আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তারপরেও একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী তিনি!

রীতা রায় মিঠু Click This Link সম্প্রতি সিএন এন এর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেছেন ডাকসাইটে জার্নালিস্ট মিস আমানপোর। আমার মেয়ের বয়সী এক বন্ধু, যে আমাকে আন্টি ডাকে, ধরে নিলাম তার নাম রিমঝিম। সিএন এন এর সাক্ষাৎকারের লিংকটি রিমঝিম আমাকে মেসেজ বক্সে পাঠিয়েছে এবং মন্তব্য করেছে, "আন্টি, প্লীজ, লিঙ্কটি ওপেন করুন, শেখ হাসিনা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সিএন এন কে। পুরা ফ্লপ।

আমার বন্ধুদের কাছে আমার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে গেছে। দেখেন,আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে কী ভীষণ অসহায় লাগছে"! সাথে সাথে উত্তর দিলাম, " আমি অলরেডী এই সাক্ষাৎকারের সংবাদ পেয়েছি, লিঙ্কটি না খুলেই বলতে পারি, সি এন এন এর মাধ্যমে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করা হয়েছে"। রিমঝিম জানতে চেয়েছে, "কী করে প্রেডিক্ট করলেন"? বললাম, " মাগো, অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এটা কোন নতুন ব্যাপার নয়। সারাটা জীবনই তো উনাকে নানারকম বিপদের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।

উনার ভাগ্যটাই এমন যে ভাল কাজেও পুরস্কার মিলে না, মন্দ কাজেও পুরস্কার মিলে না। দেশের রথী মহারথীরাই উনাকে নাস্তানাবুদ করার তালে থাকে, আর সি এন এন তো বিদেশী, তার উপর আমেরিকার মিডিয়া"। রিমঝিম সাথে সাথে বললো, " আন্টি, আমেরিকাই তো আসল শক্তি। আমেরিকার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে না? এই যে ডিজনি ব্র্যান্ড এর পোষাক আর বাংলাদেশ থেকে তৈরী হবে না, সেটা একটা বিপদ না?" বললাম, " হ্যাঁ, অবশ্যই বিপদ বাংলাদেশের জন্য। তা এই বিপদে বাংলাদেশের পাশে না দাঁড়িয়ে আমেরিকা বাংলাদেশকে হুমকী দিল, এটা কেমন বন্ধু হলো? ওরা কোন কিছুই বিবেচনায় আনলো না, অথচ একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে সাক্ষাৎকার নেওয়ার উছিলায় নাস্তানাবুদ করার নাটক করলো"! "আন্টি, আপনি কী অলরেডী সাক্ষাৎকারটি দেখেছেন?" "পুরোটা দেখিনি।

বেয়াদব আমানপোরের অ্যাটিচিউড দেখেই মাথায় আগুন জ্বলে উঠেছে আমার। আমেরিকা এমনই এক দেশ, কখন যে কারে মাথায় তুলে নাচে, আর কখন পায়ে পিষে মারে, বলা যায় না। তারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের সাহায্য করেছিল, আর বর্তমানে যখন বাংলাদেশের চরম দুঃসময়, তখন তারা ঘটা করে 'দারিদ্রকে জাদুঘরে' পাঠানোর অভিপ্রায় ব্যক্তকারী বাংলাদেশী ব্যক্তিত্বকে বেসরকারী সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক দেয়, অথচ বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনকারী গার্মেন্টস শিল্পের দূর্দিনে পাশে দাঁড়ালোনা। কোন মুখে ওরা রানা প্লাজার শ্রমিকদের জন্য মায়াকান্না কাঁদতে আসে?" রিমঝিম বলে, "আন্টি, আমাদের এখানে বাংলাদেশী ছেলেমেয়েরাও প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছে। বলছে, উনি ভাল ইংরেজী বলতে পারে না, উনি নাকি বাংলাদেশের সম্মান ডুবিয়ে দিয়েছেন।

