আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডুবন্ত পুরুষ ও ইসলাম



লেখিকা: মাসুদা সুলতানা(রুমী) ২য় পর্ব আর আযওয়াজ বা সাথীরা যে কি পরিমাণ হৃদয়বান হয়েছিলেন তা বোঝা যায় নিম্মোক্ত ঘটনায় এক ব্যক্তি স্ত্রীর বকাঝকায় অতিষ্ট হয়ে খলীফা হযরত ওমর (রাঃ) এর কাছে এসেছিলেন নালিশ করার জন্য। কিন্তু খলীফার ঘরের দরজায় আসতেই তিনি শুনতে পেলেন খলীফার স্ত্রী রাগতঃস্বরে খলীফাকে বকাঝকা করছে। শুনে ঐ ব্যক্তি যারপর নাই অবাক হলেন। খলীফাকে আর কিছু না বলে তিনি ফিরে চললেন। ইতিমধ্যে খলীফা দরজা খুলে বাইরে এলেন।

দরজা থেকে ঐ ব্যক্তিকে চলে যেতে দেখে তিনি তাকে ডাকলেন। তারপর জানতে চাইলেন ‘কেনো এসেছিলেন আর কেনোইবা কিছু না বলে চলে যাচ্ছেন? সেই ব্যক্তি বললো, “আমিরুল মু’মিনীন আমি এসেছিলাম আমার স্ত্রীর রূঢ় কথায় অতিষ্ট হয়ে আপনার কাছে নালিশ করতে কিন্তু এখানে এসে শুনলাম আপনার স্ত্রী আপনাকে আরো বেশী কথা শোনাচ্ছে। তাই আমার নালিশ না করে ফিরে যাচ্ছিলাম। এখন আমি আপনার কাছে একটা কথা জানতে চাচ্ছি। আমরা পুরুষেরা আপনাকে বাঘের মতো ভয় করি আর একজন মহিলা কি করে আপনাকে কথা শোনায়?” হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ‘ভাই এই মহিলার অনেক হক আছে যা আমি আদায় করতে পারিনি।

তদুপরি এই মহিলা আমার রান্না করে, ঘর বাড়ি কাপড় চোপড় পরিস্কার করে, সন্তানদের লালন পালন করে এমনি আরও অনেক কাজ করে যা করতে সে বাধ্য নয়। এ সব কাজ করে সে আমাকে এহসান করে, অতএব সে তো একজন পাওনাদার আর পাওনাদারের দু কথা বেশি বলার অধিকার আছে। ” ঐ ব্যক্তি তখন বললো “আমার স্ত্রীর তো এসব কাজ করে এবং আমিও তার অনেক হক আদায় করতে পারিনি। খলীফা হাসি মুখে বললেন, ‘তাহলে ভাই একটু সহ্য করো। ’ আর সন্তান তো হলো এমন সন্তান যে কিনা মায়ের মৃত্যুর পরও তার হক আদায়ের জন্য পেরেশান থাকে।

আর জীবিত থাকতে থাকে মায়ের পূর্ণ অনুগত। এই শিক্ষার ই রেজাল্ট দেখি আব্দুল কাদের জিলানীর মধ্যে। মা বলেছেন সত্য কথা বলতে তাই বালক আব্দুল কাদের ডাকাতদের হাতে লুন্ঠিত হওয়ারসমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও মিথ্যার আশ্রয় নেন নি। দেখি শিশু বায়েজিদ বোস্তামিকে মায়ের শিয়রে সারারাত পানির গ্লাস হাতে দাড়িয়ে থাকতে। মায়ের হক, মায়ের মর্যাদা কতোখানি রাসূল (সঃ) তা বাস্তব উদাহরণ পেশ করে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন।

একবার রাসূল (সঃ) এর দুধ মা হালীমা সা’দিয়া এলেন রাসূল (সঃ) এর কাছে। রাসূল (সঃ) আবেগের সাথে “আমার মা-আমার মা বলতে বলতে নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিলেন তাকে বসার জন্য। * আবারো হারালো সম্মানঃ- ধীরে ধীরে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। পুরুষ আবার ডুবতে থাকে আধুনিক জাহেলিয়াতের পংকিলতায়। মুসলমানদের অলসতা, বিলাসব্যাসন এবং মুনাফিকি চিন্তা চেতনা ও আচরণ সর্বোপরি অশিক্ষা কুশিক্ষার জন্য ইসলাম কোণঠাসা হয়ে গেলো বিশ্বের প্রতিটি দেশে।

তখন দোর্দন্ড প্রতাপে ইংরেজরা মুসলিম রাষ্ট্রগুলো শাসন করল শোষণ করল দুইশত বছরের ও অধিক কাল। তারপর এই রাষ্ট্রগুলো বাহ্যিক দিক দিয়ে স্বাধীন হলো ঠিকই কিন্তু আত্মিক দিক দিয়ে পরাধিনই রইল। মুসলমান পুরুষেরা পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতি এমনভাবে গ্রহণ করল যে নিজেদের শিক্ষা সংস্কৃতি ইতিহাস ঐতিহ্য দূরে নিক্ষেপ করে পাশ্চাত্যের রঙে রঙিন হতে সর্বশক্তি নিয়োগ করল। ইসলামের স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা ছেড়ে পান করতে লাগলো পাশ্চাত্যের রঙিন পানি। * পাশ্চাত্যের গোলক ধাধায়ঃ- ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশ ইংরেজদের হাত থেকে স্বাধীন হলো ঠিকই কিন্তু দুইশত বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে পাশ্চাত্যের পন্ডিতরা যে ভাবে ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলো তা আজও সোজা হয়ে দাড়াতে পারল না।

ইংরেজরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে দুই ভাগে ভাগ করে দিল। একটি আধুনিক শিক্ষা অপরটি মাদ্রাসা বা ইসলামী শিক্ষা। দুইটি ব্যবস্থাই হলো অর্পূনাঙ্গ। আর এটাই ছিল তাদের একমাত্র কাম্য। বুঝেও না বোঝার ভান করলো তৎকালীন আধুনিক শিক্ষিত মুসলমানেরা ।

আখেরাতকে তারা জলাঞ্জলি দিল। ইসলাম থেকে তারা সরে গেলো বহুদূরে। তাইতো আমাদের বড় বড় বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক নেতারা প্রকৃত মুসলমানের মতো জীবন যাপন করেন না। কায়েদে আযম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ তো পোষাক আষাকে চিন্তা চেতনায় সম্পূর্ণভাবে পাশ্চাত্যের প্রতীক ছিলেন। হোসেন শহীদ সোহরোওয়ার্দির অবস্থাও তাই।

এরাই ছিলেন তৎকালিন মুসলমানদের বড় নেতা। মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ বিয়েও করেন বিদেশী এক অমুসলিম মহিলাকে। সাধারণ মানুষ ও পাশ্চাত্যের গোলক ধাঁধায় এমনভাবে ধরা পড়ল আজও বের হতে পারল না। যতদিন যাচ্ছে ততই যেন জড়িয়ে যাচ্ছে মাকড়সার জালে। বস্তুবাদী এই শিক্ষা ব্যবস্থায় পার্থিব ভোগ বিলাস ছাড়া নৈতিক, আত্মিক প্রশান্তি আখেরাতের চিন্তা সবই যেন মিথ্যা হয়ে গেলো।

এই শিক্ষায় মানুষ হয়ে গেলো এক উন্নত জাতের পশু। পার্থিব জ্ঞান বিজ্ঞানে এরা যত উন্নত হলো নৈতিক দিক দিয়ে ততোধিক নিচে নেমে গেলো। শিক্ষার অপর ধারাটি যা মাদ্রাসা শিক্ষা বা ইসলামী শিক্ষা নামে পরিচিত তাও একমুখি হয়ে গেলো। জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে দূরে সরে শুধু কুরআন মুখস্ত করা আর ফিকহ ও মাজহাবি মত বিরোধে লিপ্ত হওয়ার জন্য সেই ৫০ বছর আগে ইংরেজরা যে পাঠ্যক্রম সাজিয়ে রেখে গিয়েছিলো। তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পড়তে লাগলো।

ফলে তারা আলেম হল, মাওলানা হলো-আল্লামা হলো কিন্তু জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ মুসলমান কমই হলো। যদিও এদের মাধ্যমেই ইসলাম টিকে থাকল। এরা কোনো সরকারী পদ পেলো না। মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিন আর মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়া ছাড়া জিবিকার আর কোনো মাধ্যম না পেয়ে আধুনিক শিক্ষিতদের চেয়ে আর্থিক অনটনেই চলতে লাগলো এদের যাপিত জীবন। ধীরে ধীরে কুসংস্কারের কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল ইসলাম।

আর এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলো নারী। পুরুষেরা আবার জালেমের ভূমিকায় চলে এল। শুরু হলো বিভেদঃ- বাড়ির ছেলেটিকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করলেও প্রায় সবক্ষেত্রেই মেয়েটিকে সে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা হলো। মেয়েকে না বুঝে কুরআন পড়া আর নামাজ রোযা শেখানোই যথেষ্ট মনে করল প্রবীণ মুসলমানেরা। কোনো কোনো পরিবারের এক ছেলে আধুনিক শিক্ষায় হয়ে গেলো নাস্তিক আর এক ছেলে আধুনিক ধ্যান ধারনা বর্জিত মাওলানা বা হাফেজ।

আর মেয়েটি হলো সর্বদিক দিয়েই মুর্খ। মাওলানা বা হাফেজ সাহেব আধুনিক শিক্ষিত ভাইকে মনে করে কাফের। আর আধুনিক সাহেব মাওলানা ভাইকে মনে করে কাঠমোল্লা। এভাবেই শুরু হয় বিভেদ ও বিদ্বেষ। ভালো লাগে ফোটা ফুলঃ- পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত পুরুষের চোখে তখন নিজ সমাজের পর্দায় আবৃত মুর্খ মেয়েদের চেয়ে পাশ্চাত্যের বিদুসী রুপবতী বেপর্দা মেয়েদেরই ভালো লাগতে লাগলো।

