বিশ্বায়নের প্রধান নেতৃত্বদানকারী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর সাংস্কৃতিক রাজধানী হলিউডই মূলত: বিশ্ব সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্ববাসী হলিউডী সংস্কৃতির প্রভাব বলয়ের আওতাভুক্ত হয়েছে। বিপুল পুঁজির বিনিয়োগে, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, উঁচুমানের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে মোহাবিষ্ট করছে পুঁজিবাদী সংস্কৃতি। স্যাটেলাইট চ্যানেল, উন্নত প্রকাশনা ও প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা প্রভৃতির মাধ্যমে একদিকে সমগ্র বিশ্বের সংবাদ সংগ্রহ ও পরিবেশন, অন্যদিকে অপপ্রচার ও কৌশলী নিয়ন্ত্রণ দ্বারা সাম্রাজ্যবাদের অনুকুল পরিস্থিতির বিকাশ ঘটাচ্ছে বিশ্বায়নের শ্লোগানধারী বিবিস, সিএনএন, এপি, এএফপি প্রভৃতি মিডিয়া সাম্রাজ্য।
বিশ্বায়ন মানুষের সামনে নানা ধ্যান-ধারণা ও সংস্কৃতির দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। সংস্কৃতির প্রবাহ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।
কিন্তু এই নয়া সংস্কৃতির বৈশ্বিক মাধ্যমে সারা বিশ্বকে গ্রাস করছে। আর এই সংস্কৃতির বিস্তার একমুখীন অর্থাৎ তা ধনী থেকে গরীব দেশের দিকে ধাবমান। হলিউড সংস্কৃতি বিপন্ন করে চলেছে নানা দেশের জাতীয় সংস্কৃতিকে।
উন্নত দেশগুলোর এই বিনোদন ব্যবসা এখন সবচেয়ে বিকাশমান খাত। বিমান বা মটর গাড়ি শিল্প নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানীমুখী খাত এখন এই বিনোদন বা এন্টারটেইনমেন্ট শিল্প। এভাবে মিডিয়া, নেটওয়ার্ক, স্যাটেলাইট চ্যানেল, প্রাইভেট টিভি চ্যানেল ইত্যাদির মাধ্যমে ইউরোপ, আমেরিকার সংস্কৃতি তথা পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সারা দুনিয়ার গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে এখন কমপক্ষে ২৫০ জনের নিজস্ব টিভি আছে। সনির মতো নামি দামি কোম্পানির টিভি কেনাটা এখন মধ্যবিত্তদের জন্য সামাজিক মর্যাদার বিষয়।
ঘরে ঘরে বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান দেখাটা প্রতিদিনের জীবন যাপনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিদেশি সংস্কৃতির এই সর্বগ্রাসী বিস্তার বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে ধ্বংস করছে। নিজস্ব সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক পরিচয় হারানোর ভীতি মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে মানুষ। একরৈখিক বা একই ধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হওয়ার মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিপন্নতা বোধ সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থূল ভোগবাদী বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত।
'বিশ্বায়ন ও সংস্কৃতি' শব্দ দুটি বিষয়ে ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক অর্থ বহন করে। এলিট সংস্কৃতি বনাম সাধারণ মানুষের জনপ্রিয় সংস্কৃতি, সংস্কৃত ভাষা বনাম প্রাকৃত ভাষা। মহৎ মানুষের উত্তরাধিকার বনাম নিচু তলার মানুষের উত্তরাধিকার। ধ্রুপদি সংস্কৃতি বনাম লোকসংস্কৃতি-এসব লড়াই চলে।
'কালচারাল ইণ্ডাস্ট্রি' শুধুমাত্র ফিল্ম, টেলিভিশন, জনপ্রিয় সঙ্গীত, জনপ্রিয় কলা সংস্কৃতি বা সংবাদমাধ্যমকে বোঝায় না। আরো সূক্ষ্মতর সামাজিক চর্চার ব্যবস্থাপনা, যার মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক জীবনে কোনো ধরনের সচেতনতা তৈরি হয়।
বিশ্বায়নের ফলে আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তৈরি হচ্ছে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। ধনী দেশ সমূহের অপসংস্কৃতির শিকারে পরিণত হচ্ছে গরিব দেশের যুবশ্রেণী। ফলে উন্নয়নশীল দেশসমূহের নিজস্ব সংস্কৃতি ক্রমে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মত আমাদের দেশেও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, তৃতীয় বিশ্বের দেশসমূহে অনেক ক্ষেত্রেই অপসংস্কৃতির শিকারে পরিণত হচ্ছে। নিজেদের সামাজিক মূল্যবোধ অনেক ক্ষেত্রেই ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। বৃহৎ শক্তি যে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে তার ফলে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক আবহাওয়া পাল্টে যাচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।