আন্টি, আমি শেখ হাসিনার সমালোচনা করছি না, তবে উনাকে খুব অসহায় লেগেছে"। "তোমার বাংলাদেশী বন্ধুদের কাছে, আমানপোরকে কেমন লেগেছে"? "সেটা তো ওরা বলেনি। শুধু বলেছে, এই মহিলার (শেখ হাসিনা) জন্য দেশটার মান সম্মান ডুবেছে। উনাকে ওরা মিথ্যেবাদী বলেছে। আমি শুধু বলেছি, আমানপোর একটা রুড, বেয়াদব মহিলা।

আন্টি যদিও জানি, এদেশে জার্নালিস্টরা পুরা ফ্রীডম পায়, যা খুশী বলতে পারে, তারপরেও বলতে চাই, শী ওয়াজ রুড। কিন্তু আমাদের এক শিক্ষক আমাকে ধমক দিয়েছেন, বলেছেন, তুমি কী জানো কে এই আমানপোর? সারা বিশ্বের নেতারা তাকে ভয় পায়, আর আমাদের প্রধানমন্ত্রীর তো তার সামনেই আসা উচিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী কেন সোহেল রানার কথা অস্বীকার করলো? তাছাড়া উনি তো ইংলিশও ভাল বলতে পারে না। আন্টি, আমি তারপর চুপ করে গেছি। এবার আপনি কিছু বলেন।

" "রিমঝিম, তোমাকে ধন্যবাদ এতগুলো নির্লজ্জ বাংলাদেশীদের উপস্থিতিতে তুমি অভদ্র আমানপোরের অভদ্রতার কথা উল্লেখ করেছ। তোমার শিক্ষকের সাথে একটি ব্যাপারে আমি একমত। প্রধানমন্ত্রী সোহেল রানার ব্যাপারে সত্যি কথাটি বললে ভালো করতেন। উনি বলতেই পারতেন, আমার দলের প্রতিটি সদস্যকে আমার চেনার কথা নয়। যখন জেনেছি সে আমার দলের সদস্য, তার বিরুদ্ধে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি।

ব্যস, তোমার শিক্ষকের বাকী কথার সাথে আমি একমত নই। আমানপোর বিশ্ব বিখ্যাত সাংবাদিক হতে পারে, কিন্তু শেখ হাসিনা একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী। হোক সে দেশটি ছোট, হোক সে দেশটি হাজারো সমস্যা জর্জরিত, হোক সে দেশটি দরিদ্র, কিন্তু সবার উপরে পরম সত্য হচ্ছে শেখ হাসিনা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রী কেন ভয় পাবে 'আমানপোরের' মত দূর্বিণীত, অভদ্র সাংবাদিককে? হোক সে ডাকসাইটে সাংবাদিক, হু কেয়ারস? তার এতবড় সাহস, সে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে যথাযথ সম্মান দেখিয়ে কথা বলেনি! প্রধানমন্ত্রী ওকে মুখের উপর বলে দিয়েছে, এই সকল ডিজাস্টারের জন্য ডিজনী-ফিজনিরাও দায়ী। ওর নাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, ওদের দেশের কারখানাতেও দূর্ঘটনা ঘটেছে।

