বাংলা আমার জীবনানন্দ বাংলা প্রানের সুখ। আমি একবার দেখি বারবার দেখি দেখি বাংলার মুখ
শবে বরাত। মানে ভাগ্য রজনী। এ দিনে রিজিক লিখা হয়। এই দিন যে যত বেশী আল্লাহর ইবাদত করবে তার রিজিক তত বেশী বাড়বে।
এমনটাই শুনতাম মসজিদের ইমামদের কাছে। তাই শবে বরাত ছিল আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বন্ধুরা দলবেধে মসজিদে যেতাম ইবাদতের জন্য। তার আগে বাজার থেকে জিলাপি কিনে এনে মসজিদে বিলানোও একটি নৈমত্তিক দ্বায়িত্ব ছিল। আর রাতে গোসল করাও ছিল অন্যতম একটি পবিত্র কাজ।
কারন এরাতে গোশল করলে গোশলের সাথে সব গুনাহগুলো ঝরে যায় এবং মানুষ একেবারেই নিষ্পাপ হয়ে যায়।
অন্যান্য দিনের মতো সেদিন ও আমরা কজন মিলে বাজারে গেলাম জিলাপি কেনার জন্য। মাগরিব নামাজ বাজারে পরে জিলাপি নিয়ে গ্রামের দিকে আসছিলাম। পথিমধ্যে দেখলাম একটি বিলের পাশে বসা আমাদের শহর আলী। শহরআলী হলো আমাদের গ্রামেরই ছেলে।
তখন আমাদের বয়স ১৪ হলেও ওর বয়স কমপক্ষে ২৪। আমাদের ক্লাশেই পড়তো। খুবই দরিদ্র একটি ছেলে যার অধিকাংশ সময়ই কাটত কামলা দিয়ে। যতটা মনে পরে তখন তার বাবা ছিল প্যারালাইজ। তাই তাকেই সংসার চালনোর সমস্থ আয়োজন করতে হতো।
এই শহর আলী বিলর পারে বসে উদাস ভঙিতে বিড়ি টানছে। তখন তরুন বয়স। তাই তার এই দিনে বিড়ি খাওয়াটা আমাদের বেশ উত্তেজিত করে তোলে। কিন্তু তার যে শারীরিক সক্ষমতা তাতে আমরা তাকে কিছুই করতে পারবনা। তাই মোটামুটি বিনয়ের সাথে বললাম কিরে আজকেও বিড়ি খাবি তো সারা বছরইতো বিড়ি খেতে হবে।
চল বাসায় গিয়ে গোসল করে মসজিদে আয়। কিন্তু সে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে আমাদের বসার জন্য অনুরোধ করল তার কিছু কথা শুনার জন্য। আমরা ও বসলাম শুনিইনা শহরআলীর কথা।
দেখ এ দিনে আল্লাহ তার প্রত্যেক বান্দার রিঝিক লিখেন। আমাদের ও লিখেন।
সে তার গল্প এভাবেই শুরু করল। পৃথিবীতে যদিও ধনী লোকের সংখ্যা কম তবুও তাদের খাদ্য খানা বেশী। তাই ফেরেস্তাদের অর্ডার করেন আগে বড়লোকের রিঝিকের তালিকা তৈরি করতে। কিন্তু এরা এত বেশী খায় যে ফেরেস্তারা এদের রিঝিক লিখতে লিখতে রাত প্রায় শেষ করে ফেলে। এর পরে আসে মধ্যবিত্ত দের রিঝিক লিখার কাজ।
এরা কিছুটা কম খেলেও বড়লোকের তুলনায় এদের সখ্যা অনেক বেশী। তাই ফেরেস্তারা এদের রিঝিক লিখতে লিখতে রাত্রি শেষ করে ফেলে। তখন আযান দিবে দিবে অবস্থা। এই অবস্থায় ফেরেস্তারা আল্লার কাছে বিনীত নিবেদন করেন আল্লাহ আরতো সময় নেই। অথচ গরিবদের রিঝিকের কোন ব্যবস্থাই করা হলো না।
আল্লাহ ও দেখেন যে আরতো সময় নেই। তাই তিনি ফেরেস্তাদের আদেশ করেন যে লিখে দাও "পূর্বাকার অবস্থাই বলবৎ রইল"। ফেরেস্তারাও তাই করেন। সুতারং সবার অবস্থার পরিবর্তন হলেও আমাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়না।
তার কথা শুনে আমরা প্রায় থ।
তাকে কি মুসলমান বলব না অন্য কিছু বলব তা আর খুজে পাচ্ছিনা। তবে এক বন্ধু বলল ও হিন্দু হয়ে গেছে। তাই আল্লাহকে নিয়ে এমন কথা বলে। তবে সেদিন ওকে আর কিছু না বলে চলে এলাম। একটু দুরে এসে মাটি ঢিল নিয়ে ওর গায়ে মেরে ভোঁ দৌর।
এখনো শবেবরাত এলে আমার সেই ছোটবেলার কথা মনে পরে। মনে পরে সেই শহরআলীর কথা। জানিনা সে কোথায় আছে। তবে মনে হয় তার সেদিনের কথা অনেকাংশে সত্য। করুনাময়ের শুধু ধনীদের প্রতিই করুনা হয়।
আর দরিদ্ররা তার দৃষ্টির অন্তরালেই থেকে যায়। যে মুহুর্তে বাসা বাড়িতে হালুয়া রুটি বিলানো আর নতুন পোশাক পড়ার ভিড় জমে যায় সে মুহুর্তে ঐ দরিদ্ররা প্রতি বছরই ভীর করে আজিমপুর গোরস্থানে ১ টি টাকা বা কিছু উচ্ছিট্ট পাওয়ার লোভে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।