আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"শ্রাবন দিনের কাব্য"/ শফিকুল ইসলাম

"তার ও আগে বৃষ্টি নামুক আমাদের বিবেকের মরভূমিতে/ সেখানে মানবতা ফুল হয়ে ফুটুক, /আর পরিশুদ্ধ হোক ধরা,হৃদয়ের গ্লানি..."--শফিকুল ইসলাম

গ্রন্থ পর্যালোচনা “শ্রাবন দিনের কাব্য ” --মিনা মাশরাফী তাঁর অসীম ঐশ্বর্যশালী শক্তিময় লেখনী প্রেমের ফল্গুধারায় বিকশিত “ শ্রাবণ দিনের কাব্য ” কবিতা গ্রন্থটি কবি শফিকুল ইসলামের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ । কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ‌‌‌‌"আগামী প্রকাশনী" এবারের একুশে বইমেলায়। সম্রাট শাহজাহান যেমন রূপপিয়াসী সৌন্দর্য পাগল ছিলেন তেমনি মমতাজ ছিলেন মূর্তিমতি প্রেরণা । জাহাঙ্গীর ছিলেন কবি সম্রাট তেমনি নুরজাহান ছিলেন কবি সম্রাজ্ঞী। কবি শফিকুল ইসলাম তেমনি প্রেম পিয়াসী , সুলতার জন্য আবেগময় অনুভূতিতে শব্দের ব্যঞ্জনায় সাজিয়েছেন ৫০টি প্রেমের কবিতা নিয়ে “শ্রাবন দিনের কাব্য ” কবিতা গ্রন্থ ।

কখনো আবেগের উন্মাদনায় সুলতাকে মাধবী নামে সম্বোধন করে প্রেমের সুধা পান করেছেন অবলীলায় । এই প্রেমের কাব্যগ্রন্থটির ৫০টি কবিতাই কবির প্রিয়তমা সুলতাকে ঘিরে দিবা, নিত্য অহর্নিশি প্রেম-বিরহের সুরে ঝংকৃত হয়েছে । শয়নে,স্বপনে,ভ্রমণে, একাকিত্বে, শূন্য ঘরে, সুলতার পুরানো বাড়ীর দরজায় দাড়িয়ে ভাবাবেগে কবি কবিতার ছত্রে তুলে ধরেছেনঃ-- ....আজ বদলে গেছে তোমার ঠিকানা এই শহরে আর তুমি নেই এই বাড়ীতে আর তোমার চরণ পড়েনা বন্ধ গেট সারাদিন বন্ধই থাকে। তবু কি যেন অজানা মোহের দুর্নিবার আকর্ষণে দিবানিশি এই বন্ধ বাড়ীতেই আমি ছুটে আসি কেউ নেই জেনেও একাকী এসে দাড়াই এ বাড়ীর নির্জন আঙিনায়-- (“বহুদিন পর পুরনো শহরে ফিরেছি”) কখনো শহরের জনতার ভিড়ে প্রিয়াকে খুঁজে ফেরার স্পন্দিত অনুভূতি কবিতার ছত্রে শব্দ বিন্যাসে সানাইয়ের সুর যেন বাতাসে ছড়িয়ে দিয়েছেন । কখনো ব্যাকুল বিরহ বেদনা কবিকে অশ্রুসজল করেছে প্রিয়াহীন শূন্যতার ভারে একাকিত্বে বিমূঢ় হয়ে কবি লিখেছেন স্মৃতি রোমন্থনের ছন্দেঃ-- "আমার ঘরের বিছানায় আমার ঘরের বিছানায় বালিশে আর চাদরে তোমার সুগন্ধি স্মৃতি সৌরভ বিলায়; কেমন স্বপ্নময়তায় আমাকে আচছন্ন করে রাখে সারাক্ষণ নেশায় বুথ হয়ে যাওয়া মানুষের মত ।

তোমার স্মৃতিকে উপজীব্য করে আজও আমি বেঁচে আছি আমি আজীবন তাই তোমার স্মৃতির কাছে সমর্পিত একজন । " ( আমার ঘরের বিছানায়) “শ্রাবণ দিনের কাব্য ”গ্রন্থটির কবিতাগুলি পড়তে পড়তে কখন যেন মেঘদূত আর কালিদাসের প্রেমের বিরহের বেদনায় আচছন্ন হয়ে যেতে হয় । প্রেমিক কবি শফিকুল ইসলামের এ এক ঐশ্বরিক শক্তি ও লেখনি প্রতিভার উজ্জল দৃষ্টান্ত । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলামের পরই যার স্থান তিনি পল্লী কবি জসীমউদ্দিন প্রমুখের ভাবাদর্শে তাদেরই আদলে কবি শফিকুল ইসলাম প্রেমের চিরন্তন বিনিসুতোয় গাথাঁ আকর্ষণ ,প্রেমের বিলাপ –বিরহ বেদনাকে যেভাবে শব্দের গাথুঁনী আর সাবলীল আত্মিক ছন্দে তুলে এনেছেন তা সত্যিই আমাদের বিস্ময়বোধকে আরো বাড়িয়ে দেয় । তার প্রতিটি কবিতা প্রেমের উপাখ্যান ।