তারা আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড থেকে আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে বেহায়া বেলাজের তালিম ও অনৈসলামিক সভ্যতা নিয়ে এলো। তথাকথিত প্রগতির পথে উত্তরনের জন্য শিক্ষার নামে আধুনিকতার নামে মুসলিম মেয়েদের ঘর থেকে বের করতে লাগলো। তাদের বে আব্র“ করে রাস্তা ঘাটে, দোকান পাটে অশ্লিল নাচগানে, সিনেমা থিয়েটারে অফিস আদালতে বিপনি বিজ্ঞাপনে নিয়ে এলো। ধীরে ধীরে ইসলামী মূল্যবোধ এদের মধ্য থেকে একেবারে লোপ পেলো। যার যতো সল্প বসন সে যেনো ততবেশী প্রগতি সম্পন্না নারী হিসাবে পরিচিত হতে লাগলো।

বাবা আদম (আঃ) এবং মা হাওয়া শয়তানের ধোকায় পড়ে আল্লাহ পাকের নিষেধ লংঘন করে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার সাথে সাথে তাদের পোষাক শরীর থেকে খুলে পড়েছিল। আধুনিক শিক্ষিতা মেয়েদের ও হলো সেই অবস্থা। পুরুষদের জন্য আল্লাহপাক ফরজ করেছেন নাভী থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত পোষাকে আবৃত রাখা। আর মেয়েদের জন্য হাতের পাতা পায়ের পাতা ও মুখ মন্ডল ব্যতীত সর্বাঙ্গপোষাকে আবৃত রাখা। অথচ একেবারে উল্টে গেলো ব্যাপারটা।

আধুনিক পুরুষ পায়ের পাতা পর্যন্ত প্যান্ট কোট টাই পড়ে গোটা দেহ আবৃত করে আর আধুনিকা নারী যে পোষাকই পড়–ক দেহের বারো আনা বের করে রাখে। এটাই প্রগতির মাপকাঠি। এতে নারীর উপকার হলো না বরং ঘরে বাইরে সে অসহায় হয়ে পড়ল চরমভাবে। তারা নির্যাতিত হতে থাকল যত্রতত্র। কারণ ইসলাম থেকে দূরে সরে যেয়ে পুরুষ আবার সেই জালেমের ভুমিকায় চলে গেছে।

তাই তো ঘরে স্বামী নামের পুরুষটির হাতে হতে লাগলো যৌতুকের বলি আর অফিসে-সহকর্মী বা বসের হাতে আর রাস্তায় সহযাত্রিদের কাছে সবত্র দৈহিক ও মানুষিক অত্যাচারের শিকার। যত দোষ নন্দ ঘোষঃ- এই পরিস্থিতিতে নারী পুরুষের প্রতি পক্ষ হয়ে দাড়াল। পাশ্চাত্যে যেভাবে পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে পরিবারের অবকাঠামো আমাদের দেশেও সেই সভ্যতার সয়লাব বয়ে যেতে লাগলো। নারী-নির্যাতন, নারী অপহরন, খুন, এসিড নিক্ষেপ চরমভাবে বৃদ্ধি পেলো।

নারী সর্বত্র হয়ে পড়ল অরক্ষনীয়। আধুনিক শিক্ষার বদৌলতে নারী অবক্ষনীয়া হলেও অবলা রইল না। পুরুষকে জব্দ করার জন্য সেও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে লাগলো। আইনি লড়াইতে জিতে সে কখোনো পুুরুষকে জেল খাটালো আবার সুযোগ বুঝে পুরুষ তাকে এসিড নিক্ষেপ করল। পত্রিকা খুললেই স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন যেন খুব স্বাভাবিক খবর হয়ে দাড়িয়েছে।

এই অবস্থা উচ্চবিত্ত এবং তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যেই সীমা বদ্ধ থাকল না ছড়িয়ে পড়ল তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত। তখন এইসব নারী আর নারীবাদী পুরুষেরা তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলো। যৌতুক বন্ধ করো নারী নির্যাতন বন্ধ করো বলে। কে বন্ধ করবে? এরা নিজেরাই তো নির্যাতনকারী। কিন্তু সবদোষ নন্দ ঘোসের মতো করে এরা নারীর নিরাপত্তা রক্ষাকারী ইসলামের উপর সব আক্রোশ ঢেলে দিল।

বলতে লাগলো ইসলামই নারীকে বন্দী করেছে। ব্যক্তি থেকে, পরিবার থেকে সমাজ থেকে ইসলামকে দূর করতে পারলেই নারী মুক্তি পাবে। মূল্যায়ন পাবে তার প্রতিভার। যে ইসলাম ১৪০০ বছর আগে অত্যাচারী কামুক পুরুষের হাত থেকে নারীকে রক্ষা করেছিল। আর শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করে পুরুষকে মানুষ বানিয়েছিল সেই নিরাপত্তার গ্যারান্টি ইসলামকে সর্বদিক দিয়ে অভিযুক্ত করা হলো ইসলামকে নির্বাসন দেওয়ার পায়তারা চললো।

চলবে......

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।