সর্বশেষ ১৮ জুলাই সুপ্রিমকোর্টের রায়ে লাখো মানুষের প্রাণের দৈনিক আমার দেশ পাঠকের মাঝে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছে। অনেক আনন্দ অনুভব হলেও তীক্ষষ্ট একটা কষ্ট আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সাহেবের জন্য—এখনও অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি দেশপ্রেমিক এ সৈনিক। উল্লেখ্য, দৈনিক আমার দেশ ২০০৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর, হাসিনা তনয় এবং বহুজাতিক তেল কোম্পানিদের এজেন্ট বর্তমান সরকারের জ্বালানি (প্রকৃতপক্ষেই দেশকে জ্বালাতে পারদর্শী) বিষয়ক উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের বিনিময়ে শেভরনকে অনৈতিকভাবে কম্প্রেসর বসানোর কাজ দেয়া সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশ করে। আর যায় কোথায়! বঙ্গবন্ধুর এ যুগের টেন্ডারবাজ সৈনিকরাসহ সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিশেষ রিপোর্টার এবং সংশ্লিষ্ট অন্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটা নয়, পাঁচটা নয়, ২৬টি মামলা করল। সময়ের সাহসী সৈনিক নিঃসঙ্গ শেরপা মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের চরম ক্ষোভের বহির্প্রকাশ ঘটে গত ৩১ মে রাতে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল এবং শেষ রাতে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে।
যা ভাবা হয়েছিল তাই, সরকারের দায়ের করা মামলায় রিমান্ডের নামে মাহমুদুর রহমানের জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চলছে এবং সর্বশেষ ডিবির সাহসী সৈনিকদের তত্ত্বাবধানে সর্বাত্মক নির্যাতন চালানোর পর বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। কী অপরাধ মাহমুদুর রহমান বা আমার দেশ পত্রিকার? অপরাধ একটাই—অনেক কষ্ট করে ক্ষমতায় এসে লুটেপুটে খাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল এ পত্রিকা এবং এর সম্পাদক। বিচিত্র এ দেশ! মীরজাফর এবং সিরাজউদ্দৌলারা একই সময়ে এবং একই দেশে কীভাবে অবস্থান করতে পারে তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ।
গণতন্ত্রের ছদ্মবরাণে ফ্যাসিবাদী এ সরকারের আগমন হয়েছে ’৭২-৭৫ সালের অসম্পাদিত কাজ পরিপূর্ণ করার জন্য। সংবাদপত্র বন্ধের এ অভ্যাস আওয়ামী লীগের আগেও ছিল, বর্তমানে তা শাণিত হয়েছে।
প্রথমে চ্যানেল ওয়ান বন্ধের মাধ্যমে টেস্ট কেস সম্পন্ন করলেও তেমন জোরালো প্রতিবাদ না হওয়ায় আমার দেশ-এর ওপর খড়গহস্ত হয়েছিল। আর এক্ষেত্রে শুধু মিডিয়া নয়, আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য প্রতিবন্ধক মানবাধিকার সংগঠন, দুর্নীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনরত কিছু এনজিও সরকারের হিটলিস্টে রয়েছে, এরা বর্তমানে পর্যবেক্ষণের আওতায় আছে বলে সরকার সমর্থক পত্রিকার তথ্যে প্রকাশ।
আমাদের দুর্ভাগ্য জাতীয়তাবাদীর খোলসে কিছু লোক নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসেবে দাবি করলেও বর্ণচোরা দেশদ্রোহীরাই বিএনপিকে মডারেট দল বানানোর নামে আজকে একটি নখ-দন্তবিহীন বাঘে পরিণত করতে চলেছে। কটু সত্য কথা হলো, বিভিন্ন দল থেকে সুবিধাবঞ্চিত মুনাফিক, লুটপাটকারীরাই এ দলের এখন প্রধান নীতিনির্ধারকবৃন্দ। বিএনপি এখনও শর্টকাট রাস্তায় ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর।
