শতাধিক গান রয়েছে। কিছু রয়েছে ক্যাসেটবন্দী।

আর কিছু আছে নিজের মুখে।

 

নতুন কোনো কাজ আছে সামনে?

জানি না। মাঝেমধ্যে গানের কথা বলে অনেকেই সময় নেয় পরে আর কোনো খবর থাকে না। আর আমাদের এখন আর কোনো অ্যালবাম প্রতিষ্ঠান ডাকে না। মাঝেমধ্যে কয়েকটি স্টেজ শোর জন্য আমন্ত্রণ পাই।

 

* আলী আফতাব

 

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.