যা নেত্রী বলেন নি, সেটা সুযোগ পেলে তুমি বলে দিও অভদ্রগুলোকে, ওদের লজ্জা করা উচিত, এত কড়াকড়ি, এত নিরাপত্তার মধ্যে থেকেও ওরা চেচনিয়ান দুই ভাইকে ঠেকাতে পারেনি, তারা ঠিকই বস্টনে ম্যাসাকার করে দিয়েছে। কোনকিছু দিয়েই ওরা 'টুইন টাওয়ার' ধ্বংস ঠেকাতে পারেনি। ওগুলো কেন ঘটেছিল? প্রধানমন্ত্রী তো ঠিকই বলেছেন, দূর্ঘটনা তো ঘটেই। প্রধানমন্ত্রীর ইংলিশ উচ্চারণ ভাল না বুঝলাম, তবুও তো উনি দোভাষী সাথে নিয়ে কথা বলেন নি। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট, এমনকি বাংলাদেশের দারিদ্র্যপ্রেমে গদগদ 'হিলারী ক্লিন্টন' কয় অক্ষর বাংলা বলতে পারে? আমেরিকান রাষ্ট্রদূত মজিনার বাংলা উচ্চারণ কী আমাদের গনি মিয়ার চেয়েও ভাল? ভালো কথা, তোমার শিক্ষক যে এত ফটর ফটর করছেন, উনার ইংলিশ উচ্চারণ কী আমেরিকানদের মত? কখনওই না, তোমার শিক্ষক যখন ক্লাস থেকে বের হয়ে আসেন, তখন আমেরিকান স্টুডেন্টদের জিজ্ঞেস করে দেখো, তারা বলবে উনার লেকচারের অর্ধেক কথাই ওরা বোঝেনি।

" "আন্টি, ইস, আপনাকে যদি ঐ আসরে রাখতে পারতাম, তাহলে ওদেরকে একটু শিক্ষা দেয়া যেত"। "রিমঝিম, কাউকেই শিক্ষা দিতে পারবে না। শিক্ষা, বিবেক, বিবেচনা আসতে হয় অন্তর থেকে। তোমার বন্ধুরা যে পরিবারে বড় হয়েছে, সেখান থেকে তারা যা শিখেছে, তারই প্রতিফলন ঘটছে এখন। আমি অবাক হয়ে যাই, নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানের চেয়ে ওদের কাছে সিএন এন বড় হয়ে গেল? এখানে শে্খ হাসিনার পরিবর্তে যদি বেগম জিয়া থাকতেন, আমি বেগম জিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলতাম।

ব্যক্তি বেগম জিয়াকে আমি অপছন্দ করতে পারি, কিন্তু উনি যখন আমার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করবেন, তখন উনি আমাকেও রিপ্রেজেন্ট করছেন। আসলে যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্যটাই খারাপ। উনি এখন আছেন একটি চুলের উপর দাঁড়িয়ে। উনার চারপাশে আগুন, বিপদ, শ্বাপদসংকুল পথটি পার হতে হচ্ছে সেই চুলের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে, হাত দিয়ে ধরবার মত কোন অবলম্বন নেই।

এমন অবস্থায় আর কেউ হাঁটবার সাহস পেত কিনা কে জানে, একমাত্র উনি বলেই তা পারছেন। আমি সাক্ষাৎকারটি দেখেছি, হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রীর ইংলিশ উচ্চারণ চৌকষ নয়, আমাদের কারোরই ইংলিশ উচ্চারণ খোদ আমেরিকানদের মত নয়, কাজেই এই প্রসঙ্গ বাদ। উনি সোহেল রানাকে অস্বীকার করেছেন, এটা ভুল করেছেন। ভুল করার কারণ হচ্ছে, বেয়াদব আমানপোর প্রশ্নটি করেছে খুবই ভুলভাবে। সোহেল একটি থানা পর্যায়ের নেতা ছিল, অথচ আমানপোর বলেছে, সোহেল নাকি যুবলীগের ডাকসাইটে নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী তা জানতেন।

অভদ্র সাংবাদিকের মুখে এমন কথা শুনে প্রধানমন্ত্রীর মেজাজ খারাপ হতেই পারে, আর আমানপোর যেভাবে অভদ্রের মত মিটমিট হাসছিল এবং মাথা নাড়ছিল, দেখে আমার শরীরে আগুন জ্বলেছে। সে যাঁকে অবজ্ঞা করছিল, তিনি আর কেউ নন, আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আমি তো আমার দেশের প্রধানমন্ত্রীর পাশেই দাঁড়াবো, আমানপোরের পাশে তো দাঁড়াবো না, এমনকী আমানপোরের প্রেসিডেন্ট এসে বললেও দাঁড়াবো না। আর সবাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমালোচনা করে করুক, হু কেয়ারস? আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্যালুট দেবোই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.