এরা ভুলে গেছে, এটা ২০০১ সাল নয়। ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে মাহমুদুর রহমানের মুক্তির জন্য কোনো প্রবল আন্দোলন এরা গড়ে তুলতে পারেনি। তাছাড়াও মাহমুদুর রহমানের মতো শহীদ জিয়ার প্রকৃত উত্তরসূরিরা দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে হাল ধরলে, এসব পরজীবী নেতার বিদেশি প্রভুদের পক্ষ থেকে হালুয়া-রুটি বন্ধ হয়ে যাবে। দুঃখ করে মাহমুদুর রহমান বিভিন্ন লেখায় এদের সম্পর্কে বলতেন, ‘আমার লেখায় বিএনপির কোনো কোনো বন্ধু রাগান্বিত হন। ’ তাছাড়াও পেশাজীবীরা এখন পর্যন্ত তৃণমূল পর্যন্ত কোনো গ্রুপ গঠন করতে না পারায় মাহমুদুর রমহানের মুক্তির দাবিতে হেভিওয়েট এসব পেশাজীবীর দু’একটি সভা বা মানববন্ধনে উপস্থিতি ছাড়া তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
বাস্তবতা হলো, বিএনপি এবং এর মিত্রশক্তিরা কখনও একটি শক্তিশালী দেশপ্রেমিক পেশাজীবী গ্রুপ গড়ে উঠুক তার সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বরং ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তাদের ব্যবহার করে, আর ক্ষমতায় যাওয়ার পর মামুন-অপুরা দলের নীতিনির্ধারক হয়। যাদের কারণে আজ দলের এ পরিণতি, তারা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর দেশের এ দুর্দিনে যারা শাণিত যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে বিএনপি এবং এর তৃণমূল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের সহায়তা করতে পারত তারাও কিছুটা নীরব। কারণ ভবিষ্যতে কোনো দিন বিএনপি ক্ষমতায় আরোহণ করলে মাহমুদুর রহমানের মতো ব্যক্তিরা যে দলের প্রধান নীতিনির্ধারক হবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
প্রশ্ন হলো, এ অবস্থায় আমাদের কি কিছুই করার নেই? অবশ্যই আছে।
জালিম এবং দেশদ্রোহী এ সরকারের বিরুদ্ধে তরুণ দেশপ্রেমিক পেশাজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শেখ মুজিব বা জিয়া কেউই বেঁচে নেই এবং তারা পরবর্তী নেতৃত্বের ব্যাপারে ইন্দিরা বা ভুট্টোর ন্যায় কোনো ভবিষ্যত্ দিকনির্দেশনাও দিয়ে যাননি। আমাদেরই এ উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের এ করুণ অবস্থায় ভাবার আর সময় নেই, শুধু ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। জীবন-মৃত্যু, ইজ্জতের মালিক আল্লাহ।
মাত্র ৩৯ বয়সে বিপ্লবী চে’র মৃত্যু বিপ্লবকে শুধু অমরত্বই দেয়নি, পুরো ল্যাটিন আমেরিকাকে বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, শুধু বলতে চাই, বাজিছে দামামা, বাঁধরে আমামা, শির উঁচু করি ... ভাঙা কিল্লায় উড়ে নিশান। ’৭১-র চেতনায় মুসলমান নামধারী মুনাফিক পাকিস্তানি স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যেভাবে গর্জে উঠেছিল এ দেশের মানুষ, সেই একইভাবে গর্জে না উঠলে আগামী ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ কী দশায় পড়বে ভাবতেও শরীরে কাঁটা দেয়। সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশের বর্তমান আপসকামী কোনো রাজনৈতিক শক্তির ওপর ভরসা রাখা আর সম্ভব নয়। আমার এ অবস্থান আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে।
পাঠকরা নিশ্চয়ই মাহমুদুর রহমানের লেখাতেও তার প্রতিফলন পেয়েছেন। মাহমুদুর রহমানকে রক্ষায় দুর্বার আন্দোলন না চালালে জাতি তার সূর্যসৈনিককে হারাবে।
বিস্তারিত Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।