ছোট ছোট স্মৃতিময় ব্যথা-বেদনার টুকরো টুকরো স্খলন শাব্দিক বর্ণনায় দক্ষতার ছাপ রয়েছে যা পাঠককেও ব্যথিত করে । কবিতা বলবো কাকে ? কবির মনের কথাইতো কবিতা ,প্রেম রসাত্বক কাব্যই তো প্রেম কাব্য । কবিতা হলো কবির একলা মনের কথা-- আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে কবি শফিকুল ইসলামের কবিতার শিরোনামে প্রেমের গভীরে দুঃখ,অভিমান,ক্ষোভ,আবেগ,আবেদন, বিরহ বেদনা বিচেছদের সুরে ছুঁয়ে ছুঁয়ে কবিতার রস চুয়ে চুয়ে পাঠকের মন ভিজিয়ে ধরে রাখে ,পাঠককে পড়ার নেশায় । প্রতিটি শিরোনামেই এক একটি বিষয় কাব্য সুষমায় আকর্ষনীয় আবেদন । “শ্রাবণ দিনের কাব্য ” গ্রন্থের সব কটি কবিতায় গভীর প্রেম আর বিরহের বৃত্তটা ব্যাপকতা লাভ করেছে তা তাঁর কবিতার শিরোনামেই প্রস্ফুটিত--- যেমন, সুলতা ঐভাবে ঝড়ের বেগে/আমার ঘরের বিছানায় /সুলতা এই শহরে/তুমি নেই তাই/তোমাকে বিদায় দিতে গিয়ে/মাধুবী শুধু একটি বার/আমাকে কিছুই দিলেনা/সুলতা তুমি আমার হৃদয়ে ইত্যাদি।

প্রেম পিয়াসী কবি শফিকুল ইসলামের এই সব শিরোনামের কবিতাগুলি এক একটি প্রেমের কবিতা হয়ে উঠেছে--পড়তে পড়তে মনে পড়ে যায় রবীন্দ্রনাথের “রক্ত কবরী” নাটকের নন্দিনীর প্রতি রাজার সংলাপ,বিশেষ করে “ভালবাসলেই দুঃখ পেতে হয়” কবিতাটি সেই আদলই মনে করিয়ে দেয় । ভালবাসাকে এমন উপমায় উপমিত করে বর্ণনা করা সত্যিই আশ্চর্য্য । তাঁর এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়ে ভালই হয়েছে। নইলে আধুনিক এই যুগে এমন কবিতার সুন্দর আস্বাদন থেকে আমরা বঞ্চিত রয়ে যেতাম । নানান মুনির নানা মতে সব কবিতা কবিতা নয় ।

আমার মনে হয় সব মুনিকেই স্বীকার করতে হবে কবি শফিকুল ইসলামের “শ্রাবন দিনের কাব্য ”গ্রন্থে প্রেমের রস আস্বাদনে প্রতিটি কবিতাই ষোলআনা কাব্য । আগাগোড়া ভালবাসায় মোড়া কাব্যগ্রন্থে কবি না পাওয়ার হাহাকারে শ্রাবনী বর্ষাকে আলিঙ্গন করে সজল নয়নে শুন্য হৃদয়ে হতাশায় কবি যখন গ্রন্থটির শেষ কবিতাটি লিখেছেন“-যে ভাবেই কাটুক জীবনতো কেটেই যাবে”। ভালবাসা বুকে রিক্ততার হাহাকারে গ্রন্থটি এভাবেই সমাপ্ত করেছেন । কবির রিক্ত হাহাকারে গ্রন্থটি এভাবেই সমাপ্ত করেছেন । কবির রিক্ত হাহাকারে পাঠক মনও ব্যথিত ।

আমরা চাই সিদ্ধ হস্ত প্রেমিক কবির প্রেমের বৃত্তটা ক্রমশ বড় হতে থাকুক। সুলতা কে ছাড়িয়ে বন্ধু নিকটজন সমাজের পরতে পরতে পরিব্যপ্ত হয়ে পড়ুক । নির্মল সুন্দর হোক পৃথিবী । ভালবাসার নির্যাসে কবির জীবন সুখময় হোক । গভীর নীল জলে ভরা সাগর,বর্ষা প্রেমিক কবির “ শ্রাবণ দিনের কাব্য ” গ্রন্থের প্রচছদ যথার্থ সুন্দর হয়েছে ।

প্রতিটি কবিতার জন্মস্থান ও জন্মতারিখ গ্রন্থিত হলে আরোও তৃপ্ত হতো পাঠক মন । সমস্ত অবয়ব অস্থি মজ্জায় অত্যন্ত সুন্দর প্রেমের কবিতা গ্রন্থটি সার্থক কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থের নাম-"শ্রাবণ দিনের কাব্য" লেখক- শফিকুল ইসলাম। প্রচ্ছদ- ধ্রুব এষ। প্রকাশক- আগামী প্রকাশনী ৩৬ বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০।

ফোন-৭১১১৩৩২,৭১১০০২১। মোবাইল- ০১৮১৯২১৯০২৪।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।