১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮ বিটিভির একুশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রফেসর এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ২০৫০ সাল নাগাদ ইংরেজির দাপটে বিশ্বের ৬০ শতাংশ ভাষা বিলুপ্ত হতে পারে । মাত্র ৪০ কোটি লোকের মুখের ভাষা ইংরেজি হলেও বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষ ইংরেজি শেখার জন্য পাগল।
বিশ্বায়নের কারনে ইংরেজি প্রীতি দিন দিন বাড়ছে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধিই তার প্রমাণ। ভাষা-পরিস্থিতি কোনো দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা-পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটে। 'বিশ্বায়নের সর্বব্যাপী প্রভাব ভাষাকেও স্পর্শ করেছে। '
ভাষা কাল সৃষ্টি করে, ভাষা যুগ সৃষ্টি করে, ভাষা পরিবেশ সৃষ্টি করে, ভাষা ব্যক্তি সৃষ্টি করে, আবার ভাষা মতাদর্শ সৃষ্টি করে। দেশ ও জাতির ব্যক্তিত্ব নির্মাণের জন্য তার স্বাতন্ত্র্য-স্বরূপকে চিহ্নিত করার জন্য ভাষার রূপকে পরিকল্পিতভাবে সৃষ্টি করা যায়। বিশ্বায়নের কবলে পড়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা যাতে কমে না যায় সে জন্য প্রয়োজন নানাবিধ উদ্যোগের।
বাংলাদেশে ভাষা পরিস্থিতি এখন চরম নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তিকর অবস্থার মধ্যে যা থেকে আমাদের পরিত্রাণ নেই সহজে যদি না আমরা মাতৃভাষা নিয়ে হীনমন্যতা পরিত্যাগ করতে পারি। রক্তের আলপনা এঁকে যে ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি বাংলাদেশের রাজকীয় ভাষারূপে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে। সেই ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ এবং বিশুদ্ধ উচ্চারণে আমাদের অনীহার অবসান এখনো হয় নি।
বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব থেকে আমাদের প্রিয় বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে হবে। এ বাংলা আমাদের শুদ্ধভাবে বলতে হবে, শিখতে হবে, লিখতে হবে।
সে জন্য সকলেরই প্রয়োজন মতো, সতর্ক থাকতে হবে। ভাষা ব্যবহারের সময়, এটা আমাদের কতর্ব্য। কারণ আমরা ভালবাসি আমাদের ভাষাকে।
বাংলা ভাষার জন্য গৌরববোধের পাশাপাশি এ ভাষার প্রতি আমাদের বেশ কিছু দায়িত্বও যে রয়েছে, সেটা সবসময় মনে রাখা দরকার। আমরা সবাই বাংলায় কথা বলি।
কিন্তু দুঃখের কথা, এই ভাষার বর্ণগুলোর সাথে জ্ঞানের রাজ্যে ঢোকার সিঁড়ি হচ্ছে শিক্ষা, মাতৃভাষায় সবার জন্য শিক্ষা।
বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েও আমাদের ভাষা সংক্রান্ত কার্যকর পদক্ষেপ নেই। আমাদের দেশের বিদ্যালয়ে ভাষা শিক্ষার প্রণালী ত্রুটিপূর্ণ। ইংরেজি মাধ্যম স্কুদেল বাংলা ভাষা অনেকখানি অবহেলিত। অশুদ্ধ বানান, অশুদ্ধ শব্দপ্রয়োগ, অশুদ্ধ বাক্যগঠন সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে।
শোনা যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় যত্ন করে বাংলা ভাষা শেখা।
প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুদের নিয়ে আমরা যখন বিচলিত ভাবনায় আকুল। ওদের বাংলা ভাষা চর্চার জন্য যত পরামর্শ, উপদেশ দিচ্ছি শত বিড়ম্বনা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শিশু মনে বাংলা ভাষা এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতির দীপ্তি ছড়িয়ে দেবার যত রকমের কৌশল, ব্যবহারবিধি প্রয়োগ করছি। সেখানে দেশে স্বদেশে ঘরে ঘরে শিশুরা যে হিন্দি গান, সিরিয়াল, কার্টুনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠছে, সেক্ষেত্রে আমাদের আতঙ্কিত হবার কোনো কারণই কী নেই? একটা সময় এমন হবে নাতো ঘরেই পরবাসী হয়ে আছে মাতৃভাষা-বাংলা ভাষা।
বাংলাদেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে ক্রমে ক্রমে ইংরেজি ভাষায় রূপান্তরিত হচ্ছে। বাংলাদেশে বাংলা ভাষার মাধ্যমে পরিচালিত একটিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যারয় নেই। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মোটামুটি বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে কিন্তু বিচার ব্যবস্থায় বিশেষত উচ্চ আদালতে এখনও বাংলা ভাষা অপাংক্তেয়। স্বাধীনতার ৩৬ বছর এ কোন দেশ সৃষ্টি করলাম যে দেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা অথচ রাষ্ট্রের সমাজ জীবনের ভাষা বাংলা নয়?
বিদ্যমান বাস্তবতায় সম্ভবত বাংলাদেশে নতুন এক বিতর্ক সৃষ্টি হতে যাচ্ছে যে এদেশের মানুষের মাতৃভাষা কী ইংরেজি না বাংলা? এর উত্তর সম্ভবত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। সম্ভবত এমন উত্তর পাওয়া যেতে পারে যে, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর মাতৃভাষা ইংরেজি, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তশ্রেণীর মাতৃভাষা বাংলা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।